Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নজর এখন সমীক্ষা ও ছাড়পত্রের দিকে

বীরভূমের মহম্মদবাজারে সাগরবান্দি গ্রামের পথে পাথর ভাঙা চলছে ক্রাশারে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

বীরভূমের মহম্মদবাজারে সাগরবান্দি গ্রামের পথে পাথর ভাঙা চলছে ক্রাশারে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত ও দয়াল সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:০০
Share: Save:

রাজ্যের হাতে এখন ২১০ কোটি টন কয়লার ভাণ্ডার। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সব কিছু ঠিকঠাক চললে সেখান থেকে কয়লা তুলতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে। তার আগে খনির আরও সমীক্ষা-সহ যে সব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া রয়েছে, সেগুলি করতেই বেশ কয়েক বছর সময় লাগার কথা।

কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পার্থসারথি ভট্টাচার্য জানান, সাধারণত কেন্দ্র কোনও কয়লা ব্লক বরাদ্দ করার ৬৬ মাসের মধ্যে সেখান থেকে উত্তোলন শুরু হওয়ার কথা। তবে তার আগে অনেকগুলি ধাপ রয়েছে। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার করা ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষায় কয়লার ভাণ্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে এ বার রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে (পিডিসিএল) পুরো প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। আরও কম ঘনত্বের এলাকায় আরও বেশি সংখ্যক গর্ত করে বিস্তারিত খননকাজ (এক্সপ্লোরেশন) চালিয়ে তার ভিত্তিতে মাইনিং প্ল্যান তৈরি করতে হবে। কোথা দিয়ে কয়লা তোলা হবে, কী প্রযুক্তি ব্যবহার হবে, সেগুলি সেই পরিকল্পনায় থাকবে। তার ভিত্তিতে প্রকল্পটি লাভজনক কি না, সেই তথ্য-সহ সম্ভাব্যতার সমীক্ষা (ফিজ়িবিলিটি স্টাডি) হবে। কয়লা তোলার আগে সব মিলিয়ে সেই সব প্রক্রিয়া করতে সময় লাগে সাধারণত বছর দু’য়েক। যে কোনও কয়লা খনি প্রকল্পই এ ভাবে ধাপে ধাপে এগোয় বলে তাঁর দাবি।

এর মধ্যে ধাপে ধাপে বিভিন্ন ছাড়পত্র পাওয়ার আবেদনও জানাতে হবে পিডিসিএলকে। পরিবেশ-সহ ২০টি ছাড়পত্র নিতে হবে তাদের। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, পরিবেশের ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। তার পরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেখানে জনশুনানি করবে পর্ষদ।

সরকারি সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী, ওই বিস্তারিত খননকাজের জন্য পিডিসিএল রাজ্যের ডিরেক্টর অব মাইন্সের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে কারা সেই সমীক্ষা করবে, তা স্থির করবে। সাধারণত, সরকারি সংস্থা সিএমপিডিআই এই সমীক্ষা করে। তবে তারও আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার সঙ্গে ল্যান্ড ম্যাপ, জমির রেকর্ড ইত্যাদি খতিয়ে দেখার কাজ চলবে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক ভাবে আংশিক কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র তাদের হাতে এসেছে।

এই কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা ‘ওপেন কাস্ট’ বা খোলা মুখ ও বাকিটা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ বা প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি নীচে থেকে কয়লা তোলার কথাই ভাবা হচ্ছে। নীচে থেকে কয়লা তোলার ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের কাছে উন্নত প্রযুক্তি থাকায় তাদের সঙ্গেও কথা বলতে পারে রাজ্য।

ডেউচা পাঁচামির কয়লা পেলে পিডিসিএল স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। কোল ইন্ডিয়ার উপর কার্যত আর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। সংস্থা সূত্রের খবর, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের প্রতি বছর ২.৪ কোটি টন কয়লা লাগে। এর মধ্যে ১.৪ কোটি টন কয়লার জন্য কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। বাকিটা বৈদ্যুতিন নিলাম ও অন্য সূত্র থেকে কেনে তারা।

সব মিলিয়ে বীরভূমের আপাত নিস্তরঙ্গ পাথর খাদান ও সংলগ্ন এলাকায় কালো হিরের ভবিষ্যৎ এখন চর্চার কেন্দ্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Mine Deucha WBPDCL Coal India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE