Advertisement
E-Paper

ভুল বুঝিয়ে বিক্রি, ক্ষুব্ধ ব্যাঙ্ক গ্রাহকেরা

হলদিয়ার বাদল হালদারের বয়স ৭৩। ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতে টাকা রাখতে গেলে তাঁকে ২০ বছরের এসআইপি করিয়ে দেন এক আধিকারিক। বোঝানো হয়, মুনাফার নিশ্চিত সুযোগ রয়েছে এতে।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৩
Share
Save

দিন মজুরের কাজ করেন কলকাতার অশোক ঘোষ। লেখাপড়া তেমন জানেন না। এক নাম করা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে ডেবিট কার্ড করিয়েছিলেন। পরে দেখা গেল, তাঁকে দেওয়া হয়েছে ক্রেডিট কার্ড। আবেদন করা সত্ত্বেও নানা অছিলায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিক সেটি বাতিল করেননি বলেই অভিযোগ। সম্প্রতি ওই ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক চার্জ মেটানোর জন্য অশোকবাবুকে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাঙ্ক।

হলদিয়ার বাদল হালদারের বয়স ৭৩। ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতে টাকা রাখতে গেলে তাঁকে ২০ বছরের এসআইপি করিয়ে দেন এক আধিকারিক। বোঝানো হয়, মুনাফার নিশ্চিত সুযোগ রয়েছে এতে। পরে অবশ্য বাদলবাবু বুঝেছেন, এই বয়সে ২০ বছরের এসআইপি করা উচিত হয়নি। প্রকল্পটি বন্ধ করেছেন তিনি।

অশোকবাবু বা বাদলবাবুর মতো অসংখ্য গ্রাহকের অভিযোগ, টাকা জমা, অ্যাকাউন্টে লেনদেন বা অন্য কোনও কাজে ব্যাঙ্কে গেলে বহু ক্ষেত্রেই ‘ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা’ করার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক গ্রাহকদের। কেউ যদি কোনও সঞ্চয় বা লগ্নি প্রকল্প খুলতে যান, তা হলে তো কথাই নেই। ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের পণ্য বিক্রির ‘ফাঁদে’ পড়ার ঝুঁকি তখন বেড়ে যায় আরও অনেক গুণ।

ব্যাঙ্ক সূত্রই জানাচ্ছে, কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় আধিকারিকেরা বিমা বা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রির নিশানা করছেন গ্রাহকদের একাংশকে। বিভিন্ন প্রকল্প কতটা ভাল বুঝিয়ে তৎক্ষণাৎ সই-সাবুদ করিয়ে নিচ্ছেন। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে স্রেফ ভুল বোঝানো হচ্ছে। রেখেঢেকে বলা হচ্ছে প্রকল্পের শর্তগুলি। বাড়তি আর্থিক চাপের কথা লুকিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে খারাপ বা অপ্রয়োজনীয় আর্থিক পণ্য। ভবানীপুরের পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আবেদন না করলেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২২৮ টাকা প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্পের প্রিমিয়াম বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছিল। অনুমতি ছাড়াই। অভিযোগ জানানোর পরে ব্যাঙ্ক অবশ্য টাকা অ্যাকাউন্টে ফিরিয়েছে। কিন্তু পারমিতার প্রশ্ন, “আমার সায় ছাড়া টাকা কাটা হল কী করে?’’

বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গ্রাহককে ভুল বুঝিয়ে পণ্য বিক্রির চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এই শিল্পেরই সংগঠন। ব্যাঙ্ক অফিসারদের ইউনিয়ন ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলছেন, ফি বাবদ আয় বাড়াতে বিমা বা ফান্ডের মতো তৃতীয় পক্ষ বা অন্য সংস্থার প্রকল্প বিক্রি করে ব্যাঙ্ক। গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলানো ইত্যাদিও রোজগার বৃদ্ধির পথ। প্রায় সবক’টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাই সেগুলির বিক্রির জন্য আধিকারিকদের উপর চাপ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘অস্বাভাবিক টার্গেট দেওয়া হয়। এই চাপ কর্তৃপক্ষ স্তর থেকে পৌঁছয় শাখা স্তরের অফিসার পর্যন্ত। কোভিডের পরে ঋণের চাহিদা কমায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’’ বিমা বা ফান্ড বেচে কিছু অফিসার ঘুরপথে বাড়তি লাভের চেষ্টা করেন, অভিযোগ সঞ্জয়ের। তাঁর দাবি, ‘‘ওই অফিসারদের উপহার, ভ্রমণ, বড় হোটেলে খাওয়ার প্রলোভন দেয় সংস্থাগুলি। ফলে দরকারে গ্রাহককে ভুল বুঝিয়েও পণ্য গছানোর চেষ্টা হয়। আমরা এর তীব্র বিরোধী।’’ তাঁর দাবি, স্থায়ী আমানত করতে না দিয়ে অন্য সংস্থা প্রকল্প নিতে বাধ্য করাও ব্যাঙ্কে নগদের জোগানে ঘাটতির অন্যতম কারণ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের যৌথ নাগরিক মঞ্চ ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’-এর ষুগ্ম আহ্বায়ক সৌম্য দত্ত জানান, “ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের সঙ্গে এই ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে লিখিত ভাবে দাবি জানিয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RBI

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy