আমেরিকার বাণিজ্য নীতি গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক এবং মূল্যায়ন সংস্থাগুলির আশঙ্কা, জটিলতা দ্রুত না কাটলে আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক মন্দার খাদে পিছলে পড়াও অসম্ভব নয়। বড় ধাক্কা খাবে চিন। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) ভারত দ্রুততম বৃহৎ অর্থনীতির তকমা ধরে রাখতে সফল হলেও, বৃদ্ধির হার কমতে পারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।
গতকাল আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) বিশ্বের এবং প্রায় সমস্ত উল্লেখযোগ্য দেশের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে। অর্থনীতি মন্থর হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির পূর্বাভাস, ভারতের ক্ষেত্রে এ বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার থমকাতে পারে ৬.২-৬.৭ শতাংশে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও বলেছে, গত অর্থবর্ষে জিডিপি ৬.৫% হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও, চলতি অর্থবর্ষে হয়তো সেই গতি বহাল থাকবে না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপরে যে শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তা সে দেশে ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল আইএমএফের রিপোর্টে স্পষ্ট বার্তা, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির ছবিটাই বদলে গিয়েছে। চিন বাদে বাকি দেশের পণ্যের উপরে তা কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত থাকলেও, আশঙ্কা কমছে না। যে কারণে চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫% থেকে কমিয়ে ৬.২% করেছে তারা। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ৬.৭% থেকে তা নামিয়েছে ৬.৩ শতাংশে। মার্চে ওইসিডি বলেছিল, এ বছর ভারতের জিডিপি ৬.৯% বাড়তে পারে। তারাই এক মাসে তা নামিয়েছে ৬.৪ শতাংশে।
সম্প্রতি মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ় রেটিংস বলেছে, ‘‘শুল্ক যুদ্ধ আর্থিক বাজারকে ঝাঁকুনি দিয়েছে। বাড়ছে বিশ্ব মন্দার ঝুঁকি। এই অনিশ্চয়তা বজায় থাকলে তা ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে বাধা দেবে। থমকে যাবে লগ্নি। ধাক্কা খাবে ক্রেতাদের আস্থা।...আর শুল্কের ধাক্কায় খোদ আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে পারে অন্তত ১ শতাংশ বিন্দু। কারণ, আমদানি শুল্ক বাড়লে দেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা মন্থর করবে বিক্রিকে। এই ধাক্কাকে সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমেরিকার নেই। ফলে আর্থিক
বৃদ্ধির হার নামতে পারে ৪ শতাংশের নীচে।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্থর হলে বাকি দেশগুলির উপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। বাদ থাকবে না ভারতও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)