প্রতীকী ছবি।
নোট বাতিলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল নগদ লেনদেন কমানো। অন্য দুই নিশানা, কালো টাকা রুখতে সব লেনদেনে নজর রাখা। এবং তাতে স্বচ্ছতা আনা। যাতে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ না থাকে কোথাও। অথচ নোটবন্দির দু’বছর পরে অন্তত সোনা ব্যবসার একটা বড় অংশ হাঁটছে লক্ষ্যের সম্পূর্ণ উল্টো দিকে।
শহর বা শহরতলিতে কাঁচা সোনা ও গয়না কেনাবেচার ক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেন যে বেড়েছে, তা মানছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন, ব্যবসার বড় অংশ হচ্ছে বিল ছাড়া। হিসেবের খাতা এড়িয়ে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে। ফলে এক দিকে বেড়েছে বেআইনি লেনদেন। অন্য দিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
নোটবন্দির পরেই ২ লক্ষ টাকার বেশি কাঁচা সোনা বা সোনার গয়না কেনার ক্ষেত্রে চেকে বা ডিজিটাল ব্যবস্থায় দাম মেটানোর নিয়ম চালু করে কেন্দ্র। কিন্তু নগদে মেটালে আনা হয় প্যান কার্ডের তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা (৬১ নম্বর ফর্মে)। প্যান না থাকলে বাধ্যতামূলক হয় ৬০ নম্বর ফর্ম পূরণ। স্বর্ণ শিল্পের দাবি, মূলত গ্রামাঞ্চলে নোটবন্দির লক্ষ্য ধাক্কা খাওয়ার শিকড় এখানেই।
স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দের কথায়, ‘‘বিশেষ করে গাঁ-গঞ্জে যে গয়না ব্যবসায়ীরা বিল ছাড়া লেনদেন করতে অস্বীকার করছেন, তাঁরা ব্যবসা হারাচ্ছেন। এখন গ্রামে কৃষি ক্ষেত্রে আয় বেড়েছে। কৃষি নির্ভর মানুষের হাতে বাড়তি অর্থ এলেই সোনা কেনেন। তাই চাষবাস ভাল হলে সোনার চাহিদা বাড়ে।’’ কিন্তু কৃষি থেকে আয়ে কর বসে না বলে তাঁদের অনীহা আছে প্যান কার্ড করায়, বলছেন জেম অ্যান্ড জুয়েলারি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন। তিনি বলছেন, ‘‘অনেকের ভয়, প্যান করালেই আয় জানবে সরকার। তখন যদি কর বসায়? ৬০ বা ৬১ নম্বর ফর্ম পূরণেও তাই আপত্তি।’’
যে কারণে ওই সব ক্রেতারা বিল ছাড়া লেনদেন করতে চান, জানান ছোট গয়না ব্যবসায়ীদের সংগঠন বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার।
সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, তা হলে নগদ লেনদেন কমাতে যে পদক্ষেপ, তা আখেরে বাড়াল বিল ছাড়া লেনদেন? কেন্দ্র কর ফাঁকি ধরার দাবি করেছিল। অথচ নোটবন্দির পরে বেআইনি ব্যবসার বাড়বাড়ন্তই দেখল সোনার বাজার? অনেকের আবার বক্তব্য, নগদ লেনদেনও পুরোদস্তুর চলছে। তাঁদের জিজ্ঞাসা, কিন্তু আইন মেনে কেনা সোনায় তৈরি গয়না রসিদ ছাড়া বিক্রি সম্ভব?
কেন্দ্রের দাবি ছিল, নোটবন্দিতে চোরাকারবার কমবে। সোনা শিল্পই মানছে তা হয়নি। বাবলুবাবুর দাবি, ‘‘আমদানি শুল্ক ১০% হওয়ায় চোরা পথে আমদানি বেড়েছে। আমাদের আশঙ্কা, তাতে তৈরি গয়নার বড় অংশই বিল ছাড়া বিক্রি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy