খুচরো মূল্যবৃদ্ধির পরে যে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হারও বাড়বে তা এক রকম প্রত্যাশিতই ছিল। মে মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার হয়েছে ৪.৪৩%, যা ১৪ মাসে সর্বোচ্চ। আশঙ্কা, এই হার বাড়বে চলতি মাসেও এবং তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৫%। তবে বর্ষার ফলে জুলাই থেকে দাম কমার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এর আগে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মে মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮৭%।
পণ্যমূল্য এই ভাবে বাড়ার ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করেছে ৬.২৫%। এর প্রভাবে খানিকটা করে সুদ বাড়ানো হয়েছে ব্যাঙ্কে ঋণ এবং আমানত উভয় ক্ষেত্রেই। যার ফলে একাধিক বিকল্প লগ্নির সুযোগ তৈরি হচ্ছে লগ্নিকারীদের সামনে। তবে প্রকল্প বাছতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।
সুদ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বন্ড বাজারে। বন্ডের বাজারদর কমেছে। ফলে বেড়েছে ইল্ড বা প্রকৃত আয়। এর ফলে পুরনো বন্ড ফান্ডগুলির ন্যাভ কমেছে। অন্য দিকে, শেয়ার বাজারের প্রধান দু’টি সূচকের তেমন পতন না হলেও, ভাল রকম কমেছে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ সূচক।
এই দুই ক্ষেত্রে পতনের সুযোগ নিতে নতুন করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে ব্যালান্সড ফান্ড, যাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে কম দামের সুযোগ নিয়ে তহবিল লগ্নি করা যায়। একই কারণে লগ্নি করা যেতে পারে বাছাই করা পুরনো ফান্ডগুলিতেও— যাদের ন্যাভ ইতিমধ্যেই অনেকটা কমে এসেছে।
একই সঙ্গে সুদ বাড়ায় সাধারণ মানুষের নজর আবার ঘুরেছে স্থায়ী আমানত এবং বন্ডের দিকে। ব্যাঙ্ক জমায় সুদ বাড়ার পাশাপাশি তা বেড়েছে সংস্থার স্থায়ী আমানত এবং বন্ডেও। বাজার থেকে মোটা তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে গৃহঋণ সংস্থা-সহ বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি)। এ ছাড়া এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় অঙ্কের বন্ড ইস্যু নিয়ে বাজারে আসতে। ডিএইচএফএলের বড় সাফল্যের পর যেমন, এ বার বন্ড নিয়ে বাজারে হাজির হতে চলেছে শ্রীরাম ট্রান্সপোর্ট ফিনান্স। ‘এএ+’ রেটিং যুক্ত এদের বন্ড ইস্যুর আকার হতে পারে ৫,০০০ কোটি টাকা। ৩, ৫, ৭ এবং ১০ বছরের মেয়াদে সুদ দেওয়া হবে ৮.৯% থেকে ৯.২৫%। বর্তমান ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় ১% থেকে ১.৫% বেশি।
অন্য দিকে, রিলায়্যান্স জিয়ো ইনফোকম ২,০০০ কোটি টাকা বাজার থেকে সংগ্রহ করছে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। এই ইস্যুতে সুদের হার ৮.৭%। মেয়াদ ৩ বছর। অর্থাৎ ছোট লগ্নিকারীদের কাছে এখন দেখা দিয়েছে নানা বিকল্প। তবে প্রকল্প বাছতে হবে সাবধানে। এফডি এবং বন্ডের দিকে কিছু তহবিল ঘুরে গেলে লগ্নি কমতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডে। এরও বিরূপ প্রভাব পড়বে বাজারে।
নানা বন্ড ইস্যুর পাশাপাশি আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়ালের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার বাজারে আনতে চলেছে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘ভারত ২২ ইটিএফ’ ফান্ড। ইস্যুর আকার ৬,০০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ইস্যু করা এই ধরনের প্রথম ফান্ডে লগ্নি করে লগ্নিকারীরা এখনও তেমন লাভের সন্ধান পাননি। তবে বাজারের খারাপ দিনে লোকসানও খুব একটা হয়নি। বাজারের সুদিনে এই লগ্নিতে লাভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ‘ভারত ২২’ প্রকল্পের তহবিল লগ্নি করা হয় বাছাই করা প্রথম সারির কয়েকটি সংস্থায়। প্রথম ইস্যুর মতো এ বারের ইস্যুতেও সব শ্রেণির লগ্নিকারীকে দেওয়া হবে ২.৫% ছাড়। ইস্যুটি খুলবে ১৯ জুন।
এ দিকে, ১৬,০০০ কোটি টাকার শেয়ার ফেরানোর (বাইব্যাক) কথা ঘোষণা করেছে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। সংস্থাটি নিজের ৭.৬১ কোটি শেয়ার সদস্যদের থেকে কিনে নেবে শেয়ারপিছু ২,১০০ টাকায়, এখন শেয়ারের বাজারদর ঘোরাফেরা করছে ১,৮০০ টাকার আশেপাশে। উল্লেখ্য, গত বছরেও টিসিএস একই অঙ্কের (১৬,০০০ কোটি টাকা) বাইব্যাক করেছিল শেয়ার পিছু ২,৮৫০ টাকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy