ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো ৫০% শুল্কের চাপে বাজারে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তার কিছুটা সামলানো গিয়েছে মোদী সরকারের জিএসটি সংস্কারের সিদ্ধান্তে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভারতকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করলেও, টানা আট দিন উঠে নিফ্টি ফের ২৫,০০০ পার করেছে। সেনসেক্স উঠে এসেছে প্রায় ৮২ হাজারে। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায়। আশা, জিএসটি কমলে বিক্রি বাড়বে। রফতানিতে যে ক্ষতি হবে, তার কিছুটা দেশের ভেতরেই বিকোবে। শুল্কের ধাক্কায় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার যতটা কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ততটা না-ও কমতে পারে। অনুমান, তা নামতে পারে ৩০-৪০ বেসিস পয়েন্ট। এমনকি মূল্যায়ন সংস্থা ‘ফিচ’ সম্ভাব্য আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৫% থেকে বাড়িয়ে ৬.৯% করেছে। বাজার এতে খুশি। সামনে উৎসবের মরসুম। জিএসটি কমায় কোন পণ্যের বিক্রি কেমন বাড়ে, সে দিকে এখন নজর থাকবে।
নতুন জিএসটি চালু হবে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। গাড়ি ও বাইকের দাম কমে কত হচ্ছে, তা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে সংস্থাগুলি। ক্রেতাদের যাতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। সমস্যা মোড়কবন্দি ভোগ্যপণ্য নিয়ে। সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, বাজারে এখন পুরনো দাম ছাপা প্রায় ২০০০ কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য রয়েছে। সরকারের নির্দেশ, পুরনো দামের পাশে নতুন দামের লেবেল লাগাতে হবে। যাতে ক্রেতারা বুঝতে পারেন কতটা দাম কমল। জানা যাবে কর কমার পুরো সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন কি না। পুরো প্রক্রিয়ার উপর কেন্দ্রের নজর থাকবে। বিমার প্রিমিয়ামে কতটা ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়ে সরকার বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা চালাচ্ছে। বহু ওষুধের দামও কমতে চলেছে এক সপ্তাহ পর থেকে। পুজোর মুখে কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে ভেবে আশায় বুক বাঁধছেন মানুষ।
অগস্টে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার একটু বাড়লেও, তা মাত্রাছাড়া হয়নি। ১.৬১ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.০৭%.। আছে আরবিআই এর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ও অনুমান, তা থাকবে গোটা বছর ধরে। নতুন জিএসটি চালু হলে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও নামতে পারে। যে কারণে আগামী দিনে সুদের হার আরও কিছুটা কমতে পারে বলে আশা। মনে করা হচ্ছে, উৎসবের মরসুমে এ বার ভোগ্যপণ্য বিক্রেতাদের আয় ভাল বাড়বে। যার প্রভাব দেখা যাবে বছরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফলে।
বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে টানা শেয়ার বিক্রি করলেও, ৯ এবং ১২ সেপ্টেম্বর তাদের ক্রেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তবে লাগাতার শেয়ার কিনছে দেশীয় লগ্নি সংস্থাগুলি। জুলাইয়ে বৃদ্ধির পরে অগস্টে অবশ্য শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি ২১% কমেছে। আগের মাসের ৪২,৭০২ কোটি টাকা থেকে নেমেছে ৩৩,৪৩০ কোটিতে। এসআইপি-র পথে এসেছে ২৮,২৬৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে, ঋণ ভিত্তিক ফান্ড থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ৭৯৮০ কোটি। ফলে দুর্বল বন্ড বাজার। ইল্ড রয়েছে ৬.৫ শতাংশর নীচে।
এই পরিস্থিতিতে ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও আমেরিকার শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব জুড়ে অনিশ্চয়তা বহাল। তাই নজিরবিহীন ভাবে বেড়েই চলেছে সোনা-রুপোর দাম। কলকাতায় ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) ১,১০,৪৫০ টাকা। হলমার্ক গয়নার সোনা (১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট) ১,০৫,০০০ টাকায়। কেজিতে রুপোর বাট ১,২৮,৭০০ টাকা। গত এক বছরে শেয়ার ও ফান্ড হতাশ করলেও, সোনা-রুপোর রিটার্ন ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছে। যাঁরা গোল্ড বন্ড ও গোল্ড ফান্ডে টাকা ঢেলেছেন, তাঁরাও লাভবান হবেন।
এ দিকে, গত সপ্তাহে বাজার থেকে শেয়ার ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনফোসিস। নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত প্রতিটি শেয়ার তারা কিনে নেবে ১৮০০ টাকা দামে। সংস্থার শেয়ারের বাজারদর এখন ১৫২৪ টাকা। অর্থাৎ শেয়ার ফেরালে লাভ হবে অনেকটা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)