Advertisement
E-Paper

আলো দেখাতে পারে পড়তি সুদ

নোট অচল। তাই নগদ বাড়ন্ত। আর সেই টানাটানির ছাপ আটপৌরে জীবনযাত্রার সর্বত্র। এরই মধ্যে রুপোলি রেখা আপাতত সুদ কমার সম্ভাবনা। সঙ্গে আশা, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কমারও।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫

নোট অচল। তাই নগদ বাড়ন্ত। আর সেই টানাটানির ছাপ আটপৌরে জীবনযাত্রার সর্বত্র। এরই মধ্যে রুপোলি রেখা আপাতত সুদ কমার সম্ভাবনা। সঙ্গে আশা, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কমারও।

সরকারি ফরমানে রাতারাতি অচল পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। তাই গেরস্থের হাতে টাকা নেই। উপায় নেই থলে ভরে বাজার আনার। চাল, ডাল, নুন, তেল যেটুকু না-আনলে নয়, চেনা মুদিখানা থেকে তা আসছে ধার-বাকিতে। জামাকাপড় থেকে শুরু করে মোবাইল— অনেক জিনিস কেনাই আপাতত শিকেয়। ফলে চাহিদার ঘাটতি প্রায় সর্বত্র।

খদ্দের না-থাকায় দোকানিদের মাথায় হাত। আবার তাঁরা জিনিস না কেনায় বিক্রি কমছে পাইকারি বাজারে। ছোট শিল্পের ঘরেও নগদ টাকা নামমাত্র। কর্মীদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়ছে তারা। সুতরাং নগদের জোগানে টান প্রভাব ফেলছে জিনিসপত্রের চাহিদায়।

মেক ইন ইন্ডিয়া, স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার মতো একগুচ্ছ প্রকল্প কেন্দ্র চালু করার পরেও সে ভাবে লগ্নি করতে এগিয়ে আসেনি বেসরকারি সংস্থাগুলি। তাই সে ভাবে মাথা তোলেনি শিল্পোৎপাদন সূচকও। এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ফের সুদ কমানোর দাবি টানা করে আসছে শিল্পমহল। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, বাজার থেকে নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অদূর ভবিষ্যতে সেই সুযোগের দরজা খুলে দিতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সামনে।

তাঁদের যুক্তি, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। নগদ জোগানের ঘাটতির কারণে চাহিদা এখন তলানিতে নামায় জিনিসপত্রের দাম আরও কমার সম্ভাবনা। ফলে মূল্যস্ফীতির ছোবলের আশঙ্কা সে ভাবে না-থাকায়, ফের এক দফা সুদ ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

শুধু তা-ই নয়। নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সুদ কমানোর পথ কিছুটা প্রশস্ত হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিরও। কোন ব্যাঙ্ক কত টাকা পর্যন্ত ধার দিতে পারবে, তা নির্ভর করে তার তহবিলের উপর। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের পরে সাত দিনের মধ্যেই (মঙ্গলবার পর্যন্ত) ব্যাঙ্কগুলির ঘরে জমা পড়েছে অন্তত ৫ লক্ষ কোটি টাকা। একে তো ওই বিপুল অঙ্ক তাদের হাতে আসছে, তার উপর অধিকাংশই জমা পড়ছে সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্টে। যেখানে সুদ সব থেকে কম গুনতে হয়। ফলে কমছে বাড়তি তহবিল সংগ্রহের খরচ। যার উপরে এখন সুদের হার নির্ভর করে। হয়তো সেই কারণেই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ না-কমালেও হয়তো তা ছাঁটতে সমস্যা হবে না বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির।

এই সম্ভাবনা যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত মিলেছে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের কথায়। অদূর ভবিষ্যতে ঋণে সুদ কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে অর্থনীতির চাকায় গতি না-বাড়লে, ব্যাঙ্কঋণের চাহিদা কতটা বৃদ্ধি পাবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকে।

অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, টাকার জোগান বাড়লে-কমলে, সরাসরি তার প্রভাব পড়ে পণ্য-পরিষেবার চাহিদায়। প্রথমটিতে ভাটা মানে দ্বিতীয়টিও কমে যাওয়া। নোট তুলে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন কিছু দিনের জন্য নগদের জোগানে টান পড়ছে। সেই সঙ্গে এর দরুন কালো টাকার বড় অংশ বাজার থেকে উবে গেলে, সাময়িক ভাবে তারও প্রভাব পড়বে অর্থনীতির উপরে।

এ প্রসঙ্গে ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, যে-সব ক্ষেত্রে কালো টাকার লেনদেন তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল, সেখানে কেনাকাটা দ্রুত কমছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির শেয়ার দরও পড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। অর্থাৎ, কালো টাকা বেরিয়ে যাওয়া মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির পক্ষে ভাল হলেও, কিছু দিনের জন্য তা ঝাঁকুনি দিতে পারে।

এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই উঠে আসছে আবাসন শিল্পের কথা। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়বেন অনেক প্রোমোটার। বিশেষত যাঁরা ‘কাঁচা টাকা’য় ফ্ল্যাট তৈরিতে অভ্যস্ত। তা ছাড়া, অনেকে কালো টাকা দিয়ে বেনামে সম্পত্তি কেনেন। কিন্তু এখন তা নিয়ে সরকার কড়াকড়ি করায় টান পড়তে পারে ফ্ল্যাটের চাহিদাতে। সুতরাং কিছু দিনের জন্য বিপাকে পড়তে পারে আবাসন শিল্প। কিন্তু তেমনই কালো টাকা দূর হলে, আগামী দিনে সম্ভবত ফ্ল্যাটের দর কমবে। তখন ক্রেতা বাড়বে বলেই নির্মাণ শিল্পের আশা। বাড়ি কেনার ইচ্ছের আগুনে কিছুটা ঘি পড়তে পারে ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমালেও।

বিশেষজ্ঞদের আশা, এই মুহূর্তে বাজারে নগদের যে-ঘাটতি রয়েছে, তা সাময়িক। তাই সেই সমস্যা মিটলে অর্থনীতির ঘোড়া ফের জোরে দৌড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা। যেমন, ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে আপাতত নগদের জোগানে টান রয়েছে। ফলে কমেছে চাহিদা, সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও। কিন্তু এই অবস্থা সাময়িক। কিছু দিনের মধ্যেই নোটের জোগান স্বাভাবিক হবে।’’

বিশ্ব অর্থনীতিতেও এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তা বিস্তর। এক দিকে, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্তে (ব্রেক্সিট) পাউন্ডের দর পড়েছে। অন্য দিকে, অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দা হিসেবে বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চিত সময়ে (যদি মার্কিন অর্থনীতি টালমাটাল না-থাকে) ডলারের দাম বাড়ে। ফলে তার সাপেক্ষে পড়ে টাকার দর। এখনও তা-ই হচ্ছে। তার উপর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে টাকার জোগানও হঠাৎ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। তারও প্রভাব পড়ছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার মূল্যে। বিশ্ব অর্থনীতি শোধরালে এবং দেশে নোট নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বদলালে, টাকার বিনিময়মূল্যেও ভারসাম্য ফিরবে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।

Interest rate Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy