ভারতীয় পণ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০% শুল্কের ধাক্কায় শিল্পমহলে ত্রাহি রব উঠলেও আজ মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রক দাবি করল, শুল্কের প্রভাব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, স্বল্প মেয়াদে বস্ত্র, রাসায়নিক ক্ষেত্রের লোকসান হবে। ফলে বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশের বাজার খোঁজা জরুরি। তবে তাঁরা মানছেন, ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি থমকে। চুক্তি নিয়ে এগোতে হলে আগে এই চড়া শুল্কের বিষয়ে আমেরিকাকে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে।
রফতানিকারীরা ইতিমধ্যেই কোভিডের সময়কার ধাঁচে আর্থিক উৎসাহ, ঋণ গ্যারান্টির মতো সুরাহার দাবি তুলেছেন। আজ রফতানিকারীদের সংগঠন ফিয়োর একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে দরবার করতে গিয়েছিল। তাদের দাবি, নির্মলা জানিয়েছেন সরকার পাশে রয়েছে। সব উদ্বেগের সমাধান করা হবে। রফতানিকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সমস্ত রাস্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, আমেরিকায় বছরে যে ৮৭০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হয়, তার মধ্যে প্রায় ৪৭০০-৪৮০০ কোটি ডলারে ধাক্কা লাগবে। এর মধ্যে আছে বস্ত্র, চর্ম, রত্নালঙ্কার থেকে এঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক পণ্য, কুচো চিংড়ি। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। শুল্ক চাপানোর আগে আমেরিকা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথাবার্তাও কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, নতুন করে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। তবে তার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। প্রাথমিক ভাবে বস্ত্র, রাসায়নিক, এঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে ধাক্কা লাগবে। বরাত বাতিল হলে নগদের জোগানে টান পড়বে, আশঙ্কা শিল্পের। তাই সুরাহা জরুরি। এ জন্য দ্রুত ‘এক্সপোর্ট প্রোমোশন মিশন’ চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আলোচনা চলছে রফতানি শিল্পের সঙ্গে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের বার্তা, রাশিয়ার তেল কিনে কতটা লাভ আর তার জন্য আমেরিকা শুল্ক চাপানোয় কতটা ক্ষতি, তার বিশ্লেষণ করুক সরকার। বড় শিল্প সংস্থাগুলি রাশিয়ার তেল কিনে লাভবান হয়ে থাকলে, সেই লাভের কিছুটা চড়া শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত্রগুলিকে দেওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের অভিযোগ, শুল্ক ২০ লক্ষ মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি করলেও বিজেপির তাতে চিন্তা নেই। কারণ তারা জানে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় টিকে যাবে। তাই অন্ধ্রের চিংড়ি রফতানি, গুজরাতের হিরে শিল্প, উত্তরপ্রদেশের চর্ম শিল্পে যতই ধাক্কা লাগুক, তারা চিন্তিত নয়।
শুল্ক সমস্যায় কেন্দ্রের বার্তা
শুল্কের প্রভাব স্বল্পমেয়াদি।
নতুন করে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। তবে তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।
যদিও চুক্তি নিয়ে এগোতে হলে আগে শুল্কের বিষয়ে আমেরিকাকে সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে।
চড়া শুল্কের মুখে পড়া রফতানিকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সমস্ত রাস্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)