কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম এই প্রথম পেরিয়ে গেল ৬১ হাজারের মাইলফলক। ফাইল ছবি।
বিশ্ব বাজারে সোনা-রুপোর দাম চড়লে দেশে তার ঢেউ আছড়ে পড়ে। বুধবার ফের সেটাই হল। আন্তর্জাতিক দর বাড়ার পরে ভারতে নজির গড়ল সোনা। কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম এই প্রথম পেরিয়ে গেল ৬১ হাজারের মাইলফলক। মাত্র এক দিনে লাফ হাজারেরও বেশি। জিএসটি নিয়ে দাম ৬৩,২৯৩.৫০ টাকা (বাজার নির্বিশেষে কিছু কম-বেশি হতে পারে)। ছুটছে রুপোও। তার কেজি প্রতি দর ৭৪ হাজার টাকা পার হয়ে গিয়েছে। এক কিলোগ্রাম বাট ৭৪,৩৫০ টাকা আর খুচরো রুপো ৭৪,৪৫০ টাকা। ফলে মাথায় হাত পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষেরই। চাহিদা কার্যত তলানিতে নেমেছে।
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে বলেন, “ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র-সহ আমেরিকার অর্থনীতিতে নানা সমস্যার জেরে জৌলুস হারাচ্ছে বিদেশি মুদ্রার বাজার। ডলারে লগ্নি কমেছে। সেই পুঁজি তুলে বহু বিনিয়োগকারী সোনায় ঢালছেন। যা দামকে ঠেলে তুলেছে। গত দু’দিনের মধ্যেই বিশ্ব বাজারে তার দর আউন্সে ৩৮ ডলার বেড়ে গিয়েছে। আমার ধারণা সোনা আরও চড়া হবে। যদিও এর জেরে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে গয়নার বাজার। উপায় না থাকলে কেউ দোকানমুখো হচ্ছেন না।’’
একই সুর পাকা সোনার (বুলিয়ন) ব্যবসায়ী জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ অজমেঢ়ার গলায়। তিনি বলেন, সোনায় লগ্নি বাড়ার কারণেই তার দাম বেড়েছে। বিশ্বে ডলারের সূচক মাথা নামিয়েছে। ফলে বিদেশি মুদ্রায় এখন লগ্নিকারীরা বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা সোনা কিনে সুরক্ষিত বোধ করছেন। পাশপাশি এ বার সুদের হার বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ লাগাম দেবে বলে মনে করছে মূলধনী বাজার। কারণ, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে গিয়ে চরম ক্ষতি হতে বসেছে অর্থনীতির, আর্থিক লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাঙ্কগুলির। এর ফলে ঋণপত্রের (বন্ড) বাজার পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সোনায় লগ্নি বৃদ্ধির এটিও অন্যতম কারণ।
এই পরিস্থিতিতে সোনার গয়নার বাজার থেকে প্রায় উধাও ক্রেতা। স্বর্ণ শিল্পমহলের দাবি, বড় দোকানে কিছু মানুষ যা-ও বা কেনাকাটা করছেন, কিন্তু বিশেষ করে ছোট দোকানগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই বেমালুম উবে গিয়েছে চাহিদা। বেলঘরিয়ার একটি ছোট দোকানের মালিক টগর পোদ্দার বলেন, “সোনার দাম বাড়তে থাকার ফলে আমাদের মতো ছোট দোকানে এখন বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। গত পাঁচ দিন আমি বৌনি করতে পারিনি। কোথায় পৌঁছবে দাম বুঝতে পারছি না।’’ ক্রেতা শূন্য দোকানে বসে বহু বিক্রেতার এখন একটাই ভাবনা, এমন চলতে থাকলে মূল্যবৃদ্ধির কামড় সয়ে আগামী দিনে সংসার চালানোর খরচ বইবেন কী করে! বিশেষত প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দাম বাড়ায় ক্রেতাও যেখানে হাত খুলে খরচ করার অবস্থায় নেই। বরাতের অভাবে মাথায় হাত পড়েছে কারিগরদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy