Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Home Loan Interest

এক বছরেই সুদ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটা, গৃহঋণের কিস্তি গুনতে নাভিশ্বাস মধ্যবিত্তের

মূল্যবৃদ্ধির হারে রাশ টানতেই গত বছর মে মাস থেকে রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদে ঋণ দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে গৃহঋণের সুদ।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার হাজার টাকার উপরে আজ বহু দিন। পেট্রল-ডিজ়েল অগ্নিমূল্য। টোম্যাটো, লঙ্কা-সহ আনাজের দরেও হেঁশেলে ছেঁকা খাওয়ার জোগাড়। লাফিয়ে দাম বাড়ছে ওষুধ এবং বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের। সংসার চালাতে নাজেহাল হওয়া নিম্ন এবং মধ্যবিত্তের ঘুম কাড়ছে গৃহঋণের চড়া সুদ এবং সেই সূত্রে গুনতে হওয়া তার মোটা মাসিক কিস্তিও।

মূলত মূল্যবৃদ্ধির হারে রাশ টানতেই গত বছর মে মাস থেকে রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদে ঋণ দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট (২.৫ শতাংশ বিন্দু) বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে গৃহঋণের সুদ। তার জেরে সেই ঋণ শোধের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) বাবদ খরচ গত এক বছরে বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। যেমন, ২০২২-এর জুনে যে সুদ ছিল ৭.০৫%, তা-ই এখন পৌঁছেছে ৯.১৫ শতাংশে। ফলে ধার নিয়ে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা বহু সাধারণ মানুষই হিমশিম খাচ্ছেন সংসারের খরচ সামলাতে। একাংশের পক্ষে সময়ে কিস্তি দেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়াছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ইচ্ছে থাকলেও অনেকে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে মাসিক কিস্তির অঙ্ক আগের জায়গায় ধরে রাখতে পারছেন না বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নানা শর্তের কারণে। তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। যেমন, একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রশান্ত সাহা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মাসিক কিস্তি ছিল ১৯,৪০০ টাকার মতো। এখন দিচ্ছেন ২৪,০০০ টাকা। প্রায় এক বছরে ইএমআই বেড়েছে ৪৬০০ টাকা। প্রশান্ত বলছেন, “বেতন থেকে কত টাকা কিস্তি হিসেবে নিয়মিত মেটাতে পারব, তা হিসাব করে গৃহঋণ নিয়েছিলাম। এখন মাসে ইএমআই এতটা বেড়ে যাওয়ায় সংসার খরচের গোটা হিসাবটাই গুলিয়ে গিয়েছে। তার উপরে জিনিসপত্রের আগুনে দামে অন্যান্য খরচও বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি। কী ভাবে চালাব সংসার?’’ আয় বাড়েনি অথচ খরচ বেড়েছে, এমন পরিস্থিতি বহু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে যন্ত্রণার কারণ হয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

সিঙ্গুরের স্কুল শিক্ষক চিন্ময় মালিক অতিমারির সময়ে ঋণের কিস্তি মেটানো সাময়িক ভাবে বন্ধ (মোরাটোরিয়াম) রাখতে বাধ্য হন। যে ক’মাস ঋণ মেটাননি, তার বকেয়া মূল ঋণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এক বছরে সুদের হার বৃদ্ধির দরুন সব মিলিয়ে তাঁর কিস্তির খরচ বেড়েছে প্রায় ৮০০০ টাকা। তাঁর আক্ষেপ, “বেতন তো তত বাড়েনি। মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির পুরো টাকাও পাচ্ছি না। সংসার চালানো দায়।’’

সাধারণত সুদ বাড়লে-কমলে মাসিক কিস্তি এক রেখে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে-কমিয়ে তা আদায় করে ব্যাঙ্ক। কিন্তু প্রশান্ত এবং চিন্ময়, দু’জনেই সর্বোচ্চ মেয়াদে গৃহঋণ নিয়েছেন। ফলে মেয়াদ বাড়িয়ে ইএমআই এক রাখার সুযোগও পানিনি।

উল্লেখ্য, এক সময়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমালেও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সেই সুবিধা ঋণগ্রহীতাদের পুরোপুরি দিচ্ছিল না। সেই সময়ে গৃহঋণ, ছোট শিল্পকে দেওয়া ঋণ ছাড়াও আরও কয়েকটি খুচরো ঋণকে রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত করে দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে ওই সব ঋণে সুদ ওঠানামা করতে শুরু করে রেপো রেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ওই সব ঋণে গত এক বছর ধরে টানা বেড়েছে গৃহঋণের সুদ তথা ধার শোধের মাসিক কিস্তির খরচ। ব্যাঙ্কিং মহলের একাংশের দাবি, যে হারে রেপো রেট বেড়েছে, তার পুরোটা তারা গ্রাহকদের উপরে চাপায়নি। কিন্তু গ্রাহকদের বড় অংশেরই বক্তব্য, আখেরে কিস্তির খরচ যা বেড়েছে, তাতেই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। যে গৃহঋণ মাথার ছাদ জুগিয়েছে, তার মোটা কিস্তির অঙ্কই এখন ঘুম কেড়ে নিচ্ছে অনেকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE