সপ্তাহ ঘুরতেচললেও যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনায় এখনও কোনও প্রভাবশালীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পথে হাঁটল না পুলিশ। পুলিশ যে সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছে তাঁরা কেউ জল-খাবারের বরাত পাওয়া সংস্থার প্রতিনিধি, কেউ লিয়োনেল মেসির কলকাতায় আসার প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তের সংস্থার লোক। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি এই ঘটনায় জনরোষের মুখে পড়া প্রভাবশালীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পথে হাঁটবে পুলিশ?
শুক্রবার নবান্ন সূত্রে যদিও দাবি করা হয়েছে, সরকারের তৈরি রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) তদন্তের আওতার বাইরে থাকবেন না নেতা-মন্ত্রী, সচিব বা অন্য প্রভাবশালীরা। এমনকি, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ও বিধাননগর পুলিশের কমিশনার মুকেশের কাছ থেকে শো-কজ় নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে যে উত্তর এসেছে, তা-ও খতিয়ে দেখবে সিট।
নবান্ন সূত্রের দাবি, সিট-কে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বাধীন কমিটিও ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় রিপোর্ট জমা করবে। তাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আটকাতে কী কী করণীয় তার দিশা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মেসির কলকাতায় আসার মতো অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ (এসওপি) চালু রয়েছে, তাতে পরিমার্জন করার প্রয়োজন আছে কি না, রিপোর্ট দেখে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা খতিয়ে দেখছে পূর্ত দফতর। সিট-এর অনুমতি পেলেই স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলেসূত্রের খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঠিক কী কারণে মেসির উপস্থিতিতে পরিস্থিতি এমন বল্গাহীন চেহারা নিল সেই বিষয়টি এখন তদন্তের মূলে আছে। এর পিছনে কোনও ইন্ধন কাজ করেছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। কর্তব্যরত পুলিশ বা সরকারি অন্যান্য দফতরের কর্মীদের ভূমিকায় গাফিলতি ছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এই অনুষ্ঠান ঘিরে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঘটনার পরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার কার্যত টাকা ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সে বিষয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট নির্দেশ সামনে আসেনি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কত সংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছিল এবং কত সংখ্যক কর্পোরেট বুকিং ছিল তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই আমন্ত্রিত হিসেবে ক’জন মাঠে প্রবেশ করেছিলেন তারও হিসাব চলছে।
এ দিন হুগলির রিষড়ায় শতদ্রুর বাড়িতেও গিয়েছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা। সকালে তাঁরা রিষড়া থানায় পৌঁছন। সেখান থেকে বিধাননগর পুলিশের পাঁচ অফিসার শতদ্রুর বাড়িতে যান। সূত্রের খবর, সে সময় রিষড়ার বাঙুর পার্কে শতদ্রুর বাড়িতে পরিচারিকা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এক জন মহিলা পুলিশকর্মীর উপস্থিতিতে সেই পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তারপর প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চলে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তবে তল্লাশি নিয়ে পুলিশ বা শতদ্রুর পরিবারের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, মেসির সঙ্গে শতদ্রুর সংস্থার কী চুক্তি হয়েছিল তা জানতে নথিপত্র খোঁজা হয়েছে। খোঁজা হয়েছে শতদ্রুর পাসপোর্টও। যদিও তেমন কিছুই পুলিশ নিয়ে আসেনি বলেও একটি সূত্রের দাবি। রাতে শতদ্রুকেও জেরা করেন সিট-এর সদস্যেরা।
এ দিকে, যুবভারতীতে ভাঙচুরের ঘটনায় আরও বৃহস্পতিবার রাতে লেক টাউন এবং ঘোলা থানা এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের নাম ঋজু ওরফে গোপাল দাস, সৌম্যদীপ ওরফে পাপ্পু দাস এবং তন্ময় ওরফে দুষ্টু দাস। সিসি ক্যামেরা এবং সোশাল মিডিয়ার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ভাবেই আগে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ভাঙচুর এবং হাঙ্গামার পাশাপাশি এই ঘটনায় পুলিশ এ বার লুটের ধারাও যুক্ত করতে চাইছে বলে খবর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)