ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ নেই। ভারতে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে আট বছরের সর্বোচ্চ। রেকর্ড পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিতে। তাকে সামাল দিতে অসময়ে মাঠে নামতে হয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে। দুই ঋণনীতির মধ্যবর্তী সময়েই রেপো রেট (যে সুদের হারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) বাড়াতে হয়েছে ৪০ বেসিস পয়েন্ট। আগামী কয়েকটি ঋণনীতিতে তা আরও বাড়তে পারে। যা মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করলেও আর্থিক বৃদ্ধির চাকাকে অমসৃণ রাস্তায় ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ঠিক এই আবহে বুধবার ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৮% থেকে কমিয়ে ৭.৩% করল মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। রিপোর্টে তাদেরও আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করতে গিয়ে সারা বিশ্বে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলিকে সুদ বাড়াতে হবে। কিন্তু তা ধাক্কা দিতে পারে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে।
ঋণনীতি সংক্রান্ত পদক্ষেপে ‘দেরির’ জন্য অনেকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে দোষারোপ করলেও প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাও এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনের আশ্বাস, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার প্রভাবের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত ভাল জায়গায় রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চলতি অর্থবর্ষে ৭.৮% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল এসঅ্যান্ডপি। তখন মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলা শুরু করলেও, ভূ-রাজনৈতিক আশান্তির আঁচ মেলেনি। মূল্যায়ন সংস্থাটি জানিয়েছে, আগের বার যে ঝুঁকির (মূল্যবৃদ্ধি) কথা বলা হয়েছিল এখন তা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সে কারণে সেই পূর্বাভাস ছেঁটে ৭.৩% করা হল। আগামী অর্থবর্ষে সেই হার দাঁড়াতে পারে ৬.৫%। সারা বছরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির গড় হার হতে পারে ৬.৯%। আবার ব্রোকারেজ সংস্থা ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা সিকিউরিটিজ় জানিয়েছে, সার, জ্বালানি, বিদ্যুতের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রবি মরসুমে চাষের খরচ বাড়তে চলেছে। যা ধাক্কা দিতে পারে গ্রামীণ চাহিদাকে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের আশঙ্কা, এমন সমস্ত বহুমুখী সমস্যা বজায় থাকলে পূর্বাভাস আরও কমতে পারে।
নাগেশ্বরনের অবশ্য বক্তব্য, বিশ্ব অস্থির অবস্থার মধ্যে থাকলেও বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত তুলনায় ভাল জায়গায় রয়েছে। তিনি জানান, গত দশকের শেষের দিকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার কাঁধে ছিল বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা। কিন্তু তার পরে আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কারে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে তা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। উন্নত হয়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলির হিসাবের খাতা। সরকারও খরচ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতেও রয়েছে যথেষ্ট বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সম্প্রতি পদক্ষেপ করেছে তারা। ফলে অর্থনীতি ততটা ধাক্কা খাবে না।
এ দিন চলতি মাসের গোড়ায় ঋণনীতি বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। বৈঠকে গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছিলেন, মূল্যবৃদ্ধির জন্য সারা বিশ্বে সঞ্চয়, লগ্নি, প্রতিযোগিতা, বৃদ্ধি ধাক্কা খাচ্ছে। এর সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্রের সতর্কবার্তা, কয়েক দিন আগে পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির কাছে স্ট্যাগফ্লেশন (আর্থিক বৃদ্ধির নিচু হারের সঙ্গে উঁচু মূল্যবৃদ্ধি এবং চড়া বেকারত্ব) ঝুঁকির ব্যাপার হলেও, সম্প্রতি তা অনেকটাই কাছাকাছি এগিয়ে এসেছে। এক এক দেশে এর প্রকৃতি এক এক রকম। কমিটির আর এক সদস্য জয়ন্ত আর বর্মা খুব শীঘ্রই সব মিলিয়ে ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেছেন। তবে সুদ বৃদ্ধিতে ‘দেরির’ জন্য বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হতে হচ্ছে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে। এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন গভর্নর সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সব সময়ে আগাম ঝুঁকি আন্দাজ করা সহজ নয়। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সমর বিশেষজ্ঞেরাও বুঝতে পারেননি তা কত দিন চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy