গভর্নর। শুক্রবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র।
পড়তায় না পোষালে সব জায়গায় পা রাখে না ব্যাঙ্ক। শাখা খোলে না প্রত্যন্ত প্রান্তে। অনেকের কাছে আবার জটিল ঠেকে ব্যাঙ্কের কাউন্টারে টাকা লেনদেনের প্রক্রিয়া। আর এই সমস্ত সুযোগ কাজে লাগিয়েই ঘোলা বাজারে গ্রাহক ধরতে নেমে পড়ে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি। গত কয়েক বছর ধরে যে ব্যবসা মাথাচাড়া দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। তারপরই ওই সমস্ত সংস্থার কার্যকলাপ রুখতে রাজ্য প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে উদ্যোগী হয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন সেই ব্যবস্থারই ফল মিলতে শুরু করেছে বলে দাবি করলেন গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং শীর্ষ ব্যাঙ্কের অন্য কর্তারা।
শুক্রবার কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজন। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রসঙ্গ ওঠে সেখানেই।
বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলার বিষয়ে তথ্য পেতে ও তা রুখতে রাজ্য প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে স্টেট লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এসএলসিসি) গঠন করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু আগে সেগুলির নজরদারি তত জোরদার ছিল না। সেই সুযোগে রমরমা বেড়েছিল সংস্থাগুলির। যে কারণে গত মে মাসে এক অনুষ্ঠানে এসএলসিসি-কে আরও জোরদার করার কথা বলেছিলেন রাজন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এসএলসিসি স্তরে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের হদিস পাওয়া জরুরি। দরকার তা রুখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও।
এ দিন রাজনের দাবি, গত দেড় বছরে অনেক জোরদার ভাবে কাজ করছে এসএলসিসি। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ফাঁকফোকর ধরা পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সাথে মিলিত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের দুই ডেপুটি গভর্নর আর গাঁধী এবং এস এস মুন্দ্রাও জানান, প্রতি মাসে এসএলসিসি-র সাব কমিটি যাতে বৈঠকে বসে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে সক্রিয় ভাবে যোগ দিচ্ছে রাজ্য এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলিও। গাঁধীর কথায়, ‘‘এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই এর ফল মিলছে।’’
একই ভাবে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা মেটানোতেও জোর দিচ্ছেন রাজন। তাঁর দাবি, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ঋণ উদ্ধারে উদ্যোগী হলে বাধা হয়ে দাঁড়ান বড় সংস্থার প্রোমোটাররা। তিনি বলেন, ‘‘সে জন্যই আমরা সম্পদ আদায়ে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষপাতী।’’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সির বক্তৃতাতেও এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি।
এ রাজ্যের প্রায় লাগামছাড়া ভাবে ঋণ নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে, তা নিয়ে মন্তব্য করেননি রাজন। বরং ডেপুটি গভর্নর এইচ আর খান বলেন, ‘‘কিছু রাজ্যের আর্থিক অবস্থা খারাপ। রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। যা শুনেছি, তাতে সম্প্রতি এই রাজ্যের আয় বেড়েছে। ফলে তারা হয়তো আগামী দিনে ধার করা কমাবে।’’ বৃহস্পতিবার রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গেও কথা বলেছেন রাজন। তাঁর দাবি, ‘‘উনি কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। বৈঠক সদর্থক ছিল।’’
ঋণখেলাপীদের বকেয়া
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৭,২৬৫ জন স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপীর শোধ না-করা টাকার অঙ্ক ৬৪,৩৩৪.৫৯ কোটি। শুক্রবার লোকসভায় জানালেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা। এর মধ্যে ১১৫টি ক্ষেত্রে ঋণ না-শোধার বিষয়ে প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের। ফলে বাড়ছে অনুৎপাদক সম্পদ। শীর্ষ ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলে সমস্যা যুঝতে পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy