Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কেন্দ্রের সঙ্গে মত না মেলার কারণেই যাচ্ছেন রাজন

নিজের শুরু করা কাজগুলোর শেষ দেখে যেতে আরও কিছু দিন থেকে যাওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন রঘুরাম রাজন। আপত্তি ছিল না শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা কখনও সেই মোড়ে পৌঁছয়নি, যেখানে ঐকমত্যের দেখা মেলে। আর সেই কারণেই তাঁর সরে যাওয়া।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

নিজের শুরু করা কাজগুলোর শেষ দেখে যেতে আরও কিছু দিন থেকে যাওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন রঘুরাম রাজন। আপত্তি ছিল না শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা কখনও সেই মোড়ে পৌঁছয়নি, যেখানে ঐকমত্যের দেখা মেলে। আর সেই কারণেই তাঁর সরে যাওয়া।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ থেকে সরে যেতে আর এক মাসও বাকি নেই। তার আগে বুধবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর হঠাৎ সরে যাওয়ার রহস্যের উপর থেকে কিছুটা হলেও পর্দা তুললেন রাজন। একই সঙ্গে স্পষ্ট জানালেন, তাঁর দিকে ধেয়ে আসা রাজনৈতিক আক্রমণ এক-এক সময় যথেষ্ট ঘৃণ্য মনে হয়েছে তাঁর। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে থাকা এই অর্থনীতির অধ্যাপকের অবশ্য দাবি, ‘‘যা কাজ ছিল, তার ৯০-৯৫ শতাংশ করা গিয়েছে। নিজের সেরাটাই দিয়েছি আমি।...নিজেকে বরাবর শিক্ষা জগতের প্রতিনিধি ভেবেছি। ফের সেখানেই ফিরতে চাই।’’

আইন অনুযায়ী, কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর নিয়োগ করতে পারে অনধিক পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু রাজন ও তাঁর অনেক পূর্বসূরি ওই পদে প্রথম বার বসেছেন তিন বছরের মেয়াদে। ডি সুব্বারাও, ওয়াই ভি রেড্ডি, বিমল জালান-সহ শীর্ষ ব্যাঙ্কের অনেক গভর্নর ওই পদে দ্বিতীয় দফায় পুনর্নিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তিন বছরের মেয়াদ ফুরোনোর পরেই ৪ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজন।

রঘুরাম রাজন গত তিন বছরে সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠানে। তাঁর আমলেই মূল্যবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা বাঁধা আইন হয়েছে। আবার উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সুদ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত একা গভর্নরের হাতে না রেখে, তা ঋণনীতি কমিটির হাতে দিতে পা বাড়িয়েছেন তিনি। জোর দিয়েছেন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার প্রসারে। দ্রুত নিকেশ চেয়েছেন অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যার। ১৮ জুন সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এ সব বদল দেখে যাব। কিন্তু আবার ভেবে ও সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরে পড়াশোনার জগতেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এ দিনও রাজনের গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়েছে ওই বাকি রয়ে যাওয়া কাজ নিয়েই। তিনি বলেছেন, ‘‘কাজগুলো শেষ করে যাওয়ার জন্য আরও কিছু দিন থেকে যেতে তৈরি ছিলাম আমি।’’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এই প্রথম বার আইন করে মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। কাজ চলছে ছয় সদস্যের ঋণনীতি কমিটি তৈরির। আগামী দিনে যাদের ভোটাভুটিতে সুদ নির্ধারণ করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। একা গভর্নর আর তা ঠিক করবেন না। সেই কমিটি তৈরির কাজ শেষ হয়নি এখনও। রাজন চেয়েছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার আগেই ওই নতুন পদ্ধতিতে সুদ ঠিক করায় সড়গড় হোক শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা হয়নি।

একই ভাবে, এখনও জারি রয়েছে ঋণ খেলাপের বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ। সময় বেঁধে ঋণ খেলাপের সমস্যা নিকেশে কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন রাজন। সময়ে শোধ না-হওয়া ধার তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করে তার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা তুলে রাখতে বলেছেন তিনি। এমনকী বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের জন্য আঙুল তুলেছেন ধার মেটাতে গড়িমসি করা কর্পোরেটের দিকে। রাজনের দাবি, ঋণ খেলাপে রাশ টানার কাজ অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু তা শেষ হয়নি এখনও। আর এই বিষয়গুলিরই যে তিনি শেষ দেখতে চেয়েছিলেন, এ দিন তা স্পষ্ট তাঁর কথা থেকে।

রঘুরাম রাজনের বিদায় ঘোষণার দিনে তাকে দেশের ক্ষতি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল শিল্পমহল। সারা দুনিয়ায় এক ডাকে চেনা অত বড় মাপের অর্থনীতিবিদকে যে ভাবে এবং যে ভাষায় তার আগে কিছু দিন টানা আক্রমণ করে যাওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। কারণ, তখন রাজনের দিকে লাগাতার অভিযোগের তীর ছুঁড়েছিলেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কখনও তিনি রাজনের ভারতীয়ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কখনও বলেছেন মার্কিন স্বার্থ দেখতে গিয়ে ইচ্ছে করেই না কি সুদ কমাচ্ছেন না রাজন। অভিযোগ তুলেছিলেন তথ্য পাচারেরও। এ দিন রাজনের দাবি, সে সব তিনি গায়ে মাখেননি। কিন্তু অবশ্যই সেগুলি গা-ঘিনঘিনে মনে
হয়েছিল তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raghuram Rajan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE