E-Paper

পাঁচ দিনে ওঠানামা বিস্তর, বাজার সর্বোচ্চ শিখরেই

এত উত্থান-পতনের পাশাপাশি বহু দিন মনে থাকবে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বাভাস এবং শেয়ার কেনার পরামর্শ। যার তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী শিবির।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৮:৪৬

—প্রতীকী চিত্র।

গত সপ্তাহটা ছিল চরম উত্তেজনায় ঠাসা। মাত্র পাঁচটি কাজের দিনে বাজার দেখেছে বড় আকারের চড়াই-উৎরাই। অনেকেই বহু দিন মনে রাখবেন এই বিশেষ সপ্তাহটিকে। কারণগুলি এক এক করে দেখে নেব।

শনিবার, ১ জুন সন্ধ্যায় ভোট শেষে প্রকাশিত হল একগুচ্ছ বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল। প্রত্যেকেই বিজেপি তথা এনডিএ-র ডালি ভরিয়ে দিল ৩৩৯ থেকে ৪০১টি আসন। একক ভাবে বিজেপি ৪০০ পেরোতে না পারলেও ফের মোদী সরকার যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ফিরছে, তাতে সন্দেহ রইল না। ফলে সোমবার বাজার খুলতে না খুলতে সেনসেক্স-নিফ্‌টির লম্বা লাফ। সমীক্ষা পছন্দ হওয়া ছাড়াও সূচক ছোটে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বাভাসকে মাথায় রেখে। ভোট চলাকালীন সাক্ষাৎকারে দু’জনেই বলেছিলেন, ৪ তারিখ ফল ঘোষণার পরে শেয়ার সূচককে আর ধরে রাখা যাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৪ জুন ভোট গণনার আগে লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনার কথা ভাবতেও বলেছিলেন। বহু মানুষ সেটাই করেন। ফলে গণনার আগের দিন, ওই সোমবার ২৫০৭ পয়েন্ট লাফিয়ে সেনসেক্স ছোঁয় রেকর্ড উচ্চতা (৭৬,৪৬৯)। ৭৩৩ বেড়ে নতুন নজির (২৩,৩৬৪) গড়ে নিফ্‌টিও।

মঙ্গলবার অবশ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে সমীক্ষার ফল। অনেক রাজ্যেই ‘ইন্ডিয়া’কে ভাল ফল করতে দেখা যায়। সমীক্ষার তুলনায় পিছিয়ে পড়ে বিজেপি। ফলে হতাশা চেপে বসে। আগের দিনের লাভের পুরোটা খুইয়ে বিপুল লোকসানের খাতায় চলে যায় গোটা বাজার। সোমবার লগ্নিকারীরা ১৩.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা লাভ করেছিলেন। মঙ্গলবার ৩১ লক্ষ কোটি টাকা হারান। সেনসেক্স নামে ৪৩৯০। নিফ্‌টি ১৩৭৯। তবে বুধবার ফের ঘুরে দাঁড়ায়, যখন বোঝা যায় বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও শরিকদের নিয়ে এনডিএ সরকার গড়তে সক্ষম। বুধ এবং বৃহস্পতিবার মসৃণ ভাবে সরকার তৈরির নিশ্চয়তা সেনসেক্সকে তোলে ২৯৯৫। ক্ষতি পূরণ না হলেও, লগ্নিকারীদের শেয়ার সম্পদের একাংশ ফিরে আসে।

শুক্রবারও উত্থান জারি ছিল। তবে তার মূল কারণ ছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি। কারণ তারা সুদ অপরিবর্তিত রাখলেও, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭% থেকে বাড়িয়ে করে ৭.২%। গত অর্থবর্ষে যা ছিল ৮.২%। ফলে তেতে ওঠে বাজার। সেনসেক্স ওঠে ১৬১৮। ৭৬,৬৯৩-এ পৌঁছে গড়ে নতুন নজির। বুধ থেকে তিন দিনে উত্থান মোট ৪৬১৩। সাপ্তাহিক হিসেবে নিট ২৭৩২।

এত উত্থান-পতনের পাশাপাশি বহু দিন মনে থাকবে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্বাভাস এবং শেয়ার কেনার পরামর্শ। যার তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী শিবির। বাজারকে মতামত দিয়ে যাঁরা প্রভাবিত করতে পারে (ফিনান্সিয়াল ইনফ্লুয়েন্সার), তাঁদের জন্য নিয়ন্ত্রক সেবি নির্দেশিকা তৈরি করছে। অনেকেরই অভিমত, এর অধীনে মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ আমলাদের রাখা উচিত। তাঁদের আনা উচিত সেবির প্রিভেনশন অব ইনসাইডার ট্রেডিং রেগুলেশন অর্থাৎ গোপন খবর ব্যবহার করে লেনদেনে সুবিধা নেওয়া বা দেওয়ার মতো বেআইনি আচরণ প্রতিরোধ আইনের আওতাতেও। কারণ শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন অপ্রকাশিত অনেক তথ্য তাঁদের জানা থাকে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বার শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী এবং নতুন মন্ত্রিসভা। মিলিজুলি সরকার গঠনে বাজারের প্রতিক্রিয়া আজ জানা যাবে। তবে বহু শেয়ার যুক্তিহীন ভাবে মাত্রাতিরিক্ত চড়া। ফলে পতনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Share Market Indian Economy BSE SENSEX

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy