Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জৌলুস কমছে ডলারের দামে

সোমবার ডলারের নিরিখে টাকার দাম পৌঁছেছে সাত মাসে সব থেকে উঁচুতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:৫৬
Share: Save:

শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার কমেছে। মাথা চাড়া দিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। প্রশ্নের মুখে কর্মসংস্থানও। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের জোগান কমার হাত ধরে বাড়ছে তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কাও। লোকসভা নির্বাচনের আগে যা চাপে রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। এই অবস্থায় সরকারকে কিছুটা হলেও স্বস্তি জোগাচ্ছে টাকা। সোমবার ডলারের নিরিখে টাকার দাম পৌঁছেছে সাত মাসে সব থেকে উঁচুতে।

ভারতীয় মুদ্রার দাম বাড়ার পাশাপাশি এ দিনও বেড়েছে শেয়ার সূচক। এই নিয়ে টানা ছ’দিন। সেনসেক্স ৭০.৭৫ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয়েছে ৩৮,০৯৫.০৭ অঙ্কে। অন্য দিকে, নিফ্‌টি ৩৫.৩৫ পয়েন্ট উঠে দৌড় শেষ করেছে ১১,৪৬২.২০ অঙ্কে।

সোমবার ১ ডলারের দাম এক ধাক্কায় ৫৭ পয়সা পড়ে যায়। বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময় প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৮.৫৩ টাকায়। গত অক্টোবরের গোড়ায় প্রতি ডলারের দাম ৭৪ টাকা ছাড়িয়েছিল। এখন তা নেমে এসেছে সাড়ে ৬৮ টাকায়। গত এক মাসে ডলারের দাম কমেছে ২৮৭ পয়সা। এই অবস্থায় অনেকেরই প্রশ্ন, দেশের আর্থিক ক্ষেত্রের চিত্রটি যখন ততটা উজ্জ্বল নয়, তখন বিচ্ছিন্ন ভাবে টাকার দাম কেন বাড়ছে?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাজারে জোগান এবং চাহিদার স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই পড়ছে ডলারের দাম। ডলারের জোগান বৃদ্ধির প্রধান কারণ, শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগ। সূত্রের খবর, ওই সব সংস্থা চলতি মাসেই ভারতের বাজারে প্রায় ২৭,০০০ কোটি টাকা ঢেলেছে। এর জন্য মার্চে এ পর্যন্ত তাদের ভারতে প্রায় ৩৯০ কোটি ডলার আনতে হয়েছে। কারণ, ওই সব সংস্থা বিদেশ থেকে ডলার এনে তা টাকায় পরিণত করেই শেয়ারে লগ্নি করে। তাই তারা বাজারে লগ্নি বাড়ালে জোগান বাড়ে ডলারের।

দ্বিতীয়ত, রফতানি বৃদ্ধিও ভারতে বাড়িয়েছে ডলারের জোগান। ইইপিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাকেশ শা বলেন, ‘‘চিরকালই অর্থবর্ষের শেষ দিকে রফতানি বাড়ে। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে এই সময়েই রফতানি থেকে আয় করা ডলারের জোগান ভারতে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। ডলারের জোগান বাড়ায় কমেছে তার দাম।’’ উল্লেখ্য, ভারতের রফতানিকারীরা পণ্যের দাম হিসেবে হাতে পান ডলার। তা ভাঙিয়ে টাকায় পরিণত করেন। সেই সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে সোনা এবং পেট্রোপণ্যের আমদানি কমেছে। ফলে এই খাতে কমেছে ডলারের খরচও।

যদিও ডলারের নিরিখে ক্রমাগত টাকার দাম বৃদ্ধি রফতানিকারীদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। কারণ, রফতানি থেকে আয় করা ডলারের বিনিময়ে তাঁরা এখন কম টাকা হাতে পাচ্ছেন। রাকেশবাবু বলেন, ‘‘ডলারের দাম কমার ফলে এ বার আমরা যে পণ্য রফতানি করব, তার দাম বাড়াতে হবে। এতে বিদেশে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা ভারতীয় রফতানি ক্ষেত্রের।’’ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রফতানি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফিয়ো। এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে তারা। তাদের বক্তব্য, মুদ্রার দাম বাধাহীন ভাবে বৃদ্ধিও অর্থনীতির পক্ষে ভাল লক্ষণ নয়। এর ফলেও অস্থিরতা তৈরি হয়। শুধু রফতানি সংস্থা নয়, ভবিষ্যতে এর ফলে আমদানিকারীরাও বিপাকে পড়তে পারেন।

একই সঙ্গে যথেষ্ট উত্থান-পতনের পরেও এ দিন কিছুটা উঠেছে সেনসেক্স। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যথারীতি বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার বিনিয়োগের উপরে ভর করেই বেড়েছে সূচক। এ দিন বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে ১,৮২২ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমার মতো কারণও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dollar Rupee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE