নতুন শিল্পের জন্য জমি বরাদ্দ হচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের দু’টি জায়গায়, নবান্ন থেকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এই জমি দেওয়া হবে কাঁকসার পানাগড় শিল্পতালুক এবং রানিগঞ্জে নতুন তৈরি মঙ্গলপুর শিল্প-পার্কে। তার পরেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে মঙ্গলপুরের পুরনো শিল্পতালুকটি, যেটিকে নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই শিল্পোদ্যোগীদের।
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) তত্ত্বাবধানে থাকা ওই পুরনো তালুক ১৯৯৯-এ তৈরি। স্পঞ্জ আয়রন, রোলিং মিল, ইস্পাত, সিমেন্টের অনেক কারখানা রয়েছে। সরকারি জমির বাইরেও, অনেকে জমি কিনে কারখানা গড়েছেন। মাঝে কয়েকটি বন্ধ হয়েছে। এখন চালু কারখানা প্রায় ৩০টি। বেশির ভাগের মালিকদেরই অভিযোগ, শিল্পতালুকের রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। পথবাতি জ্বলে না। জলের সমস্যা রয়েছে। নিকাশির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এক রোলিং মিল সংস্থার কর্ণধার দীপক সান্থালিয়ার দাবি, ‘‘ক্রমশ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা কার্যত নেই। আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিজেদেরই সামলাতে হয়।’’ শিল্পোদ্যোগী আর পি চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘‘রাস্তাঘাট, জল কিছুই ঠিক নেই। অথচ, সব রকম কর বাড়ানো হয়েছে!’’ এই অবস্থায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম মঙ্গলপুরে এডিডিএ-র দেওয়া ৩১০ একর জমিতে শিল্প-পার্ক গড়ছে। নতুন শিল্পের জন্য জমি বরাদ্দ নিয়ে পুরনো কারখানার মালিকদের বক্তব্য, ‘‘নতুন উদ্যোগকে স্বাগত। তবে আমরা যাঁরা এত দিন ধরে কারখানা চালাচ্ছি, তাঁদের কথাও সরকারের ভাবা উচিত।’’
কাঁকসা, গলসি ১ ও আউশগ্রাম ২ ব্লকের ১৪৬৬ একর জমি নিয়ে ২০০৯-১০ সালে পানাগড় শিল্পতালুক গড়েছিল বাম সরকার। পরিকাঠামো উন্নয়ন হয় তৃণমূল আমলে। সেখানে রয়েছে সার, রং, রাসায়নিক, পাইপ, ইস্পাত, সেরামিক টালি ইত্যাদির কারখানা। প্রায় ১২টিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন হচ্ছে। গোটা সাতেক শীঘ্রই শুরু করবে। শিল্পোদ্যোগীদের অনেকের মতে, শিল্পোন্নয়ন নিগম এটির নির্মাণে যুক্ত থাকায় রাস্তা চওড়া হয়েছে, আলো বসেছে। ‘পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অরুণ পাল বলেন, ‘‘পরিকাঠামো ভাল। শিল্পবান্ধব পরিবেশ দিতে আমাদের সংগঠনও উদ্যোগী।’’ এডিডিএ সূত্রের দাবি, মঙ্গলপুরে পুরনো তালুক চালুর সময় বলা হয়েছিল, পর্ষদের সঙ্গে কারখানাগুলিকেও পরিকাঠামো নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘দু’টি তালুকই নিগম দেখছে। আমাদের কাছে বিষয়টি এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘এই শিল্পাঞ্চলে বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। চালুগুলিরও উৎপাদন কমেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় পরিস্থিতি পাল্টাবে না।’’ তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অবশ্যা বার্তা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ধাপে ধাপে শিল্পায়নের চাকা এগোচ্ছেন। নতুন শিল্পের মাধ্যমে জেলায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)