কেন্দ্রীয় বাজেটে চা নিয়ে ‘চর্চা’ই নেই!
নিজেকে চা-বিক্রেতা পরিচয় দিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী দেশের রাজনীতিতে ‘চায়ে পে চর্চা’ নামে জনসংযোগ শুরু করেছিলেন। তিনি তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের এ বারের বাজেটেও উপেক্ষিত থাকল চা। চা শিল্পে জড়িতদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ, এ বারের বাজেটে চা শিল্প নিয়ে আলোচনা জরুরি ছিল, যা হয়নি।
কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ার খামখেয়ালে চা উৎপাদন ক্ষতির মুখে। যার চরম উদাহরণ গত মরসুম। সংসদের শিল্প বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চা উৎপাদনের ধরন বদলানোয় গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। তার কোনও ছাপ নেই বাজেটে। পেরিয়ে আসা মরসুমে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ৫৪ শতাংশ, বঙ্গে চা উৎপাদন কমেছে ২৫ শতাংশ। চা পর্ষদ বাজারে চাহিদা এবং জোগানের ভারসাম্য ফেরাতে চা পাতা তোলার সময় কমিয়ে উৎপাদন কমাতে চাইছে। আবহাওয়ার কারণে চা উৎপাদন বিপুল ভাবে কমে যাওয়া ‘অশনি সঙ্কেত’ এবং এখনই বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু না হলে চা শিল্পে ‘দুর্দিন’ আসছে বলে অনেকের আশঙ্কা।
বিদেশ থেকে সস্তার চা ঢুকে দেশের চায়ের বাজার নষ্ট করছে বলে বার বার চা শিল্পের সর্বস্তর থেকে ‘নোট’ পাঠানো হলেও, চা আমদানি নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে উল্লেখ নেই। চা বাগানে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি করছে চা পর্ষদ। কারণ, তৈরি চা পাতার নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক পেয়েছে তারা। কীটনাশকের কারণে রফতানির বাজার মার খাচ্ছে। যদিও বিকল্প কীটনাশক তৈরি এবং বাজারে তা সহজলভ্য করা নিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে কিছু বলা নেই।
গত কয়েক বছরের বাজেটেও চা শিল্পে সরাসরি বরাদ্দ করা হয়নি। শুধু চা পর্ষদকে চা শ্রমিকদের জীবনযাপনের মান উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ বার সে ঘোষণাও নেই। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শিলিগুড়ির সভা থেকে ছোট চা চাষিদের কৃষকের স্বীকৃতি, জলসেচের সুবিধা, কিসান ক্রেডিট কার্ডের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঘোষণা নেই তা নিয়েও।
ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন বলেছিলেন, ভেবেছিলাম, বাজেটে সেটুকু ঘোষণা অন্তত থাকবে।” চা পরিচালকদের সংগঠন ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র মহাসচিব প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “চা শিল্পকে সরাসরি কোনও সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা না থাকলেও, ‘প্রধানমন্ত্রী ধন্যধান্য কৃষি যোজনা’, অসমে ইউরিয়া প্লান্ট গড়ার পরিকল্পনা থেকে চা শিল্প পরোক্ষ সুবিধা পাবে।” চা পর্ষদের সদস্য পুরজিৎ বক্সীগুপ্ত অবশ্য দাবি করেন, ‘‘চা শিল্পকে কেন্দ্রীয় সরকার অগ্রাধিকার দেয়। সারা বছর চা পর্ষদ, চা গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে চা শিল্পের প্রয়োজন মেটানো হয়। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মেনে চা গবেষণা কেন্দ্রে বরাদ্দ বেড়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)