Advertisement
০৩ মে ২০২৪

উড়াল পুল নির্মাতা সংস্থার শেয়ারে ধস

ধস নামল বিবেকান্দ রোড উড়াল পুলের নির্মাতা সংস্থা হায়দরাবাদের আইভিআরসিএলের শেয়ার দরে। কলকাতায় উড়াল পুল ভেঙে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুম্বই বাজারে হু হু করে নামতে থাকে সংস্থাটির শেয়ার দর। এক সময়ে তা পড়ে যায় ১১.৪৮ শতাংশ। পরে সামান্য উঠলেও দিনের শেষে ৫.৮৯ শতাংশ পড়ে সংস্থার দর এসে দাঁড়ায় ৫.৮৯ টাকায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৩
Share: Save:

ধস নামল বিবেকান্দ রোড উড়াল পুলের নির্মাতা সংস্থা হায়দরাবাদের আইভিআরসিএলের শেয়ার দরে। কলকাতায় উড়াল পুল ভেঙে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুম্বই বাজারে হু হু করে নামতে থাকে সংস্থাটির শেয়ার দর। এক সময়ে তা পড়ে যায় ১১.৪৮ শতাংশ। পরে সামান্য উঠলেও দিনের শেষে ৫.৮৯ শতাংশ পড়ে সংস্থার দর এসে দাঁড়ায় ৫.৮৯ টাকায়।

কলকাতায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকেই ভেঙে পড়ে উড়ালপুলটি। তার পর থেকে যত সময় গিয়েছে, ততই বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ১৮ জন মারা যাওয়ার খবর এসেছে। তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা। আহতের
সংখ্যাও শতাধিক।

বিবেকানন্দ রোড উড়াল পুল ভেঙে পড়ার ঘটনা সারা দেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও আইভিআরসিএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ঘটনার মধ্যে ভগবানের হাত দেখতে পেয়েছেন। সংস্থার অন্যতম মুখপাত্র কেপি রাও এ দিন উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনাকে ‘‘অ্যাক্ট অব গড’’ বলে
আখ্যা দিয়েছেন।

তবে কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুন, সংস্থাটি যে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে আইভিআরসিএল তীব্র আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। জমে উঠেছে পাহাড় প্রমাণ লোকসান। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী সংস্থার পুঞ্জীভূত লোকসানের বহর দাঁড়িয়েছে ১,৭৭৬ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৪-’১৫ সালে সংস্থাটি লোকসান করেছিল ৬৭২ কোটি টাকা। লোকসান অব্যাহত রয়েছে ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরেও। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩০৩.৮৪ কোটি টাকা।

পাশাপাশি, সংস্থার ঋণের বোঝাও কম নয়। মোট ঋণের পরিমাণ ৪,৯৯৪.৬৮ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই কিছু পাওনাদার সংস্থাটিকে গুটিয়ে ফেলার (ওয়াইন্ডিং আপ) আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন।

শুধু আর্থিক দিক দিয়েই যে আইভিআরসিএল সমস্যায় রয়েছে তা নয়। ইতিমধ্যেই নিজেদের বিভিন্ন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ না-করতে পারার বদনামও জুটেছে সংস্থার কপালে। যে কারণে আগামী দিনে তাদের শেয়ার দর আরও তলানিতে চলে যেতে পারে বলে মনে করছে শেয়ার বাজার মহল।

এ দিকে সার্বিক ভাবে ২০১৫-’১৬ সালটি ভারতের শেয়ার বাজারের পক্ষে ভাল যায়নি। ওই বছর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্সের পতন হয়েছে ২,৬১৫.৬৩ বা ৯.৩৬ শতাংশ। নিফ্‌টির পতন হয়েছে ৭৫২.৬০ পয়েন্ট বা ৯.৭২ শতাংশ। গত চার বছরের মধ্যে এতটা নামতে দেখা যায়নি শেয়ার সূচককে। সূচকের এতটা পতনের ফলে গত আর্থিক বছরে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীরা ৭ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ (মার্কেট ক্যাপ) খুইয়েছেন।

পাশাপাশি, ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে টাকার দামও। সারা বছরে ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম কমেছে ৩.৬১ টাকা বা ৫.৮৬ শতাংশ।

এক সময় ভারতের শেয়ার বাজারকে ৩০ হাজারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাদের অবদান ছিল সব থেকে বেশি, সেই বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও গত আর্থিক বছরে এ দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল। তবে বাজেটের পরে অবশ্য তার ফের ফিরে আসতে শুরু করেছে। গত অর্থবর্ষে ওই সব সংস্থা ১৮ হাজার কোটি টাকার লগ্নি তুলে নিলেও এই মার্চে ভারতে বাজারে তাদের বিনিয়োগ ২০ হাজার কোটির মতো।

এ ছাড়া, ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে শেয়ার বাজারের হাল খারাপ হওয়ার পিছনে কাজ করেছে আরও নানা কারণ। যেমন, ওই বছরই আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ প্রথম বার সুদের হার বৃদ্ধি করে। চিনের আর্থিক সমস্যার প্রভাবে বিশ্ব জুড়ে এক ধরনের মন্দার সৃষ্টি হয়। দেশে যে-সব আর্থিক সংস্কারের কথা শুরু থেকে বলে আসছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার, এখনও কার্যকর হয়নি
তার অধিকাংশও।

তবে নতুন আর্থিক বছর নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অধিকাংশই বেশ আশাবাদী। তাঁরা মনে করছে, আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলি কার্যকর হলে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কিছুটা কমালে, শেয়ার বাজারে সূচকের লম্বা দৌড় শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shares flyover collapse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE