E-Paper

তেইশের লাফ চব্বিশেও সম্ভব, আশায় লগ্নিকারী

এখন প্রশ্ন হল, ২০২৩-এ লগ্নিকারীদের ঝুলি ভরানো উত্থানের পরে ’২৪ কেমন যাবে? শুধু ডিসেম্বরেই যে পরিমাণ চড়েছে শেয়ার সূচক, তার তুলনায় তেমন সংশোধন এখনও দেখিনি আমরা।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৭
An image of Share Market

—প্রতীকী চিত্র।

সদ্য পিছনে ফেলে আসা ২০২৩ সালটি বেশ ভালই কেটেছে লগ্নিকারীদের। বছরের শেষ দিকে অত্যন্ত তেজি ছিল শেয়ার বাজার। গত শুক্রবার, শেষ লেনদেনের দিনে সামান্য নামে। তবে গোটা বছরে, বিশেষত ডিসেম্বর জুড়ে চুটিয়ে ‘ব্যাট’ করেছে সূচক। শুধু গত মাসেই সেনসেক্স বেড়েছে ৫২৫২ পয়েন্ট। ৭২ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে বছর শেষ করেছে ৭২,২৪০ অঙ্কে। ২০২৩ সালে তার মোট উত্থান ১১,৩৯৯, অর্থাৎ ১৮.৭৩%। গত ২০১৭ সালের পরে সর্বোচ্চ। সে বার উঠেছিল ৩০%। গত বছর অবশ্য সেনসেক্সের থেকেও দ্রুত বেগে ফুলেফেঁপে উঠেছে নিফ্‌টি। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে ২০% উঠে থিতু হয়েছে ২১ হাজারের ঘরে।

সুচকের এ হেন লাফে গত বছর লগ্নিকারীদের শেয়ার সম্পদ বেড়েছে ৮১.৯০ লক্ষ কোটি টাকা। বছর শেষে বিএসই-তে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজারদর বা মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন পৌঁছেছে ৩৬৪.২৯ লক্ষ কোটি টাকায়। বাজারে শেয়ারের মোট দামের নিরিখে শুধু বড় মাপের সংস্থার (লার্জ ক্যাপ) শেয়ার নয়, অনেক বেশি গতিতে বেড়েছে মাঝারি মাপের (মিড ক্যাপ) এবং ছোট মাপের (স্মল ক্যাপ) সংস্থাগুলির বড় অংশও। সেনসেক্স মিড ক্যাপের উত্থানের হার ৪৫.৫২%, আর স্মল ক্যাপের ৪৭.৫২%।

এখন প্রশ্ন হল, ২০২৩-এ লগ্নিকারীদের ঝুলি ভরানো উত্থানের পরে ’২৪ কেমন যাবে?

শুধু ডিসেম্বরেই যে পরিমাণ চড়েছে শেয়ার সূচক, তার তুলনায় তেমন সংশোধন এখনও দেখিনি আমরা। অর্থাৎ ছোট মেয়াদে বাজারে পতনের আশঙ্কা থাকছে। বস্তুত, সংশোধনের পতন সুযোগ করে দেয় অপেক্ষাকৃত কম দামে ভাল শেয়ার কেনার। যা না আসা পর্যন্ত এত উঁচু বাজারে একলপ্তে মোটা টাকা লগ্নি করা ঠিক নয়। তবে মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কারণ গত বছর বড় অঙ্কের লাভের সন্ধান পেয়েছেন শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের লগ্নিকারীরাও।

মোদ্দা কথা, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঝারি থেকে বড় মেয়াদে ২০২৪ সালও বাজারের ভাল কাটানোর কথা। গত বছর ভারতের থেকে বেশি রিটার্ন দিয়েছে মাত্র তিনটি দেশের সূচক— জাপান, ব্রাজ়িল এবং জার্মানি। এ দেশের অর্থনীতির জমি মোটামুটি পোক্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। যে কারণে আশা, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৫% ছাপিয়ে যেতে পারে। এমনকি তা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৭ শতাংশও। সেটা হলে জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির নিরিখে বিশ্বে ভারতই থাকবে শীর্ষে। যার প্রতিফলন পড়বে সংস্থাগুলির আর্থিক ফলে, যা ইতিমধ্যেই উন্নত হতে শুরু করেছে। বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ সব দেখে ভারতে মোটা টাকা লগ্নি করছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। নিয়মিত বড় অঙ্কের পুঁজি ঢালছে দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও।

লগ্নিকারীদের আশায় জ্বালানি জোগাচ্ছে নানা বিষয়। এর মধ্যে আছে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের ৮০ ডলারের নীচে থাকা দাম এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশে শক্তিশালী সরকার গঠনের প্রত্যাশা। সব মিলিয়ে বেশ আশা জাগিয়েই শুরু হয়েছে ২০২৪ সাল। গত বছরটি ছিল মাঝারি মাপের সংস্থা এবং ছোট সংস্থার শেয়ারের। এ বছর লগ্নিকারীদের অনেকে বড় সংস্থার শেয়ারের দিকেই ঝুঁকবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত এক বছরে অনেক ফান্ডের ন্যাভ (নিট অ্যাসেট ভ্যালু) বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। লাভের মাত্রা এতটা হওয়ায় এবং তার উপরে অনেক কম হারে কর দিতে হয় বলে বহু মানুষ ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর থেকে টাকা সরিয়ে ফান্ডে রাখছেন। অতি দ্রুত গতিতে বাড়ছে ছোট থেকে মাঝারি আকারে নিয়মিত লগ্নি অর্থাৎ এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। এই পথে পরোক্ষ ভাবে শেয়ার বাজারে ঢুকেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সরাসরি এবং ফান্ডের মাধ্যমে বড় আকারে লগ্নি হতে থাকায় বিদেশি লগ্নিকারীরা মাঝেমধ্যে শেয়ার বিক্রি করলেও, ভারতের সূচকগুলি সে ভাবে তলিয়ে যাচ্ছে না।

শুধু শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড নয়, গত বছর বেশ ভাল রিটার্ন পাওয়া গিয়েছে সোনার লগ্নিতেও। ২০২৩-এর ২ জানুয়ারি ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৫৫,০৪০ টাকা। যা গত শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ১৬% বেড়ে পৌঁছেছে ৬৩,৮৫০ টাকায়।

২০২৩ সালে বেশ খানিকটা সুদ বেড়েছে বিভিন্ন স্থির আয় প্রকল্পেও। বাজারে ঋণের ভাল চাহিদা থাকায় বছরের শেষ সপ্তাহে মেয়াদি জমায় সুদের হার বাড়িয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদা। সুদ সামান্য বাড়ানো হয়েছে দু’টি স্বল্প সঞ্চয়েও। এটা এখন স্পষ্ট যে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না। অর্থাৎ জমায় চড়া সুদের জমানাও আপাতত বহাল থাকবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Share Market investments investors Share Market

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy