E-Paper

বাড়ছে ব্যয়, কমছে আয়, হিসাব কষতে গিয়ে মাথায় হাত ভোটমুখী রাজ্যের

অর্থ দফতরের আশঙ্কা, বিমা জিএসটিমুক্ত হওয়ায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে পারে রাজ্য। যে সব পণ্যে জিএসটি ২৮% থেকে কমে ১৮% হয়েছে, সেগুলির থেকে ১৫০০ কোটি মতো কম রাজস্ব আসতে পারে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০০
ভোটের আগেই ভোটারদের মন পেতে কিছু না কিছু খরচসাপেক্ষ প্রকল্পের ঘোষণা করে নবান্ন।

ভোটের আগেই ভোটারদের মন পেতে কিছু না কিছু খরচসাপেক্ষ প্রকল্পের ঘোষণা করে নবান্ন। —প্রতীকী চিত্র।

হিসেব মিলছে না। যে আর্থিক পরিকল্পনা সামনে রেখে চলতি অর্থবর্ষে পথ চলা শুরু করেছিল রাজ্য সরকার, তার অনেক কিছুই অদলবদল হয়ে যাচ্ছে। জিএসটি-র হার সংশোধনের পরে বছরের বাকি ছ’মাসে আয় আরও কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ ‘ভোটমুখী’ খরচের বহর বাড়ছে। বিধানসভা ভোটের আগে এই পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, সেটাই এখন অর্থ-কর্তাদের অন্যতম মাথাব্যথা। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, প্রত্যেক ভোটের আগেই ভোটারদের মন পেতে কিছু না কিছু খরচসাপেক্ষ প্রকল্পের ঘোষণা করে নবান্ন। ফলে বাড়তে থাকা আর্থিক চাপ রাজ্যের পক্ষে আরও বেশি উদ্বেগজনক।

অর্থ দফতরের আশঙ্কা, বিমা জিএসটিমুক্ত হওয়ায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে পারে রাজ্য। যে সব পণ্যে জিএসটি ২৮% থেকে কমে ১৮% হয়েছে, সেগুলির থেকে ১৫০০ কোটি মতো কম রাজস্ব আসতে পারে। ১২% থেকে কমে ৫% হওয়া জিনিসের ক্ষেত্রেও লোকসান হতে পারে ১৫০০ কোটি টাকা। অর্থ-কর্তাদের অনেকের ব্যাখ্যা, সব মিলিয়ে অন্তত ১০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে পারে রাজ্য। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্র ক্ষতি পুষিয়ে নেবে তামাক-পান মশলার বর্ধিত জিএসটি থেকে। তাতে রাজ্যের লাভ হবে না। তবে সেস এবং করের ভাগ বাবদ কেন্দ্রের থেকে কিছু অর্থ আসবে। জিএসটি কমার পরে চাহিদা বাড়লেও ক্ষতির অনেকটা পূরণ হবে। যদিও বাস্তবে কর কমায় সাধারণ মানুষের এবং অর্থনীতির উপকার হবে বলেই ধারণা ওই কর্তাদের।

জিএসটি কমাকে স্বাগত জানিয়েও,মুখ্যমন্ত্রীর তথা অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র দাবি করেছেন, এটা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী কল্যাণ তববিলে টান ফেলতে পারে। তাতে ধাক্কা খেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোও। তাঁর দাবি, জ্বালানি বাবদ কর-সেস রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগাভাগিযোগ্য নয়। তাতে রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষতি হবে।

অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা মানুষের জন্য সব বোঝা নিতে প্রস্তুত। কিন্তু বোঝাটার ক্ষতিপূরণ (কম্পেনসেট) দেওয়াও জরুরি। তার জন্য জিএসটি আইনের সেকশন ৯ (১) এবং ৫ বদল করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি কার্যকর করা দরকার। না হলে রাজ্যগুলির ক্ষতি হচ্ছে। যা আখেরে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি। পাশাপাশি, তামাক-পান মশলা নিয়ে নতুন অবস্থানে সেই সংস্থাগুলিরই হাত শক্ত করবে। এটা ভাবা প্রয়োজন।”

অর্থ দফতর সূত্র আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে— গত অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) এসজিএসটি বাবদ প্রায় ৪৭,৩৩৬ কোটি টাকা আয়ের আশা করেছিল রাজ্য। কিন্তু সংশোধিত হিসেব অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রার থেকে তা ১৪৬৪ কোটি বা ৩.০৯% কমে যায়। এ বছরের প্রত্যাশা, ৪৯,৭৭১ কোটি টাকা। কিন্তু কেন্দ্র জিএসটির হার বদল করায়, সেই লক্ষ্য পূরণ নিয়েও সংশয় বাড়ছে। কারণ, সমান্তরালে গত বছরের তুলনায় রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব ঘাটতি ১১,০০০ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। রাজকোষ ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৪৭০০ কোটি। পুঞ্জীভূত ঋণ ছুঁতে পারে প্রায় ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা। তাতে ধার শোধের জন্য ৮১,৫১০ কোটি (গত বছরের থেকে প্রায় ৪০০০ কোটি বেশি) রাখতে হচ্ছে সরকারকে। ঘটনাচক্রে, এ বছর কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী-সহ একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমাতে হয়েছে গত বছরের তুলনায়।

আশঙ্কা বহাল খরচের দিক থেকেও। চালু খরচগুলি বাদে পুজো-অনুদান বেড়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় ১২,৩০০ কোটি টাকা বাড়াতে হয়েছে। এখনও এই প্রকল্পে লক্ষাধিক নতুন উপভোক্তা যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ফলে ভোটের কারণে প্রকল্পে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ালেও খরচ বাড়বে, না-বাড়ালেও বাড়বে। বাড়ি তৈরির খাতে এ বছর সরকারকে ১৫,৪৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হয়েছে। ভোটের আগে আরও ১৬ লক্ষ মানুষকে বাড়ির টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আরও প্রায় ১৯,২০০ কোটি খরচ ধরে রাখতে হবে। টাকা জোগাড়ে দেদার ধার করতে হলেও বোঝা ভারী হবে রাজ্যের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

GST Economy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy