Advertisement
E-Paper

কুবের উবাচ

একটা সময় ছিল, যখন ছেলেরাই চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে বলে ভাবত সবাই। কিন্তু যুগ বদলেছে। সংসারের দায়িত্ব নিতে এখন মেয়েরাও পিছপা নন।

শৈবাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫০

একটা সময় ছিল, যখন ছেলেরাই চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে বলে ভাবত সবাই। কিন্তু যুগ বদলেছে। সংসারের দায়িত্ব নিতে এখন মেয়েরাও পিছপা নন। পাশাপাশি, লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে এক-দু’টাকা করে জমানোর অভ্যেস তাঁরা নিয়ে এসেছেন প্রথাগত লগ্নির জায়গাতেও। যা আদতে সংসারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই কাজে লাগছে। প্রীতিও সে রকম এক জন।

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। চোখে স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু বাস্তব বুদ্ধি তার থেকেও বেশি। ফলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তুলনায় কম। দেখে ভাল লাগল এত কম বয়সেও নিজের প্রোফাইলের সুবিধা-অসুবিধাগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিছু প্রশ্ন তিনি নিজেই করেছেন, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করব। এর সঙ্গেই তাঁর প্রোফাইলের সামান্য যা সমস্যা আমার চোখে পড়েছে, তা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করব।

প্রথম কাজ জীবনবিমা

প্রীতি বছরে জীবনবিমার প্রিমিয়াম দেন প্রায় ৭১ হাজার টাকা। সাধারণত এই ধরনের এনডাওমেন্ট প্রকল্পে মেয়াদ শেষে যে টাকা পাওয়া যায়, তার অঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় কম হয়। পাশাপাশি, বিমামূল্যও কম। তাই এখন যে বিমা দু’টি চলছে, তা সারেন্ডার করুন। যদি দেখেন জমা টাকার চেয়ে কম অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তা হলে তিন বছর প্রিমিয়াম দেওয়ার পরে তা পেড-আপ করে দিন।

সংসারে নিয়মিত টাকা দেন প্রীতি। সে কথা মাথায় রেখে বলব, জীবনবিমা প্রকল্পগুলি বন্ধের পরে প্রথম কাজই হল তাঁর নিজের জন্য বড় অঙ্কের টার্ম পলিসি কেনা। তাঁর বয়সে ৫০ লক্ষের টার্ম পলিসির প্রিমিয়াম পড়বে বছরে প্রায় ১০ হাজার টাকা। সঙ্গে দুর্ঘটনা রাইডার থাকলে আরও কিছু টাকা বেশি পড়তে পারে।

স্বাস্থ্যবিমা

প্রীতি ঠিকই ভেবেছেন যে, সবচেয়ে আগে তাঁর এবং বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যবিমা করানো প্রয়োজন।

• প্রথমেই নিজের এবং দিদির জন্য দু’টি আলাদা বিমা কিনতে হবে তাঁকে। পাশাপাশি, বাবা-মায়ের জন্য আলাদা বিমা কিনুন।

• বাবা-মায়ের বিমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কত টাকা পাওয়া যাবে, তা দেখুন। তাঁদের ক্ষেত্রে পরে বিমার অঙ্ক বাড়ানোর সুবিধা তিনি না-ও পেতে পারেন। ফলে প্রথমেই বড় অঙ্কের বিমা করাতে হবে।

• নিজের জন্য চাইলে ৩ লক্ষ বা ৫ লক্ষ টাকার বিমা দিয়ে শুরু করতে পারেন। পরে কিন্তু তা অবশ্যই বাড়াতে হবে।

• আমাদের অনেকেরই ধারণা রয়েছে, সরকারি বিমা সংস্থার প্রকল্পই বেশি ভাল। কিন্তু এমনটা না-ভেবে বরং বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প খতিয়ে দেখুন এবং তাদের মধ্যে তুলনা করুন।

• শুধুমাত্র প্রিমিয়ামের অঙ্ক দেখে বিমা বাছবেন না। সুবিধা-অসুবিধা খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিন।

ফান্ডে লগ্নি ছড়ান

মাসে ১৬ হাজার টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করেন প্রীতি। তা অবশ্যই প্রশংসার। এখন তাঁর উপর পরিবারের দায়িত্ব সে ভাবে নেই, ফলে এটাই সেরা সুযোগ কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে সঞ্চয় করার। এ ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ তাঁকে আমি দিতে চাই—

• তিনি মাত্র দু’টি সংস্থার ফান্ডেই লগ্নি করেছেন। এটা আমার প্রথম আপত্তির জায়গা। আমি এটা বলছি না যে, সংস্থা দু’টি খারাপ। কিন্তু আরও কয়েকটি ফান্ড সংস্থাকে বাছতে পারলে লগ্নি ছড়াতে সুবিধা হবে।

• সংস্থা দু’টি হলেও, প্রীতির ফান্ড কিন্তু অনেকগুলি। এখন দেখতে হবে সেগুলি কী কী। একই ধরনের প্রকল্প থাকলে, তা থেকে লগ্নি সরিয়ে অন্য ধরনের ফান্ডে রাখতে হবে।

• টাকা খাটানোর আগে দেখে নিন ফান্ড ম্যানেজারদের ইতিহাস, দীর্ঘমেয়াদে ফান্ডের অতীত রিটার্ন, ঝুঁকি কতটা ইত্যাদি তথ্য।

• প্রীতির বয়স কম। ফলে সামান্য ঝুঁকি নিয়েও তাঁর উচিত শেয়ার বাজার ভিত্তিক ফান্ডে টাকা খাটানো। এতে দীর্ঘমেয়াদে তহবিল বাড়াতে সুবিধা হবে। ভাল হয় যদি ফান্ডে টাকা রাখতে পারেন এ ভাবে—

লার্জ ক্যাপ: ২৫%

ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি: ৪০%

মিড এবং স্মল ক্যাপ: ২০%

সেক্টর ফান্ড: ১৫%

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অনুপাতও বদলে যাবে। তখন ঋণপত্র নির্ভর ফান্ড আনতে পারেন পোর্টফোলিওতে।

বিয়ের খরচ

• প্রীতি নিজের বিয়ের পরিকল্পনার কথা কিছু জানাননি। আগামী কয়েক বছরে বিয়ে করলে কিন্তু ফান্ডের টাকা কাজে লাগাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তার পর নতুন করে এসআইপি শুরু করতে হবে তাঁকে।

• দু’টি জীবনবিমা বন্ধ করে যে টাকা আসবে হাতে, তা-ও বিয়েতে ব্যবহার করতে পারেন। আর প্রিমিয়াম দিতে যে টাকা মাসে মাসে রেকারিং করেন, তা এসআইপি করতে পারেন। তহবিল বাড়াতে এই অর্থ কাজে লাগবে।

অতিরিক্ত কর বাঁচানো

বছরে ১.৫০ লক্ষ টাকা পিপিএফে রাখছেন। ফলে সেখানেই আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় প্রীতির পুরো দেড় লক্ষ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। এর বাইরেও জীবনবিমা এবং পিএফ রয়েছে। কিন্তু সেই সুবিধা তিনি পাচ্ছেন না। ৮০সি ধারার বাইরে যদি কর বাঁচাতে হয়, তা হলে দু’টি পথ তাঁকে সাহায্য করবে—

১) টাকা রাখতে পারেন এনপিএসে। এ ক্ষেত্রে ওই দেড় লক্ষ টাকার বাইরে বাড়তি ৫০ হাজার টাকা লগ্নিতে করছা়ড় পাবেন। পাশাপাশি, এনপিএস অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০% পর্যন্ত তোলা টাকা করমুক্ত থাকবে।

২) কাজে আসবে স্বাস্থ্যবিমা। নিজের তো বটেই, বাবা-মায়ের বিমার টাকার উপরেও নির্দিষ্ট অঙ্ক পর্যন্ত করছাড় পাবেন তিনি।

লগ্নির পথ

তহবিল গড়ে তোলার জন্য লগ্নির পথ ঠিক কী হওয়া উচিত, তা চিঠিতে জানতে চেয়েছেন প্রীতি। সে জন্য—

১) প্রথমেই নিজের লক্ষ্য স্থির করুন।

২) খাতায় লিখে ফেলুন কোনটা এখনই দরকার, আর কোনটার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যগুলিকে সালের ভিত্তিতে আলাদা করুন।

৩) নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে হলে কত টাকা প্রয়োজন হবে, মূল্যবৃদ্ধি ধরে মোটামুটি ভাবে তা হিসাব করুন।

৪) বর্তমানে আয় ও ব্যয়ের হিসাব করে দেখুন কত টাকা লগ্নি করতে পারছেন। আর কত হাতে থাকছে।

৫) এ বার সেই টাকা কোন প্রকল্পে কী ভাবে ছড়ালে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে, তা দেখুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।

৬) নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং কত দিন ধরে লগ্নি করতে হবে, তা হিসাব করে সঞ্চয় শুরু করুন।

৭) দু’তিন বছর পর পর লগ্নির ধরন খতিয়ে দেখুন এবং প্রয়োজনে পাল্টান।

মনে রাখবেন, প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। না হলে যে প্রকল্পেই টাকা রাখুন না কেন, তা আসল সময়ে কাজে আসবে না।

নিয়মিত আয়ের লক্ষ্যে

পরিবারের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য, ফ্ল্যাট কিনে তা ভাড়া দেওয়ার কথা ভাবছেন প্রীতি। তা মোটেই ভাল উপায় নয়। কারণ, তাঁদের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফলে মাথা গোঁজার সমস্যা নেই। তাই শুধু আয় বাড়াতে ফের নতুন ফ্ল্যাট কেনার মানে হয় না। পাশাপাশি, টাকা ঢাললাম আর ফ্ল্যাট কেনা হয়ে গেল, তা তো নয়। বরং এ জন্য বিশাল ঋণের বোঝা চাপবে তাঁর মাথায়। ফলে কমবে অন্যান্য খাতে লগ্নির সুযোগ।

পাশাপাশি, রয়েছে ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। দিতে হবে কর। সব হিসাব মিলিয়ে আদতে দেখা যাবে ভাড়া থেকে আয়ের তুলনায় খরচ অনেক বেশিতে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে এই পরিকল্পনা চাহিদামতো ফল
দেবে না।

এর থেকে মিউচুয়াল ফান্ড, পিপিএফ ইত্যাদি খাতে লগ্নি করে তহবিল গড়ে তুলুন। পরে সেই টাকা দিয়ে অ্যানুইটি কিনে সেখান থেকে নিয়মিত আয়ের কথা ভাবতে হবে তাঁকে। যা পরিবার তো বটেই, প্রীতির অবসর জীবনেও কাজে লাগবে।

গাড়ি কেনা

এই মুহূর্তে যখন প্রয়োজন নেই, তখন আর এ নিয়ে ভাববেন না। প্রয়োজনে কয়েক বছর পরে ভেবে দেখা যাবে।

প্রীতির বয়স কম। হাতে সময় রয়েছে নিজের লগ্নি গুছিয়ে নেওয়ার। তিনি এক দম ঠিক পথে এগোচ্ছেন। সামান্য কিছু রদবদল করতে হবে, তা তিনি নিজেও জানেন। ফলে আমার মনে হয় না লক্ষ্যে পৌঁছতে খুব একটা অসুবিধা হবে। শুভেচ্ছা রইল।

অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত

(মতামত ব্যক্তিগত)

ছবি প্রতীকী

investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy