Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জেনে বুঝে সোনা

আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই বাংলা নববর্ষ। শুরু হয়ে যাবে বিয়ের মরসুম। আর বিয়ে যদি বাড়ির কারও হয়, তা হলে তো কথাই নেই। কষ্ট করে হলেও সোনার গয়না দিতে হবে! কিন্তু গয়না কেনার আগে তার খুঁটিনাটি জেনেছেন তো? মনে আছে তো, এখন সোনা কিনলে জিএসটি দিতে হয়? সেই সমস্ত খুঁটিনাটি জানাচ্ছে বিষয় আশয়আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই বাংলা নববর্ষ। শুরু হয়ে যাবে বিয়ের মরসুম। আর বিয়ে যদি বাড়ির কারও হয়, তা হলে তো কথাই নেই। কষ্ট করে হলেও সোনার গয়না দিতে হবে! কিন্তু গয়না কেনার আগে তার খুঁটিনাটি জেনেছেন তো? মনে আছে তো, এখন সোনা কিনলে জিএসটি দিতে হয়?

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩৯
Share: Save:

লগ্নির মাধ্যম হিসেবে কাগুজে সোনার কথা আমরা ইদানিং প্রায়ই শুনি। এটা হয়তো ঠিকও যে রাখার সমস্যা, হারানোর ভয় সেগুলিতে নেই। নিশ্চিত রিটার্নও কিছু ক্ষেত্রে মেলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গয়না সোনার প্রতি আমাদের আকর্ষণ চিরন্তন। অনেকে মনে করেন, কাছের মানুষের বিয়ে মানেই সোনার গয়না দিতে হবে। আবার অনেকের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে সোনা কখনও ডোবায় না। তার দাম বাড়তেই থাকে। তাই ঘরে অল্প হলেও সোনার বার বা গয়না রাখাকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে ভাবেন তাঁরা।

তাই এমনিতে আবেদন ও আবেগের দিক দিয়ে দেখলে গয়না বা ধাতব সোনা আমাদের অনেক কাছের ঠিকই। কিন্তু মজুরি, বিক্রির সমস্যা দেখলে লগ্নির ক্ষেত্রে ততটা না-ও হতে পারে। বিশেষ করে গয়না বা সোনার বিস্কুট চুরি যাওয়ার ভয় থাকে, বাড়িতে রাখার ঝক্কিও কম নয়। তা-ও যদি একান্তই পাকা সোনা (বিস্কুট বা কয়েন) এবং গয়না কিনতে চান, জেনে রাখুন তার সুবিধা-অসুবিধাগুলিও।

কেন ধাতব সোনা?

পাকা সোনা (বিস্কুট, বার বা কয়েন) এবং গয়না সোনায় টাকা ঢালার একাধিক কারণ রয়েছে—

• ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে হবে। সেই জন্য তার ছোটবেলা থেকেই অল্প অল্প করে সোনা কেনা উচিত বলেই ভাবেন বাবা-মায়েরা। কারণ পরে দাম আরও বাড়বে। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির কারও বিয়েতে সম্মান বজায় রাখতে সোনার গয়না কিনে দেন অনেকে। তা পকেটে যতই চাপ পড়ুক না কেন!

• আগেকার দিনে গোল্ড ইটিএফ, গোল্ড ফান্ড, গোল্ড বন্ড ও গোল্ড মনিটাইজেশনের মতো কাগুজে সোনায় লগ্নির প্রকল্প ছিল না। তাই ছোঁওয়া যাবে, এমন সোনাই ছিল হলুদ ধাতুটিতে লগ্নির একমাত্র পথ। ফলে মানুষ তা কিনতেনও বেশি করে।

• সাদা-কালো সিনেমায় দেখা দৃশ্য সহজে ভোলার নয়। যেখানে সংসারের প্রয়োজনে আলমারি থেকে শেষ সম্বল হিসেবে তুলে রাখা সোনার গয়না বার করে দিচ্ছেন পরিবারের মহিলা। এটাই সোনার গয়না কেনার অন্যতম আকর্ষণ, বিশেষত মধ্যবিত্তের কাছে। মনে করা হত, দরকারের সময়ে হাতে থাকা সোনা বিক্রি করেই সামাল দেওয়া যাবে আর্থিক সঙ্কট। হাল ফিরবে সংসারের। একেবারে বিক্রি না করে, রাখা যাবে বন্ধকও। পরে ছাড়িয়ে আনলেই হল। তাই বিপদের সঞ্চয় হিসেবে সোনা কিনে ঘরে রাখার প্রবণতা ছিল।

অর্থাৎ, লগ্নি হোক বা অনুষ্ঠান, পাকা সোনা বা তার গয়নার কদর ভারতীয়দের মধ্যে বরাবরের।

রাখার ঝক্কি

সব জিনিসেরই কিছু না কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। ধাতব সোনাও ব্যতিক্রম নয়। বিপদের বন্ধু হিসেবে তা কিনলেও, এর সবচেয়ে বড় সমস্যা সেগুলি সুরক্ষিত রাখা। কারণ বাড়িতে রাখলে চুরি যাওয়ার ভয় থাকে। ফলে তা রাখতে হয় ব্যাঙ্কের লকারে। কিন্তু সে জন্য আবার নির্দিষ্ট সময় অন্তর গুনতে হয় লকার ভাড়া।

তা হলে উপায়?

ঘুম ওড়ার ভয়ে কি তা বলে সোনা কিনবই না? তা ঠিক নয়। তবে তা কেনার আগে লকারের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক। আর তা যেন কাছাকাছি হয়। কারণ, অনেক সময়েই দেখা যায়, ব্যাঙ্কের যে শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখানে লকারের ব্যবস্থাই নেই। আবার কখনও তা থাকলেও, খালি পাওয়া যায় না। আবার দূরে কোনও ব্যাঙ্কে বয়ে নিয়ে যাওয়াও সমস্যা। রাস্তাঘাটে সোনা হারানোর ভয় থাকে।

নজরে কী কী?

অনেকেই বলেন, কম বয়সে সোনা কেনার কথা মানুষ খুব একটা ভাবেন না। বরং তা হয় বিয়ের বয়সে পৌঁছলে বা দায়দায়িত্ব মাথায় এলে। এটা কিছুটা ঠিক। তবে এক বার যদি মনস্থির করে যে ধাতক সোনা কিনবেন, তা হলে তার বাদবাকি খুঁটিনাটিগুলি জেনে রাখুন। যার মধ্যে রয়েছে—

শুদ্ধতা

কোন ধাতু কতটা শুদ্ধ, তা মাপার নির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে। সোনার ক্ষেত্রে ক্যারাট হিসেবে এর বিচার হয়। সাধারণত যে ক্যারাটের সোনা পাওয়া যায়, সেগুলি হল—

২৪ ক্যারাট: নিরেট সোনা বা পাকা সোনা। শুদ্ধতা ৯৯.৯%। সাধারণত সোনার বিস্কুট, কয়েন, বার তৈরি হয় এগুলি দিয়ে।

২২ ক্যারাট: মূলত গয়না তৈরিতে ব্যবহার হয় এই সোনা। যাতে ২২ ভাগ থাকে বিশুদ্ধ সোনা। শুদ্ধতা ৯১.৬%।

১৮ ক্যারাট: এমনিতে হিরের গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে সোনা থাকে ১৮ ভাগ, ৬ ভাগ অন্য ধাতু। শুদ্ধতা ৭৫%।

১৪ ক্যারাট: এখন ১৪ ক্যারাট সোনাতেও গয়না বানানো শুরু হয়েছে। তা ছাড়া ফাউন্টেন পেনের নিবের মতো কিছু কিছু অ্যাকসেসরিজে ব্যবহার হয়।

কেনা-বেচা কোথায়

• পাকা সোনা কেনা যায় মূলত ব্যাঙ্ক বা ট্রেডিং সংস্থা ও কিছু কিছু সোনা বিপণি থেকে। আর গয়না সোনা কেনার জন্য যেতে হবে দোকানেই।

• এখনকার নিয়ম অনুসারে ২ লক্ষ টাকার কম সোনার গয়না নগদে কেনা যায়। সে ক্ষেত্রে লাগে না প্যানও।

• তার বেশি অঙ্কের গয়না বা বিস্কুট, কয়েন কিনতে টাকা দিতে হয় কার্ডে, নেট ব্যাঙ্কিংয়ে অথবা চেকে। তাই কত টাকার গয়না কিনবেন, তা আগে থেকে আন্দাজ করে সেই মতো টাকা পয়সার ব্যবস্থা করতে হবে। চেক দিলে দেখে নিতে হবে অ্যাকাউন্টে যেন টাকা থাকে।

• যেখান থেকেই কিনুন না কেন, দেখে নিতে হবে পাকা রসিদ। শুদ্ধতার প্রমাণপত্র (যদি সোনার সঙ্গেই হিরে থাকে, তা হলে সেটি আসল কি না, তার সার্টিফিকেটও দেখে নিন)।

• পাকা সোনার উপরে ৩% হারে জিএসটি দিতে হয়। আবার গয়না কিনলে, সোনার দামের সঙ্গে মজুরি যোগ করে যে অঙ্ক হয়, তার উপরে ওই একই হারে কর বসে। তাই সোনার মূল দামের সঙ্গে কতটা মজুরি আর কর বসছে, তা ভাল করে দেখুন।

• পাকা রসিদ পাচ্ছেন কি না, দেখুন। যে বিপণি থেকে গয়না কিনছেন, তার জিএসটি নম্বর রসিদে লেখা রয়েছে কি না, দেখতে হবে তা-ও।

বিক্রি করতে চাইলে

নকশা পুরনো হয়েছে মনে করলে অথবা কোনও কারণে টাকার দরকার হলে আমরা জমা সোনা বিক্রির কথা ভাবি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তা সেগুলি মাথায় রাখুন—

• ব্যাঙ্কে পাকা বা গয়নার সোনা বিক্রি করা যায় না। আবার বেশিরভাগ দোকানই বিক্রির বদলে, পাকা সোনা ভাঙিয়ে নতুন করে গয়না তৈরি অথবা পুরনো সোনার গয়না বদলানোর উপরে জোর দেয়। ফলে সোনা বিক্রি করবেন নাকি ভাঙিয়ে গয়না গড়বেন, তা আগে ঠিক করুন।

• সোনার গয়না বিক্রির সময়ে মজুরি, খাদ ইত্যাদি বাদ দিয়ে সোনার ওজন এবং দাম হিসেব হয়। ফলে অনেকটা টাকাই পাওয়া যায় না। তাই প্রথমেই দেখে নিন গয়না কেনার সময়ে যে নকশা পছন্দ করছেন, তাতে কতটা শুদ্ধ সোনা আসছে। সেটি তৈরি করতে কতটা মজুরি লাগবে এবং তাতে খাদই বা কতটা রয়েছে।

নেওয়া যায় ঋণও

সোনা একেবারে বিক্রির পথে না হেঁটে তা বন্ধকও রাখা যায়। এ জন্য—

• যেতে হয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) কাছে।

• নির্দিষ্ট নিয়ম মানলে, মেলে ঋণ।

• সাধারণত সোনার দামের একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক পর্যন্ত ধার পাওয়া যায়। ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতা সংস্থা হিসেবে তা আলাদা হতে পারে। তাই কত টাকা পাওয়া যাবে, তা দেখে নিন।

• অন্যান্য ঋণের মতোই মাসে মাসে কিস্তিতে ধার শোধ করতে হয়।

• ঋণ শোধ হলে ফেরত মেলে জমা রাখা সোনা।

আর কর?

• বর্তমান নিয়ম অনুসারে, অবিবাহিত মহিলাদের ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত এবং বিবাহিত মহিলাদের ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনা স্ত্রীধন হিসেবে বিবেচ্য হয়। তাই ওই সোনার ক্ষেত্রে সাধারণত তা কোথা থেকে পাওয়া গেল

ইত্যাদি আয়কর সংক্রান্ত প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হয় না। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ ১০০ গ্রাম।

• উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনার পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, প্রশ্ন ওঠার কথা নয় তা নিয়েও।

• সোনা কেনার তিন বছরের মধ্যে সেটি বিক্রি করে মুনাফা হলে স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভকর দিতে হয়। তিন বছরের বেশি সময়ে সোনা ধরে রেখে বিক্রির পরে লাভ হলে লাগে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভকর।

অতঃকিম?

লগ্নির জন্য কিনবেন না মেয়ের বিয়ের জন্য, তার উপরেই নির্ভর করবে যে গয়না সোনা বাছবেন নাকি কাগুজে সোনা। কিন্তু তার আগে যদি কেনার বিষয়টা ভালমতো জেনে রাখা যায়, তা হলে সুবিধা আপনারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gold Gold Loan GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE