Advertisement
E-Paper

আশঙ্কার মেঘ ঘনালেও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি আছে বাজারের

বাজারে টানা পতন চলেছে গোটা সপ্তাহ জুড়ে। যার শুরু আগের শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারি। ২৯,৬৮২অঙ্ক ছোঁয়ার পরে হঠৎই লম্বা সাপের মুখে পড়ে সেনসেক্স। গোটা সপ্তাহ ধরে নেমে তা দাঁড়ায় ২৮,৭১৭ অঙ্কে। এতটা ওঠার পরে হাজার পয়েন্ট নামাটা অস্বাভাবিক নয়। বরং এ রকম সংশোধন হওয়ারই কথা ছিল। যেটি চিন্তার তা হল, অনুকূল পরিস্থিতির হঠাৎই খানিকটা পরিবর্তন। পরিষ্কার আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছে টুকরো টুকরো কালো মেঘ।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪

বাজারে টানা পতন চলেছে গোটা সপ্তাহ জুড়ে। যার শুরু আগের শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারি। ২৯,৬৮২অঙ্ক ছোঁয়ার পরে হঠৎই লম্বা সাপের মুখে পড়ে সেনসেক্স। গোটা সপ্তাহ ধরে নেমে তা দাঁড়ায় ২৮,৭১৭ অঙ্কে। এতটা ওঠার পরে হাজার পয়েন্ট নামাটা অস্বাভাবিক নয়। বরং এ রকম সংশোধন হওয়ারই কথা ছিল। যেটি চিন্তার তা হল, অনুকূল পরিস্থিতির হঠাৎই খানিকটা পরিবর্তন। পরিষ্কার আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছে টুকরো টুকরো কালো মেঘ। যে-সব কারণে বাজার কিছুটা উদ্বিগ্ন, তা হল:

• খারাপ ত্রৈমাসিক ফলাফল: যে-ব্যাঙ্কিং সূচক বাজারকে এতটা উঠতে বড় মদত জুগিয়েছিল, তা-ই এ বার টেনে নামিয়েছে সূচককে। আইসিআইসিআই এবং পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের পরে খারাপ ফল প্রকাশ করেছে কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও। ঋণ আদায় না-হওয়ায় তাদের অনুৎপাদক সম্পদ হঠাৎই অনেকটা বেড়েছে। ফলে গোটা ব্যাঙ্কিং শিল্পই সঙ্কটের মুখে। বিভিন্ন শিল্প যে-এখনও সমস্যা থেকে বেরোতে পারেনি, অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত। যে-সব ব্যাঙ্ক আশার তুলনায় খারাপ ফল করেছে, তাদের মধ্যে আছে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইউকো, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক। কানাড়া ও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ফল যদিও ভাল হয়েছে। এ ছাড়া, খারাপ ফলাফলের তালিকায় আছে টাটা মোটরস এবং টাটা স্টিলও। ভারতী এয়ারটেলের মতো কিছু সংস্থা ভাল ফল করলেও তা সূচকের পতন আটকাতে পারেনি। বাকি সব ফলাফল প্রকাশিত হয়ে যাবে চলতি সপ্তাহে। স্লগ ওভারে বাজার কেমন খেলে, সেটাই এখন দেখার।

• দিল্লির নির্বাচন: শেষ বেলার ইঙ্গিত, দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া প্রথমবার থমকে যেতে পারে। এই আশঙ্কাও সূচককে টেনে নামায় সপ্তাহের শেষ দিকে। দিল্লিতে সরকার গড়তে না-পারলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় রাজনীতিতে। সমস্যা হতে পারে রাজ্যসভায় সমর্থন বৃদ্ধিতে এবং সংস্কারমুখী বিভিন্ন বিল পাশ করানোর ব্যাপারে। মঙ্গলবার ফলাফলের ভিত্তিতে আন্দোলিত হবে বাজার।

• শেয়ার বিক্রি: কোল ইন্ডিয়া এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মোটা টাকার শেয়ার বিক্রি বাজার থেকে শুষে নিয়েছে কমবেশি ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এতেও দুর্বল হয়েছে সূচক।

তবে হঠাৎ এক ঝাঁক প্রতিকূল শর্ত বাজারে এসে পড়লেও, ঘুরে দাঁড়ানোর শর্তও মজুত আছে বাজারের হাতে। দেখে নেওয়া যাক:

১) ২৮ তারিখে কেন্দ্রীয় বাজেট। এর আগেই দিল্লির নির্বাচন এবং ত্রৈমাসিক ফলের প্রভাব অনুযায়ী বাজার নিজেকে গুছিয়ে নেবে। তবে বাজার আরও নামলে, অরুণ জেটলির উপর দায়িত্ব বর্তাবে বাজেটের মাধ্যমে তাকে শোধরানোর। এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা লগ্নিকারীদের বাজারমুখী করবে।

অর্থমন্ত্রীর হাতে এ বার রসদও প্রচুর। তেলের দর কমায় সরকারের সাশ্রয় হবে কম- বেশি ১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে বাজেট দেরিতে হওয়ায় বহু দফতরই বণ্টিত অর্থের বড় অংশ খরচ করে উঠতে পারেনি। যার পরিমাণ আনুমানিক ৮০ হাজার কোটি। বিলগ্নিকরণের পথে কেন্দ্র পেতে পারে ৪৫,০০০ কোটি। অর্থাৎ এতটা তহবিল হাতে পাওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে উদার হওয়ার সুযোগ পাবেন অর্থমন্ত্রী।

এ বার সরকারের মূল লক্ষ্য উন্নয়ন। বড় অঙ্ক বরাদ্দ হতে পারে পরিকাঠামো উন্নয়নে। প্রস্তাব এসেছে, ডিভিডেন্ড বণ্টন কর বিলোপ করা অথবা করের হার কমিয়ে আনার। এটি মঞ্জুর হলে তা সূচককে শক্তি জোগাবে। উপকৃত হবেন মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরাও। উৎপাদন শুল্কে ছাড় পুনর্বহাল হতে পারে গাড়ি শিল্পে। এটিও বাজারের জন্য বড় সুখবর হতে পারে। কিছু কিছু শর্ত শিথিল করা হতে পারে ভারতে বিদেশি লগ্নি আকর্ষণের লক্ষ্যে। সব মিলিয়ে বাজার লগ্নিকারীদের দিকে কিছুটা ঢলে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং তা যদি হয়, তবে সূচকও ফের মুখ তুলবে।

২) সুদ ফের না-কমলেও এসএলআর কমিয়ে বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গত সপ্তাহে ফের দাম কমেছে পেট্রোল, ডিজেলের। এর জেরে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও কমলে সুদ কমার সম্ভাবনা।

৩) ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিক থেকে ভারত এখন আন্তর্জাতিক লগ্নির শ্রেষ্ঠ গন্তব্যস্থল। অর্থাৎ বিদেশি লগ্নিতে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বাজেটের কাজ হবে দেশের সাধারণ লগ্নিকারীদের ইকুইটির দুনিয়ায় ফেরানো। সেনসেক্স ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে থামা সত্ত্বেও এই অর্থবর্ষের প্রথম ১০ মাসে খোলা হয়েছে মাত্র ১২.৯ লক্ষ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। ২০০৭-’০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ লক্ষ।

৪) ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে পুরোপুরি নজর থাকবে মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটের দিকে। এর থেকে বাজারের প্রত্যাশা বিরাট। তা মিটলে বাজার ফের উঠবে। না হলে অধঃপতন।

দুঃখের বিষয়, এ বার বাজেট শনিবার পড়ায় শেয়ার বাজার সম্ভবত খোলা থাকবে না। ফলে সূচকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে সোমবারের জন্য।

amitabha guha sarkar share market sensex nifty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy