ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের ধাক্কায় ভারতে আমদানি করা অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম মঙ্গলবার ব্যারেল প্রতি ৭৪ ডলার ছাপিয়ে গেল। যার ফলে এক দিকে তৈরি হল আমজনতার জন্য পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা। অন্য দিকে আর্থিক বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রার লেনদেন খাতের ঘাটতি নিয়ে মোদী সরকারের ত্রিমুখী চিন্তা বাড়ল।
কেন্দ্রীয় তেল মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম দু’মাসে (এপ্রিল-মে) ভারত গড়ে ব্যারেল প্রতি ৬৪ ডলার দরে অশোধিত তেল আমদানি করছিল। সেই পণ্যেরই দাম এখন ১০ ডলার বেড়ে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘তেল আমদানির খরচ বছরে ১২০০ থেকে ১৩০০ কোটি ডলার বাড়বে। তেলের দামের ধাক্কায় আর্থিক বৃদ্ধির হার ০.৩ শতাংশ বিন্দু কমতে পারে। মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়তে পারে ০.৪ শতাংশ বিন্দু। চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতি জিডিপি-র ০.৩% বাড়তে পারে। ফলে ডলারের তুলনায় আরও কমতে পারে টাকার দর।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, ইরান থেকে ভারত সরাসরি তেল আমদানি করে না ঠিকই। কিন্তু ইরান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী। ইজ়রায়েলের হামলার জেরে ইরান থেকে বিশ্ব বাজারে তেলের রফতানি ধাক্কা খেয়েছে। ফলে অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। তার উপরে ইরানের সীমান্তবর্তী সমুদ্রপথ হরমুজ় প্রণালী দিয়ে তেল, গ্যাস ভর্তি জাহাজ চলাচল করে। ইরান সেই প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বৈদ্যুতিন যুদ্ধের (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার) জেরে হরমুজ় প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।অর্থ মন্ত্রকের এর শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘সবেমাত্র জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৪% ছুঁয়েছে। মে মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ছয় বছরে সর্বনিম্ন। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমিয়েছে। এখন ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’’ তেল মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির মুনাফা কমবে। জেপি মর্গ্যানের মতো কিছু আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থার মতে, সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে অশোধিত তেলের দাম ১২০ ডলার ছাপিয়ে যেতে পারে। আর অশোধিত তেলের দাম বাড়লে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়াতে হবে।
ইজ়রায়েলে সান ফার্মা, ইনফোসিস, উইপ্রো, টিসিএস, আদানি গোষ্ঠী, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো, ভারত ফোর্জের মতো ভারতীয় সংস্থার ভাল মতো উপস্থিতি রয়েছে। তাদের ব্যবসা নিয়েও চিন্তা রয়েছে শিল্পমহলের। ইরান, ইজ়রায়েল, দুই দেশেরই প্রথম পাঁচ বাণিজ্য শরিকের তালিকায় ভারত রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। গত অর্থবর্ষে ইজ়রায়েলে ২১৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। ইরানে গিয়েছিল ১২৪ কোটি ডলারের পণ্য। সেখানে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে বাসমতী চাল যায়। সৌদি আরব, ইরাকের পরেই ইরান ভারত থেকে সবথেকে বেশি বাসমতী কেনে। গত অর্থবর্ষে ৮.৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন বাসমতী চাল গিয়েছিল সেখানে। যার মূল্য ছিল প্রায় ৬৩৭৪ কোটি টাকা। ইরানে অশান্তিতে পঞ্জাব হরিয়ানার চাষি থেকে চাল রফতানিকারীদের সংগঠন আইআরইএফ কর্তাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘দু’দেশের সংঘাত কতখানি দীর্ঘায়িত হবে, তার উপরে ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনেকখানি নির্ভর করছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)