নতুন আর্থিক বছরের আজ চতুর্থ দিন। গত বছরটা আদৌ ভাল কাটেনি। অনেকেরই মনে তাই প্রশ্ন, নতুন বছরটা কেমন যাবে। কথায় বলে, সকাল দেখে বলা যায় দিনটা কেমন যাবে। তাই যদি হয়, তবে সুদ-নির্ভর মানুষের কাছে বছরটা ভাল যাবে না।
ডাকঘরে সুদ কমেছে বছরের প্রথম দিন থেকেই। ব্যাঙ্কে সুদ কমার প্রবল সম্ভাবনা আগামী কাল। ব্যাঙ্কে যদি সুদ কমে এবং তার প্রভাবে সরকারি ঋণপত্রের ইল্ড যদি নামে, তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী জুলাই মাসে আর একটি ধাক্কা আসতে পারে কোনও কোনও ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। এখানেই শেষ নয়। ব্যাঙ্ক-সুদ আরও নামতে পারে পরবর্তী পর্যায়ে। শিল্প-বাণিজ্য মহলের আশা, ২০১৬ সালে ব্যাঙ্ক-সুদ কমতে পারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। অর্থাৎ সুদের অবনমন এখন সময়ের অপেক্ষা। এই অবস্থায় শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎ থেকে দূরে থাকেন এমন মধ্যবিত্তদের জন্য নতুন আর্থিক বছর কোনও শুভ বার্তা বয়ে আনেনি।
এ বার দৃষ্টি একটু ঘুরিয়ে দেখে নেওয়া যাক বছরটা কেমন যেতে পারে শেয়ার বাজারের জন্য। বছর দেড়েক খুব খারাপ কাটার পরে এ বার কিন্তু আশা জাগাচ্ছে নতুন বছর। শেয়ার বাজারে সরাসরি লগ্নি করেন কম-বেশি ৩ কোটি মানুষ। জনসংখ্যার বড়জোর ২.৫ শতাংশ। এ ছাড়া পরোক্ষ পথে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমেও শেয়ারে লগ্নি করেন বহু মানুষ। এঁদের জন্য কিন্তু বছরটা ভাল যেতে পারে। কারণগুলি দেখে নেব এক নজরে।
l ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে ৫.৭% হারে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে অনুমান করা যায়, মোট শিল্পোৎপাদন এ বার চাঙ্গা হবে। শিল্প সূচকের ৩৮% হল মূল শিল্প বা কোর সেক্টর।
l অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, ২০১৫-’১৬ সালে জাতীয় উৎপাদন বাড়বে ৭.৬% হারে। তা আরও বাড়বে চলতি আর্থিক বছরে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে, নেমে আসছে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি।
l কৃষি উৎপাদন নিয়ে এ বার বিরাট আশা। নীতি আয়োগের অনুমান, দু’বছর খরা পরিস্থিতির পরে এ বার কৃষি উৎপাদন বাড়তে পারে ৬ শতাংশ হারে। আগের তিন বছরে বৃদ্ধি/ সঙ্কোচনের হার ছিল যথাক্রমে ৪.২%, (-০.২৫%) এবং ১.২ শতাংশ (আনুমানিক)।
l শিল্পঋণে সুদ কমলে উৎপাদন খরচ কমবে। বাড়ি-গাড়ি ঋণে সুদ কমলে এই দুই শিল্প চাঙ্গা হবে। উপকৃত হবে অনুসারী শিল্প। বাড়বে কর্মসংস্থান।
l গত দু’বছর এল-নিনোর প্রতিকূল প্রভাব কাটিয়ে এ বার স্বাভাবিক বর্ষার আশা করা হচ্ছে। ভাল বর্ষা চাঙ্গা রাখবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। চাহিদা বাড়বে বহু পণ্যের। এতে শিল্প উপকৃত হবে। দাম কমবে খাদ্যপণ্যের।
l বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে তেল উৎপাদনকারী অর্থনীতিগুলি আবার প্রাণ ফিরে পাবে। ভারতের তেলের বিল বাড়লেও পাশাপাশি বাড়বে রফতানি। একই ভাবে উপকৃত হবে বিশ্বের অনেক দেশ।
l মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়েছে একবারে বড় আকারে না-বাড়িয়ে সুদ বাড়ানো হবে ধাপে ধাপে। এতে ডলার কিছুটা দুর্বল হয়েছে। বেড়েছে টাকার দাম। ফিরতে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। শেয়ার বাজারের কাছে এটা একটা বড় খবর।
l বিরোধিতার মধ্যেও সরকার আর্থিক সংস্কার থেকে সরে আসেনি। সম্প্রতি ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নি অনুমোদিত হয়েছে ই-কমার্স ক্ষেত্রে। জিএসটি নিয়ে সরকার যথেষ্ট সক্রিয়। এই বিল পাশ হলে তা শিল্প এবং শেয়ার বাজারের পক্ষে যথেষ্ট সদর্থক হবে।
সব মিলিয়ে আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভাল। চতুর্থ তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ শুরু হবে আর দিন দশেকের মধ্যে। এ বার মোটের উপর ফল ভাল হওয়ার কথা নয়। তবে এটা বাজারের অজানা নয় এবং এর প্রভাব শেয়ার সূচকে ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে। শিল্পের দিক থেকে দেখতে গেলে চলতি বছরে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, ব্যাঙ্কিং, নির্মাণ, পরিকাঠামো ইত্যাদি শিল্প ভাল করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ভাল করবে কৃষি-নির্ভর বিভিন্ন শিল্প।
পড়তি সুদের বাজারে ভাল সুদ দিচ্ছে নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্ক—বন্ধন ব্যাঙ্ক। ১ থেকে ৩ বছর মেয়াদি জমায় সুদের হার ৮.৫ শতাংশ, যা এই বাজারে বেশ আকর্ষণীয়। ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদে সুদের হার ৮ শতাংশ। বলা যায়, সদ্য ‘মুখেভাত’ হয়েছে কলকাতার এই নতুন ব্যাঙ্কের। কিন্তু এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছে ১১ হাজার কোটি টাকার আমানত। এই আমানতের সুবাদে শোধ করেছে ৫ হাজার কোটি টাকার উঁচু সুদযুক্ত ঋণ। এর ফলে আগামী দিনে এই ব্যাঙ্ক আগের তুলনায় কম সুদে ঋণ দিতে পারবে। এরই মধ্যে শাখার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬৫০। ব্যবসা ও মুনাফা যত বাড়বে, ততই মানুষের আস্থা বাড়বে নতুন ব্যাঙ্কটির প্রতি।
ডিভিডেন্ডের বাজারে এখন চলছে ‘অকালবোধন’। বাজারে প্রস্তাবিত ডিভিডেন্ডের উপর কর এড়াতে বেসরকারি কিছু কোম্পানি এবং সরকারি কোষাগার ভরতে লাভজনক সরকারি সংস্থাগুলি হুড়মুড়িয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে আর্থিক বছর শেয হওয়ার আগে। বেশ মোটা হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে অগ্রণী কয়েকটি সংস্থা। লগ্নিকারীদের ব্যাঙ্কপাশবই/ স্টেটমেন্ট দেখে বুঝে নিতে হবে, সব ডিভিডেন্ড ঘরে এল কি না।
যাঁদের সুদ বাবদ আয় আছে, অথচ চলতি অর্থবর্ষে করযোগ্য আয় থাকবে না, তাঁরা বছরের গোড়াতেই ফর্ম ১৫জি বা ১৫এইচ জমা করুন, যাতে সুদ থেকে উৎসে কর কেটে নেওয়া না-হয়। প্রবীণদের ক্ষেত্রে ফর্ম ১৫এইচ প্রযোজ্য। ২০১৬-’১৭ সালের জন্য নতুন ফর্ম এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে আপনার মোট সম্ভাব্য আয়, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক/সংস্থায় আপনি ক’টি ১৫জি/এই
চ ফর্ম দাখিল করেছেন, যে-সব সূত্র থেকে সুদ বাবদ আয় আসবে, তার প্রত্যেকটির বিশদ তথ্য এবং কোন ধারায় তা করযোগ্য, তা ফর্মের মাধ্যমে জানাতে হবে। যাঁদের করযোগ্য আয় থাকবে, তাঁদের ফর্ম ১৫জি/এইচ দাখিল করা উচিত হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy