কম সুদের জমানায় নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা অসংখ্য সুদ নির্ভর প্রবীণ নাগরিকের। ব্যাঙ্ক ও স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ ইতিমধ্যে অনেকটাই নেমে এসেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের যাতে কিছুটা সুরাহা হয়, সেই লক্ষ্যে নতুন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা এবং বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী বাজারে এল প্রবীণদের জন্য বিশেষ জমা প্রকল্প।
গত বৃহস্পতিবার জীবন বিমা নিগম (এলআইসি)-এর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হয়েছে ৮% আয়ের ১০ বছর মেয়াদি এই বিশেষ প্রকল্প, যার নাম দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা (পিএমভিভিওয়াই) বা প্ল্যান ৮৪২। প্রকল্পটি চালু থাকবে আগামী এক বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩ মে পর্যন্ত। ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হলে তবেই লগ্নি করা যাবে এই প্রকল্পে। সর্বাধিক রাখা যাবে ৭.৫ লক্ষ টাকা। এই সীমা পরিবার পিছু (স্বামী, স্ত্রী এবং নির্ভরশীল ব্যক্তি) প্রযোজ্য। সুদ দেওয়া হবে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক অথবা বার্ষিক হিসাবে। বছরে সুদ নিলে আয় দাঁড়ায় ৮.৩%। বর্তমান ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় যা অনেকটাই বেশি। প্রতি মাসে পেনশন নিলে ৭.৫ লক্ষ টাকা লগ্নিতে আপনার ব্যাঙ্কে মাস গেলে আসবে ৫,০০০ টাকা, বছরে ৬০,০০০। এই আয় কিন্তু করযোগ্য। আয় বার্ষিক হিসেবে নিলে ওই ৬০,০০০ টাকার জন্য আপনাকে লগ্নি করতে হবে ৭,২২,৮৯২ টাকা। এলআইসি-র এই প্রকল্পে কত লগ্নিতে কত আয়, তার পুরো পরিসংখ্যান দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে। লগ্নির টাকা বন্ধক রেখে ৩ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে ৭৫% পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। মেয়াদ শেষে গ্রাহককে পুরো টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। তবে তার আগে মৃত্যু হলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে গ্রাহকের নমিনিকে।
আরও পড়ুন:ঋণ খেলাপের জট কাটার আশায় শিল্প
প্রশ্ন হল, এই প্রকল্পে কতটা সুবিধা পাবেন প্রবীণ নাগরিকরা। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের আওতায় সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে (এসসিএসএস) কিন্তু এখনই সুদ পাওয়া যায় ৮.৪% হারে। ডাকঘর মারফত লগ্নির এই প্রকল্পে রাখাও যায় দ্বিগুণ টাকা। অর্থাৎ ১৫ লক্ষ। সুদ অবশ্য পাওয়া যায় প্রতি তিন মাস অন্তর। এখানে তা চাইলে প্রতি মাসেও নেওয়া যাবে।
এ ছাড়া আছে ভারত সরকারের বন্ড, যা ‘আর বি আই বন্ড’ নামে পরিচিত। ৬ বছর মেয়াদি এই বন্ডে বার্ষিক সুদ পাওয়া যায় ৮ শতাংশ হারে। সুদ দেওয়া হয় ৬ মাস অন্তর। সুদ না-তুলে জমিয়েও রাখা যায়। এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেন প্রবীণরাও। জমার ঊর্ধ্বসীমাও নেই।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর আনা এই নতুন প্রকল্প থেকে তাঁরাই অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন, যাঁদের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে ১৫ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই রাখা হয়ে গিয়েছে। যাঁদের অবশ্য মাসিক আয় প্রয়োজন, তাঁরা নতুন প্রকল্পে ১০ বছরের জন্য আয় নিশ্চিত করতে পারেন। তবে এই আয় যাঁদের এখনই দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য প্রয়োজন নেই, তাঁরা তা দিয়ে ভাল কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি খুলতে পারেন। এতে মেয়াদ শেষে বড় তহবিল গড়ে উঠতে পারে।
এক সময়ের জনপ্রিয় ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে এখন সুদ অনেকটাই কম, ৭.৭%। অর্থাৎ, মাসে হাতে কিছু টাকা পেতে হলে তুলনামূলক ভাবে এলআইসি-র এই নতুন প্রকল্প বেশি আকর্ষণীয়।
প্রবীণরা লগ্নি করতে পারেন, বর্তমানে এমন কয়েকটি প্রকল্পের তুলনা করে একটি তালিকা দেওয়া হল। এটি তাঁদের সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সাহায্য করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy