সরকারি হিসেব বলছে, বীরভূমের দেউচা পাঁচামি খনিতে মজুত প্রায় ২১০.২০ কোটি টন কয়লা। যা একক ভাবে উত্তোলনের অধিকার শুধু পশ্চিমবঙ্গকেই দিয়েছে কেন্দ্র। অথচ এক বছরের বেশি সময় বয়ে গেলেও রাজ্য সেই কাজে এগোতে পারছে না। কারণ, কয়লা তোলার চুক্তি করার জন্য কয়লা মন্ত্রকের কাছ থেকে চূড়ান্ত বরাদ্দের চিঠিই (ফাইনাল অ্যালটমেন্ট লেটার) এসে পৌঁছয়নি তাদের হাতে। ফলে আটকে রয়েছে খনন।
এই পরিস্থিতিতে চিঠির দাবিতে কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। নিয়মিত কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে নবান্ন। যাতে বছর দুই-আড়াইয়ের মধ্যে কয়লা তোলার কাজ শুরু করা যায়। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্রের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিটি দ্রুত হওয়া জরুরি। তবেই কয়লা তোলা শুরু করা যাবে। জ্বালানির জোগান আরও বাড়বে রাজ্যের বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, তার উপরে চুক্তির পরে খনি এলাকা জুড়ে আগে সমীক্ষা চালিয়ে পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। পাঠাতে হবে কয়লা মন্ত্রকের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের ছাড়পত্রের জন্যও আবেদন করতে হবে। এ সবেও খরচ হবে বেশ খানিকটা সময়। তাই কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছে রাজ্য।
ইতিমধ্যেই খনিটি থেকে দ্রুত কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের দাবি, প্রকল্পে ১০-১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নির পাশাপাশি ১ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানও হবে।
পর্যায়ক্রম
• ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ- সহ ছ’টি রাজ্য ও এক সংস্থার নামে দেউচা পাঁচামি খনিটি
বরাদ্দ করে কেন্দ্র।
• গোড়ায় ঠিক হয়েছিল, খনিটি পশ্চিমবঙ্গে বলে কয়লা তুলবে এ রাজ্যই।
• ২৮% কয়লা নেবে পশ্চিমবঙ্গ, বাকিটা ভাগ করে দেবে অন্যদের মধ্যে।
• পরে সিদ্ধান্ত বদলে ছ’টি রাজ্য ও এক সংস্থা মিলে তৈরি করা হয় একটি যৌথ সংস্থা।
• কিন্তু খনি প্রকল্প ঘিরে নানা ব্যাপারে মতপার্থক্য দেখা দেয় ওই সাত অংশীদারের মধ্যে।
• পশ্চিমবঙ্গ দেউচা পাঁচামি থেকে একক ভাবে কয়লা তুলতে তখন আবেদন করে কেন্দ্রের কাছে। সায়ও মেলে।
• কিন্তু এখনও খনি বরাদ্দের চূড়ান্ত চিঠি আসেনি। ফলে বছর পেরিয়েও আটকে খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ।
বীরভূমে মহম্মদবাজার ব্লকের দেউচা পাঁচামি কয়লা খনিটি প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছ’টি রাজ্য ও এক সংস্থাকে দিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্যগুলি একসঙ্গে বেঙ্গল বীরভূম কোলফিল্ডস নামে সংস্থা গড়ে। কিন্তু প্রকল্পের নানা বিষয়ে ঐকমত্যের অভাবে তৈরি হয় জটিলতা। পরে রাজ্যের দাবি মেনে কেন্দ্র জানায়, দেউচা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নামেই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সূত্রের দাবি, কয়লা তোলার জন্য চুক্তিও জরুরি।
শুরুতে অন্য রাজ্যগুলিও দেউচায় পুঁজি ঢেলেছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ খনির একক মালিকানা হাতে পেতেই সেই খাতে যার যা পাওনা মিটিয়েছে। বেঙ্গল বীরভূম কোলফিল্ডস সংস্থাটি এখন পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের পূর্ণ সহযোগী সংস্থা। বাইরের জটিলতাগুলি মিটে যাওয়ায় রাজ্য এখন চাইছে দ্রুত কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তিটি সেরে ফেলতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy