গোটা দুনিয়া এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। এক দিকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘর্ষ, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং শুল্ক যুদ্ধ। অন্য দিকে অমসৃণ সরবরাহ শৃঙ্খল, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অদূর ভবিষ্যতে এ সবের সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং আশঙ্কা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সঙ্কট বাড়তে পারে। ফলে এই সব কিছু মেনে নিয়েই চলতে হবে। সাজাতে হবে বিনিয়োগের পরিকল্পনা। পরিস্থিতি অনুযায়ী পাল্টাতে হবে লগ্নির কৌশল।
যাঁরা ঝুঁকি এড়াতে সুরক্ষিত প্রকল্প এবং নিশ্চিত স্থির আয় পছন্দ করেন, তাঁদের এখন সদা সক্রিয় থাকতে হবে। নজর রাখতে হবে সুদের ওঠাপড়ায়। মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা মাথা নামানোয় আরবিআই তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেটকে (যে সুদে তারা ব্যাঙ্ককে ধার দেয়) ৫.৫ শতাংশে নামিয়েছে। তাই ব্যাঙ্কগুলিও ঋণ ও জমায় সুদ ছেঁটেছে। মূল্যবৃদ্ধির আরও কমলে রেপো অগস্টে না হলেও অক্টোবরে ফের কমতে পারে। তখন ঋণ-জমায় সুদ আরও নামবে। কাজেই যাঁরা ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে লগ্নি করতে পারেননি, তাঁরা সুদ ফের পড়ার আগে কাজটা সারতে পারেন।
তবে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সুদ কমবেশি ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমলেও, সরকার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে এখনও হাত দেয়নি। যে কারণে ব্যাঙ্কের তুলনায় সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস, পিপিএফ, এমআইপি, এনএসসি, টাইম ডিপোজ়িটের মতো জনপ্রিয় প্রকল্পে সুদ অনেকটাই বেশি। যা পর্যালোচনা হবে আবার সেই অক্টোবরে। অর্থাৎ আপাতত সুদ কমার আশঙ্কা নেই। এখানেও লগ্নির কাজ সেরে ফেলার জন্য হাতে সময় রয়েছে। অবশ্য নভেম্বরে বিহারে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বরেও সুদ অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লগ্নির জন্য সময় মিলবে আরও। যাঁদের আয় ৭ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে, নতুন কর কাঠামোয় তাঁদের কর দিতে হবে না। তাই সুদ কমলেও, সেই খাতে আয় হওয়া পুরো টাকাটা হাতেই থাকবে। সরকার ভাগ বসাতে পারবে না।
অন্য দিকে, শেয়ার বাজার অস্থির, অনিশ্চিত। ফলে পা ফেলতে হবে সাবধানে। ভাল লাভের সন্ধান পেলে মাঝেমধ্যে তার কিছুটা তুলে নিতে হবে। চড়া বাজারে বিক্রি এবং পড়া বাজারে কেনার নীতি মেনে চলতে হবে। বাজারকে ভাল বুঝতে না পারলে সেখানে লগ্নি করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে। তবে এ ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বাগে রাখতে একলপ্তে বেশি টাকা না ঢেলে এসআইপি পদ্ধতিতে মাসে মাসে নিয়মিত বিনিয়োগ করা যেতে পারে। যাঁদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় প্রয়োজন, তাঁরা পড়তি বাজারে একলপ্তে লগ্নি করে তা থেকে মাসে মাসে নিয়মিত আয় নিতে পারেন। একে বলে ‘সিস্টেমেটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান’ (এসডব্লিউপি)। যদি ব্যাঙ্ক সুদের সম পরিমাণ টাকা (ধরা যাক ৬.৫%) তোলা হয় এবং বড় মেয়াদে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ১০-১২% রিটার্ন আসে, তবে টাকা তোলা সত্ত্বেও মূল লগ্নি ভাল রকম বাড়তে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে কারা লগ্নি করবেন? যাঁরা উঁচু হারে কর দেন, বেশি আয় এবং কম করের জন্যে ঝুঁকি নিতে রাজি, বড় মেয়াদে সম্পদ সৃষ্টি করতে চান, নিয়মিত আয় না হলেও চলে এবং যাঁরা উৎসে কর কাটা (টিডিএস) এড়াতে চান— তাঁদের জন্যে এই দুই লগ্নি উপযুক্ত। সিংহভাগ স্থির আয় প্রকল্পে সর্বাধিক ৩০% এবং সারচার্জ সমেত তার থেকেও অনেকটা বেশি কর বসতে পারে। আর বছরে শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের প্রথম ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ থাকে পুরোপুরি করমুক্ত। লাভ এর বেশি হলে তাতে কর বসে ১২.৫%। ফলে ঝুঁকি সত্ত্বেও বহু মানুষ শেয়ার এবং ফান্ডে ঝুঁকছেন।
অনিশ্চিত বাজারে তহবিলের একাংশ লগ্নি করা যায় সোনা, রুপো এবং সরকারি-বেসরকারি বন্ডে। আগে সোনা এবং সেনসেক্স প্রায় গায়ে গায়ে চলত। অনিশ্চিত দুনিয়ায় হলুদ ধাতু এগিয়ে গিয়েছে। সেনসেক্স ৮২ হাজারের আশেপাশে। ১০ গ্রাম খুচরো সোনা (২৪ ক্যারাট) ৯৮,৭০০ টাকা। কর নিয়ে লক্ষ টাকার বেশি। এক লাখি রুপোও। লগ্নির জন্যে সোনা এবং রুপোর ইটিএফ কেনা যায়। এ ছাড়া বাজার থেকে কেনা যেতে পারে ভাল রেটিং এবং ইল্ডযুক্ত বন্ডও।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)