শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের ৮.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা হারানোর দিনেই এল আরও দুই খারাপ খবর। সোমবার জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও) জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের শিল্পোৎপাদন মাথা নামিয়েছে। এই নিয়ে পরপর দু’মাস। উল্টো দিকে, ফেব্রুয়ারিতে আরও মাথা তুলেছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। ফলে মাস দুয়েক আগেও যেখানে মনে হচ্ছিল অর্থনীতির সামনে বাধা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে, সেখানে এখনকার ছবি রীতি মতো ঘোলাটে। বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, করোনার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে সরকার কী ভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ডের চাকা ঘোরাতে পারে তার উপরেই নির্ভর করছে অনেক কিছু।
এ দিন এনএসও জানিয়েছে, মূলত কল-কারখানার উৎপাদন এবং খনন শিল্পের সঙ্কোচনের ফলেই ফেব্রুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন ৩.৬% কমেছে। ওই দুই সূচক যথাক্রমে ৩.৭% এবং ৫.৫% কমেছে। করোনার ধাক্কায় গত অর্থবর্ষের এপ্রিল-ফেব্রুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন কমেছে ১১.৩%। পাশাপাশি, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় গত মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ফেব্রুয়ারির (৫.০৩%) তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৫২%। অবদান রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামেরও।
করোনার জেরে গত বছরের মার্চে শিল্পোৎপাদন ১৮.৭% কমে গিয়েছিল। তার পর থেকে ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি ঘটে ডিসেম্বরে তা বৃদ্ধির গণ্ডিতে ফেরে। যাকে কেন্দ্র করে মোদী সরকার দাবি করতে শুরু করে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ স্পষ্ট। একই সময়ে জানুয়ারিতে মূল্যবৃদ্ধি কমার খবরও কিছুটা স্বস্তির বাতাস দিয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকেই ছবিটা বদলাতে থাকে। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে পরপর দু’মাস শূন্যের নীচে নেমেছে শিল্পোৎপাদন। অন্য দিকে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহনসীমা (৪%; +/-২%) ছাপালেও ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে কিছুটা সামলে নেয়। কিন্তু জ্বালানির দাম বাড়ায় পরিবহণ খরচ বাড়ার ফলে পরের দু’মাসে তা ফের অস্বস্তিকর জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আগামী পাঁচ বছরের জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্ককে মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একই রাখতে বলেছে কেন্দ্র। ফলে গত ঋণনীতিতে সুদ কমানোর রাস্তা খোলা রাখলেও এখনকার মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে তা আদৌ কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। পাশাপাশি, লকডাউনের শুরুতে শিল্পকে যে সব সুরাহা কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হচ্ছিল তা এখন নেই। তার উপরে করোনার সংক্রমণ ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় সরকার নতুন কোন কোন কড়াকড়ি চাপায় এবং তার ফলে শিল্পের সামনে কতটা বাধা তৈরি হয় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন উদ্বেগ।