E-Paper

মোদী সরকারের দাবিকে নস্যাৎ করে দেশে চড়ল বেকারত্ব, শহরে পেরোল ৯.৫ শতাংশের গণ্ডি

আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি বৃদ্ধির বদলে কমে গেলে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মুনাফাও ধাক্কা খেতে পারে। সেই কারণেই আগাম সতর্কতা হিসেবে কর্মী নিয়োগে বিশেষ হাত খুলতে পারছে না সংস্থাগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩২
A Photograph representing Unemployment

বেকারত্বের হার সাড়ে নয় শতাংশ পেরিয়ে হাঁটা দিয়েছে ১০ শতাংশের দিকে। গ্রামেও তা আবার ছাড়িয়েছে ৭ শতাংশ। প্রতীকী ছবি।

অতিমারির ধাক্কা সামলে আর্থিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থানও কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছেছে বলে দাবি করে আসছে মোদী সরকার। কিন্তু বেসরকারি সমীক্ষা বলছে অন্য কথা। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহে সারা দেশে বেকারত্ব ফের চড়েছে। হয়েছে চার সপ্তাহের সর্বোচ্চ। মাথাব্যথা বাড়িয়ে শহরাঞ্চলে সেই হার সাড়ে নয় শতাংশ পেরিয়ে হাঁটা দিয়েছে ১০ শতাংশের দিকে। গ্রামেও তা আবার ছাড়িয়েছে ৭ শতাংশ।

সিএমআইই-র রিপোর্ট বলছে, গত ৫ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশে বেকারত্ব ছুঁয়েছিল ৮.৭৬%। তার পরে ধীরে ধীরে নামতে থাকে। কিন্তু ৯ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে ফের লাফিয়ে ওই হার ৮.০৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গ্রামাঞ্চলে তা ২ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহের ৬.৮৭% থেকে অনেকটা বেড়ে হয়েছে ৭.২৮%। তবে চমকে দিয়েছে শহরাঞ্চলের বেকারত্ব। সেখানে ফের তা চলেছে ১০ শতাংশের দিকে (৯.৬৮%)। সিএমআইই-র তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে শহুরে বেকারত্ব শেষ বার দুই অঙ্কের ঘরে ঢুকেছিল।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার জেরে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতি কোন পথে হাঁটবে তা এখনও অস্পষ্ট। আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি বৃদ্ধির বদলে কমে গেলে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মুনাফাও ধাক্কা খেতে পারে। সেই কারণেই আগাম সতর্কতা হিসেবে কর্মী নিয়োগে বিশেষ হাত খুলতে পারছে না সংস্থাগুলি।

বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের ব্যাখ্যা, চড়া মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব সরাসরি পড়েছে শহরাঞ্চলের কাজের বাজারে। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ এখন অত্যাবশ্যক পণ্যের বাইরে টাকা খরচ করছেন না। বরং জোর দিচ্ছেন সঞ্চয়ে। সম্প্রতি আমানতের বর্ধিত সুদ তাঁদের নতুন করে ব্যাঙ্কমুখী করেছে। ফলে সংস্থার উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে ভাটা।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ঋণে উঁচু সুদের কারণেও সংস্থাগুলি তাদের প্রকল্প সম্প্রসারণ বন্ধ রেখেছে, পিছোচ্ছে কিংবা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড কমাচ্ছে। মেটা, টুইটার, অ্যামাজ়ন-সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থা বিপুল কর্মী ছাঁটাই করায় পরিষেবা ক্ষেত্রে বিদেশের বরাত নিয়ে কাজ করা ভারতীয় সংস্থাগুলি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বর্ষার আগে পর্যন্ত গ্রামীণ বেকারত্বের হারে বিশেষ হেরফের হবে না। ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ কমাও সেখানকার রুজি-রোজগার কমিয়েছে। প্রায় একই সুরে পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের বক্তব্য, অতিমারির প্রভাব এখনও কাজের বাজারে কিছুটা রয়েছে। সঙ্গে চাপ বাড়াচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাইও উদ্বেগের বিষয়।

সিএমআইই-র আধিকারিক মহেশ ব্যাসের বিশ্লেষণ, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রায় পুরোটা জুড়েই দেশে চড়া ছিল বেকারত্ব। মাসিক গড় ছিল ৭.৬%। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নির্মাণ, খুচরো ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে। কমেছে কাজে অংশগ্রহণের হারও। যা কাজের বাজার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের হতাশারই লক্ষণ। অর্থনীতির অধ্যাপক মহানন্দা কাঞ্জিলালের কথায়, ‘‘এক দিকে বড় শিল্পের ঘাটতি, অন্য দিকে পুঁজি-নির্ভর শিল্পের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব শহরে বেকারত্ব বাড়িয়েছে। গ্রামীণ বেকারত্বের মূল কারণ, কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না হওয়া। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না হওয়ায় কৃষি লাভজনক থাকছে না। এই ক্ষেত্রে কাজেরও অভাব রয়েছে গ্রামে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Unemployment Modi Government financial crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy