রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। ছবি পিটিআই।
কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কায় অর্থ-বছরের প্রথম তিন মাসেই জিডিপি-র প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছে। এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, গোটা অর্থ-বছরে জিডিপি-র ৯.৫ শতাংশ সঙ্কোচন হতে চলেছে। এমনকি পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এত দিন আর্থিক বৃদ্ধি সম্পর্কে কোনও পূর্বাভাস করেনি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলেছিল, চলতি বছরে ভারতের জিডিপি-র ৯.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হবে। এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রায় একই পূর্বাভাস দেওয়ার পরে ফের দাবি উঠেছে, রাজকোষ থেকে টাকা ঢেলে আর্থিক দাওয়াই দিক নরেন্দ্র মোদী সরকার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অবশ্য আজ দাবি করেন, জিডিপি-র সঙ্কোচনের ধারা ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকলেও, জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি সামান্য বৃদ্ধি পাবে। কারণ, হতাশা ও আতঙ্কের পরিবেশ কাটিয়ে দেশে আশার আবহ তৈরি হয়েছে। এই আশায় ভর করেই ‘থ্রি-স্পিড রিকভারি’-র সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তাঁর মতে, আগামী অর্থ-বছরের প্রথম তিন মাস, অর্থাৎ ২০২১-র এপ্রিল থেকে জুন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০.৬ শতাংশে পৌঁছবে।
কোন পথে অর্থনীতি*
অর্থবর্ষ ২০২০-২১
• সার্বিক: ৯.৫% সঙ্কোচন
• জুলাই-সেপ্টেম্বর: ৯.৮% সঙ্কোচন
• অক্টোবর-ডিসেম্বর: ৫.৬% সঙ্কোচন
• জানুয়ারি-মার্চ: ০.৫% বৃদ্ধি
অর্থবর্ষ ২০২১-২২
• এপ্রিল-জুন: ২০.৬% বৃদ্ধি
*রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস
সত্যিই কি তা-ই? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থ-বছরের এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। এত খারাপ জিডিপি-র সঙ্গে আগামী বছরের এপ্রিল-জুনের জিডিপি-র তুলনা করলে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে, জিডিপি অনেকখানি বাড়ল। কিন্তু বাস্তব তা নয়। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, “ভক্তদের জন্য আশার কথা হল, এ বছর সঙ্কোচন হওয়ায় আগামী অর্থ-বর্ষে অর্থনীতি পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে ভাল দেখাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর হয়ে যাঁরা ঢাক পেটান, তাঁরা যে এটা নিয়ে মাতামাতি করবেন, সেটা আগাম বলে রাখলাম।”
আরও পড়ুন: নতুন গৃহঋণে এ বার চাইলে সুদ কিছুটা কম দেওয়ার সুবিধা মিলবে
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন বলেন, “এপ্রিল-জুনে প্রায় ২৪ শতাংশ কমে যাওয়ার পরে জিডিপি-কে যদি আগের অবস্থাতেও পৌঁছতে হয়, তা হলে ৩০ শতাংশের বেশি আর্থিক বৃদ্ধি দরকার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কথা মতো আগামী এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশের বেশি হলেও, জিডিপি আগের অবস্থায় পৌঁছবে না।”
সেই কারণেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও দাওয়াই দরকার বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রণব আগেই বলেছেন, আগামী তিন বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক দাওয়াই দিলে তবেই অর্থনীতি প্রাক-কোভিড পরিস্থিতিতে পৌঁছবে। মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনই আর সুদের হার কমায়নি।
কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, এখন রাজকোষ থেকে সরকারকে টাকা ঢালতে হবে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অভীক বড়ুয়া বলেন, “এটা অভূতপূর্ব সময়। দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের চেষ্টার পথে এখনও বাধা হল রাজকোষ থেকে যথেষ্ট খরচের অভাব।”
শক্তিকান্ত যুক্তি দিয়েছেন, এপ্রিল-জুনের গভীর সঙ্কট এখন অতীত। করোনার ‘অ্যাকটিভ কেস’-এর সংখ্যাও কমে আসছে। গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু শহরের বাজারে চাহিদা তৈরি হতে সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও ভাটার টান বলে বেসরকারি লগ্নি এবং রফতানিও কম থাকবে। তা সত্ত্বেও কৃষির সঙ্গে রোজকার ব্যবহারের পণ্য, স্কুটার-বাইক, গাড়ি, ট্র্যাক্টর, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো ক্ষেত্র দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ ক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছে যে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আর আসছে না। সেটা যদি আসে, এবং তার জেরে ফের লকডাউন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আজ আরএসএসের বিভিন্ন আর্থিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আরএসএস-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের সাংগঠনিক সম্পাদক বি সুরেন্দ্রন বৈঠকে ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy