গত সপ্তাহে আমরা কথা বলেছিলাম এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) নানা খুঁটিনাটি নিয়ে। আর আজকের আলোচনা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি সম্পর্কে। এর মধ্যে কিছু মেলে নিয়োগকারী সংস্থা থেকে। আবার বাকিগুলি করতে হয় নিজেদেরই। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যও রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা। সেই সব নিয়েই কথা বলব আমরা।
গ্র্যাচুইটি
দীর্ঘ দিন চাকরি করা কোনও কর্মীকে সম্মান জানানোর জন্য চালু হয়েছিল গ্র্যাচুইটি। কোনও সংস্থায় ১০ বা তার বেশি সংখ্যক কর্মী থাকলে গ্র্যাচুইটি দেওয়া বাধ্যতামূলক। মজার বিষয় হল, কোনও সংস্থায় এক বার গ্র্যাচুইটি চালুর পরে কর্মী সংখ্যা দশের নীচে নামলেও সেই সুবিধা বজায় থাকে। এই টাকা একমাত্র সংস্থাই দেয়। কর্মীদের আলাদা করে কোনও টাকা এই খাতে জমা দিতে হয় না।
কারা পাবেন
নিয়ম অনুসারে কোনও সংস্থায় টানা পাঁচ বছর কাজ করলে, সেই কর্মী গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্য। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য সেই মেয়াদ ১০ বছর। ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি কর মুক্ত।
হিসেব কী ভাবে?
গ্র্যাচুইটির হিসেব করার সময়ে যত বছর চাকরি করেছেন, তার প্রতিটির জন্য ১৫ দিনের মূল বেতন ধরা হয়। আর মাস ধরা হয় ২৬ দিনে।
ফর্মুলা এ রকম—
(মাসিক মূল বেতন/২৬) x ১৫ x চাকরির মেয়াদ
অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তির যদি গ্র্যাচুইটি পাওয়ার সময় মাসিক মূল বেতন ৫০,০০০ টাকা হয় এবং তিনি ১০ বছর চাকরি করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি হবে:
(৫০,০০০/২৬) x ১৫ x ১০= ২,৮৮,৪৬২ টাকা
কখন পাওয়া যায়
• অবসরের সময়ে।
• ইস্তফা দিলে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ বছর কাজ করতে হবে। এমনিতে ৪ বছর ৬ মাসের পর থেকেই পাঁচ বছর ধরা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ১০ বছর।
• চুক্তি শেষ হলে।
• ছাঁটাই হলে।
• দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে।
• স্বেচ্ছাবসর নিলে।
• চাকরি করাকালীন মৃত্যু হলে (এ ক্ষেত্রে ৫ বছরের নিয়ম প্রযোজ্য নয়)
কর ছাড়
• কর্মীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ সংস্থা যে টাকা তহবিলে জমা দেয়, তা পুরোটাই করমুক্ত। তেমনই সেই তহবিলের সুদ এবং শেষ পর্যন্ত কর্মীরা যে টাকা পান (সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ), তাতেও কোনও কর দিতে হয় না।
এমপ্লয়ার্স কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ফান্ড
পিএফ এবং গ্র্যাচুইটি ছাড়াও অনেক সংস্থা কর্মী ধরে রাখতে তৃতীয় একটি পেনশন ফান্ডের ব্যবস্থা করে। যার মাধ্যমে আলাদা পেনশন পাওয়া যায়। তবে পিএফ অথবা গ্র্যাচুইটির মতো এটি বাধ্যতামূলক নয়। কিছু সংস্থায় কর্মীরাও এতে টাকা রাখেন।

বৈশিষ্ট্য
• এই প্রকল্পে কর্মীদের বেতনের নির্দিষ্ট অঙ্ক (সাধারণত ১৫% বা তার কম) দিয়ে তহবিল তৈরি করে সংস্থা। যা পরিচালনার দায়িত্ব থাকে নির্দিষ্ট অছি পরিষদ। আয়কর আইনে বলে দেওয়া নির্দিষ্ট ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে সেই টাকা খাটানো হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরো টাকাই তুলে দেওয়া হয় বিমা সংস্থার হাতে। তারাই সংস্থার হয়ে সেই টাকা লগ্নি করে।
• বছরের শেষে কর্মীরা জমার নির্দিষ্ট হিসেব দেখতে পান।
• এই প্রকল্পটিতেও জমা, তোলা টাকা এবং সুদের পুরোটাই করমুক্ত।
টাকা তোলা
অবসরের পরে জমা টাকার এক-তৃতীয়াংশ তোলা যায়। তাতে কর দিতে হয় না। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ টাকা জমা হয় কোনও অ্যানুইটি প্রকল্পে। সেখান থেকে নিয়মিত পেনশন মেলে। চাকরিজীবীর মৃত্যুর পরে সেই দুই-তৃতীয়াংশ টাকা হাতে পান উত্তরাধিকারী।
এনপিএস
পুরো নাম ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম। সরকারি কর্মীদের জন্য চালু হয়েছে ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে। ২০০৯ সালে তা সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যে কোনও সংস্থার কর্মী (যাঁদের উপরে বলা আলাদা পেনশন প্রকল্প নেই) ব্যবসায়ী, পেশাদার, কৃষক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা এতে টাকা রাখতে পারেন। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য
• এনপিএসে জমানো তহবিলের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে কিনতে হয় অ্যানুইটি। সেখান থেকেই মাসে-মাসে পেনশন মেলে।
• কিছু জরুরি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টাকা তোলা যায়। সে ক্ষেত্রে তিন বছর টাকা জমা দিলে ২৫% পর্যন্ত তোলা যাবে। বাড়ি কেনা বা তৈরি, জটিল রোগের চিকিৎসা, সন্তানের উচ্চশিক্ষা ও বিয়ের জন্য এই সুবিধা পাওয়া যায়।
লগ্নি কী ভাবে?
মূলত তিন ভাবে লগ্নি করা যায় এনপিএসের টাকা। সেগুলি হল—
• যাঁরা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন, তাঁরা পুরো টাকাই রাখতে পারেন শেয়ার ও শেয়ার ভিত্তিক প্রকল্পে।
• বেশি ঝুঁকি যাঁদের পছন্দ নয়, তাঁরা শেয়ার ও ঋণপত্রে মিলিয়ে মিশিয়ে টাকা রাখতে পারেন।
• আর যাঁরা একেবারে ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁরা পুরো অর্থ ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি করতে পারেন।
কোথায় টাকা খাটাবেন এবং কত টাকা রাখবেন, পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে ও ক্ষমতার উপরে। অ্যানুইটির জন্য বিমা সংস্থাও বাছতে পারবেন নিজেই।
কর ছাড়
• এনপিএসে লগ্নি করলে, আয়কর আইনের ৮০সিসিডি (১), ৮০ সিসিই, ৮০ সিসিসি (২) এবং ৮০ সিসিই ধারায় কর ছাড় মেলে।
• এক অর্থবর্ষে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামে কর ছাড় পাওয়া যায়। গ্রাহক ও নিয়োগকারী— উভয়ের জমা টাকাতেই কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়।
• মেয়াদ শেষের পরে যে টাকা দিয়ে অ্যানুইটি কিনবেন, তাতে কিন্তু কর গুনতে হবে না।
• নগদে তোলা টাকায় অবশ্যই কর গুনতে হবে।
অটল পেনশন যোজনা
মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্যই এই প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র। এর আওতায় মাসে ১,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশনের সুযোগ রয়েছে।
কারা পান?
• যে সমস্ত মানুষের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁরাই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন।
• ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা এতে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
• ৬০ বছর বয়স হলে এই প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে পেনশন মেলে।
টাকা জমা কী ভাবে?
• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অঙ্ক আপনেই কেটে নেওয়া হয় পেনশন খাতে।
• টাকা জমা দেওয়া যায় প্রতি মাসে, তিন মাসে অথবা ছ’মাসে।
• কত টাকা কাটা হবে, তা স্থির হয় কত বছর বয়সে নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে এবং কত টাকা পেনশন চান, তার উপরে। যেমন, কোনও ১৮ বছর বয়সী ব্যক্তি এই প্রকল্পে যোগ দিলে ১,০০০ টাকা করে পেনশন পেতে প্রতি মাসে জমা দিতে হবে ৪২ টাকা। তেমনই সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পেনশনের ক্ষেত্রে তাঁর মাসিক জমা হতে হবে ২১০ টাকা।
• সময়ে টাকা জমা না দিলে, প্রতি মাসে ১ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হয়।
• ন্যূনতম ২০ বছর এতে টাকা রাখতেই হয়।
কর ছাড়
এই প্রকল্পেও কর ছাড় পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এনপিএসের মতো আয়কর আইনের ৮০সিসিডি (১বি) ধারায় এই সুবিধা মেলে। প্রতি অর্থবর্ষে তার সীমা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা।
টাকা তোলা
• ৬০ বছর বয়সের আগে টাকা তোলা যায় না। তবে বিমাকারীর মৃত্যু বা দুরারোগ্য রোগের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই সুবিধা মেলে। এ ক্ষেত্রে টাকা না তুলে, বিমাকারীর স্বামী বা স্ত্রীও প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারেন।
• পেনশন চালুর পরে বিমাকারী মারা গেলে, তাঁর স্বামী বা স্ত্রী সেই পেনশন পান। তাঁদেরও মৃত্যু হলে নমিনির হাতে জমা টাকার পুরোটা তুলে দেওয়া হয়।
পিপিএফ
চাকরি করা মানুষ তো বটেই, পেশাদার ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা, যাঁদের পিএফের সুরক্ষা নেই, তাঁরাও এখানে টাকা রাখতে পারেন। পুরো নাম পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড। এখনকার অনেক চাকরিতেই মাস গেলে মোটা বেতন পাওয়া যায়। কিন্তু খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, সেখানে মূল বেতনের অঙ্ক হয়তো তুলনায় অনেকটাই কম। যার ফলে ইপিএফ খাতেও তুলনায় কম টাকা জমা পড়ে। সেই ঘাটতিই কিন্তু পুষিয়ে দিতে পারে আপনার পিপিএফ।
বৈশিষ্ট্য
• অ্যাকাউন্ট খোলা যায় ডাকঘর এবং নির্ধারিত ব্যাঙ্কে।
• ন্যূনতম মেয়াদ ১৫ বছর। তার পরেও ৫ বছর করে বাড়ানো যায়। চাইলে ওই বাড়তি সময়ে কোনও টাকা না-ই রাখতে পারেন আপনি।
• প্রথম ১৫ বছরে মাত্র ৫০০ টাকা করে রেখেও অ্যাকাউন্ট চালানো যায়।
• প্রতি বছর জমা দেওয়া যায় সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা। এক মাসে একাধিকবার দেওয়া গেলেও, বছরে ১২ বারের বেশি টাকা জমা দেওয়া যায় না।
• প্রকল্পটিতে বর্তমানে সুদ ৭.৬%।
• পিপিএফে জমা টাকা করমুক্ত। কর লাগে না সুদেও। মেয়াদ শেষে পাওয়া পুরো টাকাও করের আওতার বাইরে।
ঋণের সুবিধা
• প্রকল্পটিতে ঋণ নিতে গেলে তা চালুর পরে দু’বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এক মাত্র তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ বছর পর্যন্তই ঋণ নেওয়া যাবে। তা-ও নির্দিষ্ট অঙ্কের উপর। যেমন, তৃতীয় বছরে প্রথম বছরে জমানো টাকার ২৫% ঋণ নেওয়া যাবে। চতুর্থ বছরে পাওয়া যাবে প্রথম দু’বছরের ২৫% টাকা।
• পিপিএফে যা সুদ পাওয়া যায়, তার উপর অতিরিক্ত ২% ফেরত দিতে হবে।
• কিস্তি মেটাতে হবে ৩৬ মাসের মধ্যে।
• একটি ঋণ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এখানে ফের ধার নেওয়া যাবে না।
টাকা তোলা
• পিপিএফ থেকে প্রয়োজনে টাকা তুলেও নিতে পারেন আপনি। কিন্তু একমাত্র ছ’বছর পূর্ণ হলে তবেই সপ্তম বছর থেকে টাকা তোলা যাবে।
• সপ্তম বছরে তোলা যাবে চতুর্থ বছর পর্যন্ত যা টাকা জমবে, তার ৫০%। এ ভাবেই তার পরের বছরগুলির ক্ষেত্রে তোলা টাকার হিসাব হবে।
• কিন্তু কখনওই ১৫ বছর মেয়াদের আগে পুরো টাকা তোলা যাবে না।
• ১৫ বছরের পরেও প্রকল্প চালিয়ে গেলে, টাকা তোলার সুযোগ থাকে।
গ্রুপ মেডিক্লেম
অনেক সংস্থাই কর্মীদের গোষ্ঠী স্বাস্থ্য বিমা বা গ্রুপ মেডিক্লেমের সুবিধা দেয়। সাধারণত ১৫ জনের বেশি কর্মী থাকলে, সেই সংস্থায় এই বিমার ব্যবস্থা থাকে।
বৈশিষ্ট্য
• অনেকের এক সঙ্গে বিমা করা হয় বলে সাধারণত এই প্রকল্পের খরচ তুলনায় কম।
• সাধারণত নিয়ম অনুসারে, এক সব কর্মীই এই বিমার আওতায় একই সুবিধা পান। অনেক সময় পদমর্যাদা অনুসারে সুবিধা আলাদা হতে পারে।
• এর আওতায় কী সুবিধা থাকবে, তা স্থির করে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা।
• বিভিন্ন বিমা প্রকল্প অনুসারে, তার শর্ত আলাদা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনও কর্মী তাঁর নিজের, স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের জন্য বিমার টাকা পান।
• এ ছাড়া ক্যাশলেস, আগে থাকা রোগ, মাতৃত্বকালীন চিকিৎসার মতো সুযোগ-সুবিধা থাকে বহু ক্ষেত্রে।
মনে রাখুন
এ ক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখা ভাল। অনেকেই অফিসের বিমা থাকলে আলাদা করে আর স্বাস্থ্য বিমা করান না। এটা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। কারণ, চাকরি বদল বা অন্য কোনও কারণে অফিসের বিমার সুবিধা না পেলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে। তাই সব সময় আলাদা করে বিমার ব্যবস্থা করে রাখা ভাল।
ইএসআই
কর্মীদের জন্য চালু রয়েছে রাজ্যের নিজস্ব স্বাস্থ্য বিমাও। পোশাকি নাম এমপ্লয়িজ স্টেট ইনশিওরেন্স স্কিম। এতে নির্দিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা ছাড়াও, চাকরি চলে গেলে টাকা পাওয়ার মতো নানা সুবিধা রয়েছে। যা নিয়ে এখানে আলোচনা করব।
কারা পান
• যে সমস্ত সংস্থা বা কারখানায় কর্মী সংখ্যা ১০-এর বেশি, সেখানে এই বিমার ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। যার মধ্যে রয়েছে, পরিবহণ, হোটেল, রেস্তরাঁ, সিনেমা, সংবাদপত্র, বিপণি, কোনও শিক্ষা বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। তবে কোনও কোনও রাজ্যে সেই সংখ্যা এখনও ২০।
• ২০১৫ সালের ১ অগস্ট থেকে নির্মাণ প্রকল্পের শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা চালু হয়েছে।
সুবিধা কীসে
এই প্রকল্পে বিভিন্ন সুবিধা মেলে। এর মধ্যে কয়েকটির কথা এখানে তুলে ধরলাম—
• চিকিৎসা: কোনও কর্মী সংস্থায় ঢোকার দিন থেকেই এই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা পান। সারা দেশে এ জন্য ইএসআইয়ের নিজস্ব হাসপাতাল রয়েছে। যদি সেখানে কোনও চিকিৎসার সুবিধা না থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালে তাঁকে পাঠানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। এমনকী বেসরকারি হাসপাতালেও।
• শারীরিক প্রতিবন্ধকতা: চাকরি করার সময়ে কোনও কারণে জখম হলে, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সেই কর্মীর মূল বেতনের ব্যবস্থা করে এই প্রকল্প। যদি সারা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যান, সে ক্ষেত্রে শেষ দিন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যায়।
• মাতৃত্বকালীন সুবিধা: সন্তান জন্মানোর দিন থেকে ২৬ সপ্তাহ দৈনিক বেতনের পুরোটাই পান মহিলা কর্মীরা। দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সুবিধা মেলে ১২ সপ্তাহ। আর কোনও কারণে গর্ভপাত হলে, তা ৬ সপ্তাহ।
• রোগের কারণে ছুটি: রোগের কারণে ছুটি নিতে বাধ্য হলে, ইএসআই প্রকল্প থেকে টাকা পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই সময়ে গড় দৈনিক বেতনের ৭০% পর্যন্ত টাকা মেলে। দু’টি আলাদা ধাপে সর্বোচ্চ ৯১ দিনের জন্য ওই সুবিধা পাওয়া যায়।
• চাকরি গেলে: কোনও কারণে চাকরি গেলে ২৪ মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে টাকা পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার কারণে কাজ না করতে পারলেও এই সুবিধা মেলে।
• পরিবারের জন্য: চাকরি করাকালীন সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবারের নির্ভরশীল ব্যক্তিরা সমান ভাগে টাকা পান।
লেখক: কর ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)
পাঠকের প্রশ্ন?
প্রঃ বয়স ২৪। সম্প্রতি পাঁচটি মিউচুয়াল ফান্ডে মাসে ১৭ হাজার টাকা লগ্নি করেছি। আর একটি ফান্ডে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। আমার লক্ষ্য ১৫ বছরে ১.২০ কোটি টাকা পাওয়া। সেই লক্ষ্য পূরণ হবে কি?
এস এম আলাউল হক, মুর্শিদাবাদ
আপনি যে ফান্ডগুলিতে লগ্নি করেছেন সেগুলি মূলত মিড ক্যাপ বা মাঝারি মাপের সংস্থার শেয়ারেই তহবিল খাটাচ্ছে। প্রায় সব ফান্ডই মাঝারি সংস্থা নির্ভর। ডাইভার্সিফিকেশন কম। তহবিল বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাকেই বলে ডাইভার্সিফিকেশন। মাঝারি সংস্থার শেয়ার নির্ভর লগ্নি কিন্তু ভবিষ্যতের পক্ষে সমস্যার কারণ হতে পারে।
আমার মনে হয়, শুধু মাঝারি নয়, লার্জ বা বড় এবং স্মল বা ছোট সংস্থার শেয়ারে তহবিল খাটায়, এমন ভাল কিছু ফান্ডও কিনুন। ভাল হয় ডাইভার্সিফায়েড ফান্ড কিনলে। এই ধরনের ফান্ডের তহবিল খাটে একাধিক শিল্পের নানান মাপের সংস্থায়। কোনও কারণে একটি শিল্পের আওতাভুক্ত সংস্থার শেয়ার তেমন রিটার্ন দিতে না পারলে, অন্য একটি শিল্পের সংস্থা যাতে তা পুষিয়ে দিতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। শেষে রিটার্নও ভাল পাবার সম্ভাবনা থাকে।
আপনার লক্ষ্য স্থির করে এগোনোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে ১৫ বছর সময়টা অনেক। ফলে তার মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হবে কি না, সেটা আজকে বলা অসম্ভব। ইকুইটি ফান্ড বা শেয়ার নির্ভর ফান্ডে রিটার্নের সম্ভাবনা অবশ্যই বেশি থাকে। তবে বাজারের সঙ্গে যুক্ত লগ্নি সব সময়েই ঝুঁকির। ফলে রিটার্ন সম্পর্কে নিশ্চিত কিচ্ছু বলা যায় না আগে থেকে। ভবিষ্যতে বাজার কী রকম থাকবে, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি কী রকম হবে, সংস্থার ব্যবসা, আয়, মুনাফা ইত্যাদি কতটা বাড়বে, তার হাত ধরে তাদের শেয়ারের দাম কতটা উঠবে— এ সবের উপর নির্ভর করবে।
ভাল রিটার্ন পেতে হলে ডায়ভার্সিফায়েড ফান্ডে জোর দিন। ঝুঁকি এড়িয়ে ভাল রিটার্নের জন্য আমরা সব সময়ই লম্বা মেয়াদে লগ্নির কথা বলি। বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির দৈত্যকে হারানো যায় এতে। ১৫ বছরে বড় মাপের রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে
পরামর্শের জন্য লিখুন:
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।
ই-মেল: bishoy@abp.in
ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না