আরও এক ধাপ। ফের চিনের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের জেরে গত ১৫ মাসের তলানিতে নেমে গেল সেনসেক্স। ফলে সোমবার ২৫ হাজারের ঘর থেকে পিছলে তার জায়গা হল ২৪ হাজারের ঘরে।
৩০৮ পয়েন্ট পড়ে দিনের শেষে করল ২৪,৮৯৩.৮১ অঙ্কে। গত ২০১৪ সালের ২৬ মে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেনসেক্স এ পর্যন্ত যতটা উঠেছিল, এ দিনের পতনের জেরে কার্যত তার সবটাই ধুয়ে মুছে গেল। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক নিফটি-ও নেমেছে ৭৬০০ অঙ্কের নীচে, যা গত ১৩ মাসে সবচেয়ে কম।
বাজারের মন্দা টেনে নামিয়েছে টাকাকেও। টাকা ৩৬ পয়সা কমায় এক ডলার হয়েছে ৬৬.৮২ টাকা। গত দু’বছরে এত নীচে নামেনি ভারতের মুদ্রা।
চিনের আর্থিক সঙ্কট এবং আমেরিকা সুদ বাড়ালে তার প্রভাব ভারতের শেয়ার বাজারে কতটা পড়বে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী কালই দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি, ব্যাঙ্কার ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লন্ডন সফরের আগে অর্থনীতির হাল খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক। রিলায়্যান্সের মুকেশ অম্বানী, টাটা গোষ্ঠীর সাইরাস মিস্ত্রি, আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান পানাগড়িয়া, এসবিআই চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য-সহ অনেকেই হাজির থাকবেন সেখানে।
এ দিনের পতন লগ্নিকারীদের মনে করিয়ে দিয়েছে ঠিক দু’সপ্তাহ আগের কালো সোমবারের কথা। ওই দিন, গত ২৪ অগস্ট চিনের পতনের জেরে বিশ্ব জুড়ে ধাক্কা লাগে শেয়ার বাজারে। সেনসেক্স ১,৬২৪ পয়েন্ট পড়ে তলিয়ে যায় ২৬ হাজারের নীচে। বাজার বন্ধ হয় ২৫,৭৪১.৫৬ অঙ্কে। আজকের পতনেও ইন্ধন জুগিয়েছে সেই চিন। দিনভর দোলাচলে এ দিন সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক পড়তে থাকে। এশিয়ার বাদবাকি বাজারগুলির অবস্থাও ছিল একই রকম, যা প্রভাব ফেলে ভারতে।
চিনকে নিয়ে আজ নতুন করে উদ্বেগের কারণ, ২০১৪ সালের জন্য তার আর্থিক বৃদ্ধির হিসাবে সংশোধন করেছে বেজিং। ৭.৪% থেকে কমিয়ে তা করা হয়েছে ৭.৩%। ইতিমধ্যেই ২৫ বছরের তলানিতে নেমে আসা বৃদ্ধির হার আরও কমে যাওয়াতেই এশিয়া জুড়ে নামতে থাকে সূচকের পারা। শুধু তাই নয়, বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারও আগের সব নজির ভেঙে অগস্টে নেমে এসেছে মাত্র ৩.৫৫ লক্ষ কোটি ডলারে। তহবিল এক ধাক্কায় কমেছে ৯৩৯০ কোটি ডলার। আর, সেই খবরও জানা গিয়েছে আজই। বিশেষজ্ঞের মতে, সম্প্রতি ইউয়ানের দাম এক ধাক্কায় ডলারের তুলনায় ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার ফলই পেয়েছে চিন। তাদের অর্থনীতিতে এই জোড়া ধাক্কা বিপদ সঙ্কেত পাঠায় বাজারে, বিশেষ করে এশিয়ায়। এ দিন ইউরোপের বাজার সে ভাবে পতনের কবলে পড়েনি। খোলার পরে বেড়েছে মার্কিন বাজারও।
চিন ছাড়াও উদ্বেগ ছড়ায় ঘাটতি বর্ষা নিয়ে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বিভ্রান্তি। তারা জানায়, এ বছর দেশে গড়ে ঘাটতি ছোঁবে ১৮%। আগে তা ছিল কম, ১২%। কিন্তু পরে তা সংশোধন করে ১২% ঘাটতির হিসাবই বহাল রাখে। কিন্তু তখন শেয়ার বাজারের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই বিরূপ প্রভাব বাজার কাটিয়ে উঠবে কি না, তা আগামী কালের আগে বোঝা যাবে না।