Advertisement
E-Paper

ফান্ডের ফান্ডা

বলবে তো অনেকেই অনেক কিছু। সব শুনলে চলবে কেন? ফান্ডে ভাল রিটার্ন পেতে ভিত্তিহীন কথায় কান না-দেওয়ার অভ্যেসটাও জরুরি। কী করে, জানাচ্ছেন নীলাঞ্জন দেবলবে তো অনেকেই অনেক কিছু। সব শুনলে চলবে কেন? ফান্ডে ভাল রিটার্ন পেতে ভিত্তিহীন কথায় কান না-দেওয়ার অভ্যেসটাও জরুরি। কী করে, জানাচ্ছেন নীলাঞ্জন দে

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২১

ন্যাভ কী?


ন্যাভ= ফান্ডের সম্পদ (অ্যাসেট) — ফান্ডের দায় (লায়াবিলিটি)


যে যে শেয়ার, বন্ড ইত্যাদিতে ফান্ড টাকা লাগিয়েছে, প্রত্যেক দিনের শেষে দেখা হয়, তাদের মোট দাম। ওই মোট দামই ফান্ডের সম্পদ।


ফান্ড পরিচালনার খরচ, কর
ইত্যাদি তার দায়।


সাধারণ ভাবে ন্যাভ বলতে অবশ্য লগ্নিকারীরা বোঝেন প্রতি-ইউনিট ন্যাভকে। এই ন্যাভ হিসেবের সমীকরণ হল: ইউনিট পিছু ন্যাভ=(ন্যাভ/ফান্ডের মোট ইউনিটের সংখ্যা)=(সম্পদ-দায়)/ মোট ইউনিটের সংখ্যা

চোখ খুলে

পুঁজি কম: তা হলে আর ঝুঁকির ফান্ড কিনবেন কেন?


ফান্ড অতীতে সফল: শুধু তাতে কিচ্ছু আসে-যায় না


ফান্ড-তহবিল বিশাল: কে বলল তা হলেই রিটার্ন বেশি হবে?


একই রকম ফান্ডে একাধিক লগ্নি: আপনি ভুল পথে হাঁটছেন


ফান্ড কেনা মানেই বড় লগ্নি: একেবারেই না


বয়স বাড়ছে: ঝুঁকি কমাতে থাকুন

মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করা নিয়ে আমজনতার মানসিক জড়তা আগের তুলনায় অনেকখানি কেটেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আরও কাটবে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হচ্ছে অন্য জায়গায়। আর সেটা হল, ফান্ড ঘিরে মাথার মধ্যে নানা রকম ভুল ধারণার বাসা বাঁধা। যাঁরা এই লগ্নির পথে সবেমাত্র পা বাড়াচ্ছেন তাঁরা তো বটেই, বহু পোড় খাওয়া মানুষের লগ্নি পরিকল্পনাকেও ডুবিয়েছে ওই সব ভুল ধারণা। যেগুলির বশবর্তী হয়ে অনেকে রিটার্ন বাড়ানোর সুযোগ নিতে পারেননি ঠিক মতো। কেউ আবার টাকা রেখেছেন এক্কেবারে ভুল জায়গায়। ফলে মার খেয়েছে রিটার্ন। দফারফা হয়েছে সঞ্চয়ের। তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। চলুন আজ এই বিষয়টাতেই চোখ রাখি। জেনে নিই কী করে এড়িয়ে চলব ওই সমস্ত ভুল-ভাল ধারণা।

ধারণা

কম ন্যাভের ফান্ডে লগ্নি করা উচিত। তাতে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা।

বাস্তব

এটা ঠিকই যে, প্রথম লগ্নির সময়ে ফান্ডের ন্যাভ ও টাকা তুলে নেওয়ার সময়কার ন্যাভ— এই দু’য়ের পার্থক্যই ঠিক করে প্রাপ্য টাকার অঙ্ক। ফলে ন্যাভ গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু শুধু সেটা দেখে ফান্ডে লগ্নি করা মস্ত বড় ভুল। বরং ন্যাভ-কে একটা সংখ্যা হিসেবে দেখুন। যা থেকে বোঝা যাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় ফান্ডের ক’টা ইউনিট কেনা যাবে। তারপর নজর দিন অন্যান্য বিষয়ে। আসলে ইউনিট পিছু ন্যাভ কোনও একটি শেয়ারের দাম নয় যে, কমে কিনলে লাভ। বরং সব মিলিয়ে ফান্ড তহবিলের মূল্য বাড়লে ন্যাভ উঠবেই। মূল্য কমলে পড়বে।

সুতরাং

ফান্ড কিনুন তহবিল কোথায় লগ্নি করা হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখে। ন্যাভের উচ্চতার নিরিখে নয়।

ধারণা

তোমার ফান্ড আমারটার থেকে ভাল। অনেক বেশি হারে রিটার্ন দিচ্ছে। কাজেই আমাকে ফান্ড বদলাতে হবে।

বাস্তব

হয়তো সত্যিই আপনার ফান্ডটি আপনার বন্ধুর লগ্নি করা ফান্ডের তুলনায় কম রিটার্ন দিচ্ছে। কিন্তু সে জন্য চিন্তা-ভাবনা না-করে ফান্ড বদলে বা ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতা মারাত্মক। কারণ, দু’টি ফান্ডের মধ্যে তখনই তুলনা টানা যায়, যদি সেগুলির পোর্টিফোলিও এক রকম হয়।

আপনি হয়তো ডেট ফান্ডে (ঋণপত্রে তহবিল খাটায় যেগুলি) লগ্নি করেছেন। অথচ তুলনা করছেন ইকুইটি ফান্ডের (শেয়ারে টাকা খাটায় যেগুলি) সঙ্গে। তা হলে ভুল হবে। ডেট ফান্ডে ঝুঁকি কম। রিটার্নও তুলনায় কম। ইকুইটি ফান্ডে ঝুঁকি অনেক। কিন্তু রিটার্নের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এমনকী সব ধরনের ইকুইটি বা ডেট ফান্ডের নিজেদের মধ্যেও তুলনা চলে না। কারণ সেখানেও ঝুঁকি বা লাভের লক্ষ্যের রকমফের থাকে। যেমন, স্বল্প মেয়াদি ডেট ফান্ডের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদির বহু ফারাক। ইনডেক্স আর সেক্টর ফান্ড দু’টোই ইকুইটি ফান্ডের আওতায় পড়লেও, চরিত্র এক্কেবারে আলাদা। ইনডেক্স ফান্ডের ঝুঁকি সেক্টর ফান্ডের থেকে অনেক কম।

সুতরাং

তুলনা যদি করতেই হয় ফান্ড কেনার সময়ে করুন। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা মেপে, কত দিনের মধ্যে কতখানি রিটার্ন ঘরে তোলার লক্ষ্য রাখছেন জরিপ করে টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিন।

ধারণা

যে-ম্যানেজারদের পরিচালনায় কোনও ফান্ড আগে খুব ভাল রিটার্ন দিয়েছে, ভবিষ্যতেও শুধু তাঁদের আওতায় থাকা ফান্ডই কেনা উচিত।

বাস্তব

ভাল ফান্ড ম্যানেজাররা যে সব সময়েই ভাল রিটার্ন দিতে সফল হবেন, তার কোনও মানে নেই। বাজারের ভাল-খারাপের উপর তহবিলের বেড়ে ওঠা নির্ভর করে। বুদ্ধি যত তুখড়ই হোক না কেন, একটি ফান্ডের ক্ষেত্রে সফল ম্যানেজার, প্রতিটি ফান্ডেই বাজার মাত করবেন, এই ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকাটা বোকামি।

সুতরাং

শুরুতেই নিজের অক্ষমতা ও চাহিদাগুলো স্পষ্ট জানিয়ে ফান্ড বাছুন। যাঁরাই সেটা পরিচালনা করুন না কেন, তহবিলকে বাড়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিন। বাজারের মন্দ পরিস্থিতির জের কাটিয়ে উঠতে সেটা খুব জরুরি।

ধারণা

কোনও ইকুইটি ফান্ড ভাল রিটার্ন দিচ্ছে। অতএব সেটা কিনতে হবে।

বাস্তব

ইকুইটি ফান্ড ঝুঁকিপূর্ণ লগ্নি। শেয়ার বাজার বাড়তে থাকলে তহবিল ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ভাল রিটার্ন দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু যদি সে সময়ে ওই ফান্ড কেনেন, তা হলে আগামী দিনে বাজারের নীচে নামার সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখুন। তার জেরও বইতে হবে ফান্ডকে। যাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা নেই, তাঁরা লোভে পড়ে এ সময়ে লগ্নিতে হাত দিলে পরে পস্তাতে পারেন। বাজারের খারাপ আবহাওয়া সামলাতে সাহস লাগে। আর লাগে ধৈর্য ধরার একাগ্রতা।

সুতরাং

ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করতে প্রথমে দেখুন সেটি কোন কোন সংস্থার শেয়ার কিনছে। সেগুলির বর্তমান অবস্থা। ভবিষ্যতে বাড়ার সুযোগ। সর্বোপরি আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে তার সাযুজ্য আছে কিনা।

ধারণা

ডিভিডেন্ড সব সময়েই ভাল।

বাস্তব

ফান্ড ডিভিডেন্ড দিলে মনে হয়, হাতে এসে গেল পড়ে পাওয়া কিছু টাকা। যার উপর কর গোনারও ঝক্কি নেই। সাধারণত, বাজারকে টেক্কা দিয়ে ফান্ড উপরি আয় করতে পারলে ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু হতে পারে, ওই বাড়তি টাকা আপনার লাগবে না। বরং আপনি চান দ্রুত তহবিল ফুলে-ফেঁপে উঠুক। ন্যাভ বাড়ুক। যাতে ভবিষ্যতে মোটা রিটার্ন আসে। তেমনটা হলে ডিভিডেন্ড আপনার জন্য কাজের নয়।

সুতরাং

ফান্ডে যেন ডিভিডেন্ড ও গ্রোথ (ডিভিডেন্ডের টাকা ফান্ড-তহবিলে যুক্ত হওয়া), এই দুইয়ের মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী যাতে প্রথম থেকেই বিষয়টি মাথায় রেখে এগোতে পারেন।

ধারণা

এসআইপি-র কোনও তুলনাই হয় না।

বাস্তব

এটা ঠিকই যে ফান্ডে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়তে এসআইপি-র জুড়ি নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সব সময়ে এখানেই রিটার্ন সব থেকে বেশি। কাজেই এসআইপি-র উপর আপনার আস্থায় আঘাত না-করেই বলছি, অন্তত দু’টি বিষয় মাথায় রাখুন:

• যত টাকা এসআইপি করবেন, অনেক সময় এমনও হতে পারে যে, শেষে তার থেকে কম হাতে পেলেন। কারণ, এখানে মাসের নির্দিষ্ট দিনে চেক জমা পড়ছে ফান্ডের তহবিলে। ফলে সে দিন শেয়ার বাজার কি খেল্‌ দেখাবে, তা কে বলতে পারে।

• অনেক সময়ে একবারে দেওয়া থোক টাকায় রিটার্ন মেলে বেশি।

সুতরাং

লগ্নির জন্য শুধু এসআইপি-র কথা ভাববেন না। তবে শুরু করলে, খারাপ সময়ে বাজার ছেড়ে পালাবেন না।

ধারণা

নতুন ফান্ডে লগ্নি মানেই ঘরে লোভনীয় রিটার্ন তোলা।

বাস্তব

বাজারে প্রথম আসা অচেনা ফান্ডে ঝুঁকি বেশি। তা নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু নতুন ফান্ড মানেই ভাল রিটার্ন— এমনটা নয়।

সুতরাং

নতুন ফান্ড কোথায় কোথায় টাকা খাটাচ্ছে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নিন। নিজের সাধ্যের দিকটিও মাথায় রাখুন।

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

Mutual Fund Return
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy