Advertisement
১১ মে ২০২৪
Cash on Delivery

জিনিসপত্র কেনাকাটায় ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিয়ে কেন এত জল ঘোলা

ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিয়ে বর্তমানে চলছে বিস্তর জল ঘোলা। দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, আর.বি.আই জানিয়েছে ই-কমার্স সাইটরা এই ভাবে টাকা বিনা অনুমোদনে নিচ্ছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

কুমার শঙ্কর রায়
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৮ ১০:০৭
Share: Save:

ইন্টারনেটে কেনাকাটা করার সময় ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষই কোনও না কোনও সময় ঝামেলায় পড়েছেন। অনেকসময় টাকাও কেটে নেওয়া হয়েছে। ওই ই-কমার্স সাইট থেকে তাঁরা টাকা ফেরতও পাননি। অন্যদিকে, ব্যাঙ্ক বলে টাকা আসবে সাত দিনের মধ্যে, সবুর করুন। ইন্টারনেটে কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে হ্যাকিংয়ের ভয় তো আছেই। কে যে কোথায় ওৎ পেতে আছে! এ রকম নানাবিধ কারণের জন্যেই ভারতবর্ষে ই-কমার্সের গ্রাহকরা ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন থেকে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি ব্যবহার করে জিনিসপত্র কেনেন। নিজের হাতে পছন্দের জিনিসটা পেয়ে, নগদ গুনে দিতে কোন ঝামেলা নেই। প্রায় দোকানে কেনাকাটা করার মতন।

কিন্তু, এই ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিয়ে বর্তমানে চলছে বিস্তর জল ঘোলা। দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, আর.বি.আই জানিয়েছে ই-কমার্স সাইটরা এই ভাবে টাকা বিনা অনুমোদনে নিচ্ছে। এত বছর পরে এরকম একটা কথা বলে আর.বি.আই গ্রাহক এবং বিক্রেতাদের মনে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তাহলে কি ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাবে?

ধর্মেন্দ্র কুমার নামক এক ব্যাক্তি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে প্রশ্ন করেন। তিনি জানতে চান, ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন যে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি (সি.ও.ডি) নিয়মে টাকা নেয় এবং বণ্টনের কাজ 'পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্টস অ্যাক্ট'-এর মধ্যে পড়ে কি না। কারণ, ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন এক প্রকার মধ্যস্থতাকারীর কাজ করছে। উত্তরে আর.বি.আই যা বলছে তা নিয়ে অনেকেই হতভম্ব। ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়ে দেয় যে ভারতে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিয়ে কোন সরাসরি আইন নেই। তা ছাড়া, আর.বি.আই বুঝিয়েছে যে এই ধরনের কাজ অনুমোদন ছাড়াই করছে ই-কমার্সের কোম্পানিগুলি।

যদি দিনে ই-কমার্স কোম্পানিরা ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে, তাহলে তার ২৫০ কোটি টাকা আসছে ক্যাশ-অন-ডেলিভারির রাস্তা দিয়ে।

জিনিস পেয়ে টাকা দিতে একজন সাধারণ গ্রাহকের কোন অসুবিধে নেই। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে, গ্রাহকের মনে নানান প্রশ্ন থাকে। জিনিসটা কেমন হবে? ওয়েবসাইটে যেমন দেখিয়েছে তেমন হবে কি? আমার বাড়ি ভেবে ভুল করে অন্য কাউকে না দিয়ে দেবে না তো? এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন হাওয়ার মতন উবে যায় যখন গ্রাহক ক্যাশ-অন-ডেলিভারি ব্যবহার করে জিনিস নেন। নিজের হাতে, দেখে শুনে নেওয়ার পর কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারিকে টাকা দিলেই হল।

আরও পড়ুন: ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার বাড়াল স্টেট ব্যাঙ্ক

আর.বি.আই-এর বক্তব্য, এই কাজ করার অনুমোদন ই-কমার্স কোম্পানিরা নেয়নি। শুধু শুধু জল ঘোলা করল দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক।

যদি এমন কোন আইন থাকে যে হাতে টাকা নিতে গেলে ই-কমার্স কোম্পানিদের অনুমোদন নিতে হবে, তাহলে অবিলম্বে সেই সংস্থাদের অনুমোদন নেওয়ার পথটা বাতলে দেওয়াই হল আর.বি.আই-এর উচিত কাজ। কারণ, সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হয় ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিলে। না থাকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের টেনশন, না থাকে কেনা জিনিস নিয়ে কোন চিন্তা।

অনেক সংস্থা ক্যাশ-অন-ডেলিভারিকে পছন্দ করে না। 'কনফেডেরেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স' সংস্থার সেক্রেটারি প্রভীন খান্ডেলওয়াল ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বন্ধ হোক তাই চান। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে টাকা-পয়সা লেনদেন হলেই বেশি খুশি হন উনি।

কিন্তু গ্রাহকেরা হাতে হাতে টাকা দিয়ে ইন্টারনেট থেকে কিনতে চান জিনিস। ইস্কুলের শিক্ষিকা প্রমীলা সেন বললেন, "মোবাইল থেকে টাকা দিতে ক’জন পারে? ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিতে ভয় করে। তাই, নগদ টাকা দিয়ে কিনলে অনেক চিন্তামুক্ত থাকা যায়। বিল পাওয়া যায় টাকা দিলেই। যদি ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বেআইনি হয়, তাহলে সব শপিং মল, দোকান, সুপারমার্কেট এবং রাস্তার হকার কি টাকা লেনদেনের অনুমোদন নিয়েছে? নগদ লেনদেনে যদি বেআইনি জিনিস হয়, তাহলে ফলাও করে বিভিন্ন রঙের টাকার নোট কেন ছাপছে আর.বি.আই?"

আরও পড়ুন: চার বছরে দ্বিগুণ হওয়ার পথে নেটে কেনাকাটা

ই-কমার্স কোম্পানিরা বলছে, গ্রাহকের কাছে জিনিসের মূল্য দেওয়ার জন্যে নগদ, ডিজিটাল এবং ইত্যাদি রাস্তা আছে। সব রকম বিকল্প দেওয়া হয়। "আমাদের তরফ থেকে আমরা তাঁদের বলতে পারি যে ডিজিটাল পেমেন্ট করুন। ডিসকাউন্ট পাবেন। কিন্তু, কাউকে জোর করা হয় না। আমাদের কুরিয়র কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি আছে। তাঁরা টাকা নেওয়ার পরে, আমাদের জানায় এবং সেই মতন বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে টাকা পোঁছে যায়," জানালেন একজন উচ্চপদস্থ কার্যনির্বাহী।

কিছু ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যর্থ লেনদেনের সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া, শোনা যায় ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের ডেবিট কার্ডে কাজ হলেও, অন্য পেমেন্ট সিস্টেমে মাঝে মাঝেই লেনদেন করতে গিয়ে ঝামেলা হয়। সরকারের উচিত এই ডিজিটাল পরিকাঠামোকে ১০০% সুরক্ষিত এবং কার্যকর করা। "তাহলে, দেখবেন সবাই ধীরে ধীরে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি থেকে সরে আসতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় ই-কমার্স নীতি নিয়ে ভাবছে। ই-কমার্সের ফলে অনেক ব্যবসা হচ্ছে। ছোট ছোট শহর থেকে ছোট বিক্রেতারা সারা দেশকে গ্রাহক হিসাবে পাচ্ছেন। ক্যাশ-অন-ডেলিভারি না থাকলে ভারতে এই ব্যবস্থা এত জনপ্রিয় হত না। তাই অনুমোদনের ব্যাপারটা খুব শীঘ্র একটা স্থির করা উচিত," বললেন পলিসি বিশেষজ্ঞ সুশীল ভার্মা।

আশা করা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, আর.বি.আই ক্যাশ-অন-ডেলিভারি নিয়ে একটা পরিষ্কার নীতি আনবে, এবং মানুষের মন থেকে সবরকম আশঙ্কা দূর করতে সাহায্য করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cash on Delivery E Commerce Reserve Bank of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE