E-Paper

কমেছে মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ব জুড়ে সুদ কমানোর আবহে বড় পদক্ষেপের পথে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক?

মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:১১
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিশ্ব জুড়ে সুদ কমানোর আবহ তৈরি হচ্ছে। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল হয়েছে বেশির ভাগ অর্থনীতি। পণ্যের দামকে বাগে আনতে সুদ বাড়াতে শুরু করে তারা। ২০২২-এর এপ্রিলে ভারতে রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) ছিল ৪%। মে মাস থেকে তা বাড়তে থাকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পৌঁছয়ে ৬.৫ শতাংশে। এই চড়া সুদ এখনও বহাল।

গত দেড় বছর ধরে টানা ন’টি ঋণনীতিতে রেপো স্থির রেখেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা বলেছিল, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নীচে না নামলে সুদ কমবে না। এই জুলাইয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি ৩.৫৪% হওয়ায়। ফলে জল্পনা, অক্টোবরে সুদ কমতে পারে। আরবিআই অবশ্য দেখতে চায় মূল্যবৃদ্ধির হার পাকাপাকি ভাবে কমছে কি না। এই পরিস্থিতিতে সবাই এখন অপেক্ষা করছেন অগস্টে তার হার জানার জন্য। সরকারি হিসাব বেরোবে আগামী বৃহস্পতিবার। এ বারও তা ৪ শতাংশের নীচে থাকলে সুদ কমানোর দাবি জোরালো হবে।

মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভও যে সুদ ছাঁটবে, সেটা মোটামুটি স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন হল, কমবে কত? বাজারের অনুমান লাগাতার কয়েক দফায় তা করতে হবে তাদের। সে ক্ষেত্রে ভারত কী করে, সেটাই দেখার। সুদের তারতম্য হলে গোটা অর্থনীতিতে তার বিরাট প্রভাব পড়ে। সুদ কমলে কী হতে পারে, একবার চোখ রাখব তাতে—

  • রেপো রেট কমলে ব্যাঙ্কগুলি ঋণে সুদ কমায়। ফলে তার চাহিদা বাড়ে। সুদ কমলে চাপ কমে অনাদায়ি ঋণের।
  • শিল্পের সুদের খরচ কমে। ফলে মূল্যবৃদ্ধি নামতে পারে। পণ্যের দাম কমলে তার চাহিদা বাড়ে, যা শিল্পের জন্য ভাল। সাধারণ মানুষও স্বস্তি পান।
  • বাড়ি, গাড়ি-সহ সব ঋণ শোধের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) কমে। ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা হয়। অন্যত্র খরচ বা লগ্নি বাড়তে পারে।
  • ঋণে সুদ কমলে খোলা বাজারে বন্ডের দাম বাড়ে। তাই তার ইল্ড কমে। বন্ডে সুদ কমলে সেগুলি বাজারে ছেড়ে অর্থ সংগ্রহকারীদের (সরকার এবং সংস্থা) সুদ বাবদ খরচ কমে।
  • খোলা বাজারে বন্ডের দাম বাড়লে ব্যাঙ্কগুলির লাভ বাড়ে। কারণ ব্যাঙ্কই বন্ডের সব থেকে বড় লগ্নিকারী। তাই সুদ কমলে ব্যাঙ্কের শেয়ার দর চড়ে।
  • শেয়ার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী হয়। বাড়তে থাকে ফান্ডের ন্যাভ। অর্থাৎ ঋণে সুদ কমা শেয়ার বাজার এবং ফান্ডে লগ্নিকারীদের জন্যে ভাল। ঋণগ্রহীতাদের জন্যও বাঞ্ছনীয়।
  • ঋণে সুদ কমালে ব্যাঙ্কগুলিকে আমানতেও তা ছাঁটতে হয়। সুদ কমাতে হতে পারে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে এবং সরকারের ফ্লোটিং রেট বন্ডে (পরিবর্তনশীল সুদের বন্ড)। সব রকম জমায় সুদ কমার কারণে আয় কমার ফলে চাপে পড়েন প্রবীণ নাগরিক-সহ সুদ নির্ভর মানুষেরা।
  • সুদ কমলে ব্যাঙ্কগুলির আমানত সংগ্রহের সমস্যা বাড়ে। এমনিতেই শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের লগ্নিতে আকর্ষণীয় রিটার্নের কারণে ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা সরে যাচ্ছে সেগুলিতে। এর পরে সুদ কমলে সেই গতি বাড়তে পারে। ফলে ঋণের চাহিদা যেমন বাড়তে পারে, তেমনই আমানত বৃদ্ধির হার কমতে পারে। এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা তাই ব্যাঙ্কিং শিল্প, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সরকারের কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RBI repo rate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy