আমেরিকায় রফতানি করা পণ্যে ২৫% শুল্ক বসেছে। অপেক্ষা আরও ২৫ শতাংশের। তার পরেও ভারতের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন এই নিয়ে বিচলিত নন। কিছু শিল্পে যে এর ধাক্কা লাগবে, তা বুধবার স্বীকার করেন তিনি। জানান, তাদের সুরাহা দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে সরকার। তবে উপদেষ্টার মতে, আমেরিকার শুল্কের বিরূপ প্রভাব এক থেকে দু’টি ত্রৈমাসিকের বেশি স্থায়ী হবে না। বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশকে চাপে ফেলতে মাথা তুলে রয়েছে আরও অনেক বেশি কঠিন একাধিক সঙ্কট। নজর দিতে হবে সেগুলিতে। এ দিনই মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি-রও দাবি, ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারবে না শুল্ক। কারণ, এ দেশ বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতি নয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিপুল। ফলে জিডিপি-র বৃদ্ধিতে কোপ পড়বে না শুল্ক-যুদ্ধের। এর জন্য মূল্যায়ন কমারও আশঙ্কা নেই।
নাগেশ্বরনের মতে, দু’দফায় মোট ৫০% শুল্ক ধাক্কা দেবে গয়না, বস্ত্র, চিংড়ির মতো ক্ষেত্রকে। যে কারণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সঙ্গে কেন্দ্র আলোচনা করছে। সেই অনুযায়ী নীতি আনা হবে। তবে এই প্রভাব হবে সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদে তার রেশ থাকবে না। তিনি এর থেকেও বেশি কঠিন এবং দীর্ঘস্থায়ী যে সঙ্কটের কথা মনে করিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে— ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে যেখানে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯.২% ছিল, সেখানে গত বার (২০২৪-২৫) তা ৬.৫ শতাংশে নেমেছে। চলতি অর্থবর্ষেও শ্লথ থাকার আশঙ্কা। কমেছে ঋণ বৃদ্ধির হার। জাতীয় অর্থনীতিকে কৃত্রিম মেধা (এআই), গুরুত্বপূর্ণ খনিজ (ক্রিটিকাল মিনারেলস) এবং জোগানশৃঙ্খলে ঘাটতির মতো ‘চ্যালেঞ্জের’ মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সরকার নীতিগত পদক্ষেপ করছে। বেসরকারি ক্ষেত্রকেও আগামী কয়েক বছর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। উপদেষ্টার মতে, কয়েকটি ত্রৈমাসিকের কথা না ভেবে কয়েক বছরের সমস্যার দিকে তাকানো জরুরি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এর থেকে স্পষ্ট কৃত্রিম মেধার রমরমা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের অভাব বা জোগানশৃঙ্খলে ঘাটতির মতো সমস্যা যে যথাক্রমে কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং চাহিদাকে খাদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তা বুঝতে পারছে সরকার। অর্থনীতিতে এগুলির ধাক্কা নিয়ে তাই তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
এ দিকে, ২৪ অগস্ট আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধিদের ভারতে আসার কথা। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, শুল্কের সমাধান না হলে বাণিজ্য নিয়ে কথা হবে না। ফলে সেই বৈঠক নিয়ে ধোঁয়াশা বহাল। এই অবস্থায় আমেরিকার রাজস্ব সচিব স্কট বেসেন্টের অভিযোগ, আলোচনায় ভারত কিছুটা ‘একগুঁয়েমি’ করছে।
নাগেশ্বরনের বার্তা
আমেরিকার শুল্ক প্রাথমিক ভাবে বস্ত্র, গয়না এবং চিংড়ি রফতানিতে ধাক্কা দেবে বটে। তবে প্রভাব থাকবে বড়জোর ছ’মাস।
বরং দেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা রয়েছে, যেগুলির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
আমেরিকার শুল্কের থেকেও কঠিন চ্যালেঞ্জ শ্লথ আর্থিক বৃদ্ধি, কমতে থাকা ঋণ বৃদ্ধি, নগদের সমস্যা, কৃত্রিম মেধার চাপ, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎসে ঘাটতি এবং জোগানশৃঙ্খলের সমস্যা মোকাবিলা করা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)