Advertisement
E-Paper

আম-আদমির মন জয়ে মরিয়া মোদী

আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্প ঘোষণার ঢাকে কাঠি পড়ছে শনিবার। কলকাতার বুকে। সরকারের বর্ষপূর্তির মুখে দাঁড়িয়ে গঙ্গাপাড়ের এই শহরেই তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ওই তিন প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করতে অনেক আগে থেকেই প্রশাসনের অন্দরে প্রস্তুতির দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৪:২৬

আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্প ঘোষণার ঢাকে কাঠি পড়ছে শনিবার। কলকাতার বুকে। সরকারের বর্ষপূর্তির মুখে দাঁড়িয়ে গঙ্গাপাড়ের এই শহরেই তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ওই তিন প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করতে অনেক আগে থেকেই প্রশাসনের অন্দরে প্রস্তুতির দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। শুধু কর্পোরেট দুনিয়ার প্রিয়পাত্রের তকমা মুছে আম-আদমির মুখ হতে মরিয়া মোদীর তুরুপের তাস এখন এই তিন প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা, এবং অটল পেনশন যোজনা। ২৬মে সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির মুখে দাঁড়িয়ে এই তিন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা করবেন মোদী। তাঁর জমানায় এই প্রথম। মূল লক্ষ্য, সামান্য টাকায় সাধারণ মানুষকে বিমা ও পেনশনের সুবিধা দেওয়া। অনেকেই বলছেন, জমি-বিল নিয়ে সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইছেন বিরোধীরা। লেপ্টে দিতে চাইছেন গরিব-বিরোধী তকমা। মোদী-সরকারকে ‘স্যুট-বুটের সরকার’ বলে প্রতিপন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ফলে এই পরিস্থিতিতে আমজনতার জন্য গত এক বছরে কী কী কাজ হয়েছে, তা সামনে রেখেই প্রচারে যেতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেই কারণেই এই তিন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পকে সফল করতে প্রায় পুরো প্রশাসনকেই কাজে নামিয়েছেন মোদী।

শুধু রাজনৈতিক ফায়দা তোলা নয়। দেশের অর্থনীতির ছবি বদলাতেও যে এই তিন প্রকল্পকে দিল্লি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে, তা স্পষ্ট কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিষেবা সচিব হাসমুখ আধিয়ার কথাতেই। তিনি মনে করেন, জন-ধন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় করিয়ে দেওয়া গিয়েছে। এ বার তাঁদের নিয়মিত ব্যাঙ্কে যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করা যাবে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির হাত ধরে।

শুক্রবার কলকাতায় আধিয়া জানান, জন-ধন প্রকল্পে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা ৫৭% গ্রাহকের অ্যাকাউন্টেই কোনও টাকা জমা নেই। কিন্তু এই তিন প্রকল্পে প্রিমিয়ামের টাকা কাটা হবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকেই। আধিয়ার দাবি, প্রতি বছর অন্তত প্রিমিয়ামের টাকা ভরতে ব্যাঙ্কে যাবেন গ্রাহকরা। ফলে ব্যাঙ্কে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে তাঁদের। সেই কারণেই বিমা প্রকল্পের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করতে তাই চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না কেন্দ্র। যা পরিস্থিতি, তাতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রকের অফিসারদের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। অর্থ মন্ত্রকে রীতিমতো খোলা হয়েছে ‘ওয়ার রুম’। সেখানে বসে সারা দেশের প্রস্তুতির উপর নজর রাখছেন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা। খোদ প্রধানমন্ত্রীই লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন যে, কলকাতায় প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনার আগেই যেন তার আওতায় চলে আসেন ৪০ কোটি মানুষ। যাতে সরকারের বর্ষপূর্তির সময়ই এই প্রকল্পগুলির সাফল্য তুলে ধরা সম্ভব হয়। এমনকী প্রকল্পগুলি সম্পর্কে আমজনতার সচেতনতা বাড়াতে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করবে কেন্দ্র।

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলিও। জন-ধন যোজনায় খোলা ১৫ কোটি অ্যাকাউন্টে বিমার সুবিধা পৌঁছনোর কাজ চলছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তাই স্বীকার করছেন, ‘‘দেশে প্রায় ৮০ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মধ্যে ৪০ কোটিতে এত কম সময়ে এই বন্দোবস্ত করা চাট্টিখানি কাজ নয়।’’

অটল পেনশন যোজনার মূল লক্ষ্য মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা। হাসমুখের দাবি, এঁদের উৎসাহ দিতে চলতি বছরে প্রকল্পে যোগ দিলে, প্রিমিয়ামের ৫০% (বছরে এক হাজার টাকা পর্যন্ত) পাঁচ বছর অবধি দেবে কেন্দ্র। শর্ত সাপেক্ষে সংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্তরাও এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারবেন। তবে অন্য পেনশন প্রকল্প চালু থাকলে, এই সুবিধা মিলবে না।

এই প্রকল্পে অন্তত ২০ বছর প্রিমিয়াম দিতে হবে। পেনশন পাওয়া যাবে ৬০ বছরের পর। থাকছে বিমার সুবিধা। আধিয়ার দাবি, প্রকল্পে জমা তহবিলে অন্তত ৮% রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে কেন্দ্র।

এই প্রথম দিল্লি থেকে না-করে এ ধরনের প্রকল্প চালু হচ্ছে রাজ্যে-রাজ্যে। মন্ত্রীরা ছড়িয়ে পড়েছেন সারা দেশে। মোদী নিজে কলকাতায়। দেশের ১১৫টি জায়গা থেকে একসঙ্গে প্রকল্পের সূচনা হবে। আর সেই সূচনাতেই সাফল্য ঘোষণার ভিত তৈরি করতে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েনি মোদী সরকার।

narendra modi kolkata bjp prime minister bank new delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy