Advertisement
১৯ মে ২০২৪
বাধা আইনি ফাঁস

পিএফের পেনশন বাড়ানোর পথ দেখাতে পারে বিমা তহবিলের উদ্বৃত্ত

টাকা নেই। এই অজুহাতেই আজ প্রায় এক যুগ তলানিতে পড়ে আছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) পেনশন। অথচ সেই পিএফেরই বিমা তহবিলে পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত খাতে, ব্যবহার না-হয়ে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কলমের আঁচড়ে আইন সামান্য বদলালেই ওই টাকা ব্যবহার করা যাবে পেনশন খাতে। আর তাতে পেনশন তো বাড়বেই, এমনকী তা বৃদ্ধির হার রীতিমতো টক্কর দিতে পারবে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

টাকা নেই। এই অজুহাতেই আজ প্রায় এক যুগ তলানিতে পড়ে আছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) পেনশন। অথচ সেই পিএফেরই বিমা তহবিলে পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত খাতে, ব্যবহার না-হয়ে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কলমের আঁচড়ে আইন সামান্য বদলালেই ওই টাকা ব্যবহার করা যাবে পেনশন খাতে। আর তাতে পেনশন তো বাড়বেই, এমনকী তা বৃদ্ধির হার রীতিমতো টক্কর দিতে পারবে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে।

সেই ২০০১ সালের পরে গত ১৪ বছরে ঠেলেঠুলে বেড়েছে শুধু ন্যূনতম পেনশনের অঙ্ক। হয়েছে ১,০০০ টাকা। কিন্তু তার বাইরে ২০০১ সালে যিনি ১,০০১ টাকা পেনশন পেতেন, আজও তাঁর প্রাপ্য তা-ই। আর সেই কারণেই জোরালো হয়েছে পিএফের পেনশন বৃদ্ধির দাবি।

১৯৯৫-এর নভেম্বরে চালু হওয়া পিএফ-পেনশন প্রকল্পের রূপকার তথা সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (এসএসএআই)-র সেক্রেটারি জেনারেল বি এন সোম বলেন, “বিশ্বের প্রায় সব পেনশন প্রকল্পেই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে প্রাপ্য বাড়ে। এর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন জরুরি। কিন্তু পিএফের পেনশনের জন্য তা হয়নি। ফলে গত ১৪ বছরে সে ভাবে তা বাড়েওনি। অথচ আমরা সমীক্ষায় দেখেছি, পিএফের বিমা তহবিলকে পেনশনের সঙ্গে যুক্ত করলে, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে বছরে ৫ থেকে ৮% পর্যন্ত পেনশন বাড়ানো সম্ভব। সেই সমীক্ষা পিএফ কর্তৃপক্ষের কাছে জমাও দিয়েছি।”

পেনশন বাড়ানোর কথা উঠলেই, বরাবর তহবিলে ঘাটতির কথা বলেছে পিএফ। অথচ সেই পিএফেরই ব্যালান্স শিট থেকে দেখা যাচ্ছে, তার বিমা তহবিলে (এমপ্লয়িজ ডেথ লিঙ্কড ইনশিওরেন্স বা ইডিএলআই) স্রেফ অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১২ সালের ৩১ মার্চ ওই তহবিলে উদ্বৃত্ত ছিল ১২,০৯০ কোটি টাকা। তার উপর ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে সেখান থেকে সুদ বাবদ আয় হয়েছে ১,০২৮ কোটি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নিয়োগকারীদের দেওয়া (এমপ্লয়ার্স কনট্রিবিউশন) ৬২০ কোটি টাকা। অথচ সেখানে বিমার ক্ষতিপূরণ বা ‘ক্লেম’ মেটাতে ওই একই বছরে খরচ হয়েছে মাত্র ১২৫ কোটি। অর্থাৎ, শুধু এই একটি অর্থ বছরেই তহবিলে বেড়েছে ১,৫২৩ কোটি টাকা। ফলে আগে জমা থাকা ১২,০৯০ টাকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ২০১২-’১৩ সালের শেষে উদ্বৃত্তের অঙ্ক পৌঁছেছে ১৩,৬১৩ কোটি টাকায়।

এমনিতে পিএফের আওতায় থাকা কোনও কর্মী চাকরি করা অবস্থায় মারা গেলে, শুধু তাঁর পরিবারেরই টাকা পাওয়ার কথা ইডিএলআই তহবিল থেকে। ফলে সেখানকার টাকা পেনশন খাতে ব্যবহার কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? বিশেষত যেখানে কিছু দিন আগেই বিমার অঙ্ক ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পেনশন বাড়াতে বিমা-তহবিলের টাকা ব্যবহার হলেও টান পড়বে না ইডিএলআইয়ে। কারণ

• আগে হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পিএফের আওতায় আসতেন তাঁরাই, মাসে যাঁদের মূল বেতন ৬,৫০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন সেই ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হয়েছে ১৫,০০০। ফলে এক দিকে অনেক নতুন কর্মী পিএফের আওতায় আসছেন। তেমনই অন্য দিকে, মূল বেতন বেশি হওয়ায়, সেখান থেকে বিমা খাতে টাকাও আসবে বেশি। সুতরাং ইডিএলআই তহবিলে উদ্বৃত্ত বাড়বে আরও দ্রুত হারে।

• আইন অনুযায়ী, প্রতি সংস্থার কাছ থেকে সেখানে পিএফের আওতায় থাকা সমস্ত কর্মীর মোট বেতনের ১% টাকা ইডিএলআই তহবিলের জন্য আদায় করতে পারেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আদায় করা হয় ০.৫%। কারণ বিমার ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে তাতেও টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও ওই তহবিলের জন্য আইন মেনেই নিয়োগকারীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায়ের সুযোগ আছে।

• সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, বছরে পেনশন ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাড়লেও বিমা তহবিলে টাকার ঘাটতি হবে না। বরং ইডিএলআইয়ে উদ্বৃত্ত যে-হারে বাড়ে, তাতে পেনশন ৫% করে বাড়তে থাকলেও পাঁচ বছরে ওই উদ্বৃত্ত পৌঁছবে প্রায় ২৫ হাজার কোটিতে। যেমন সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, পেনশন ৫% বাড়লে ২০১২-’১৩ সালে লাগত ৩১২ কোটি টাকা। এ ভাবে পাঁচ বছর পরেও সেখানে প্রয়োজন হবে ৫৪৬ কোটি টাকা। ফলে তা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত বাড়াতে অসুবিধা হবে না ইডিএলআইয়ের।

• শুধু বিমা তহবিলের উপর নির্ভর করারও প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, শীঘ্রই পেনশন শুরুর বয়স ৫৮ থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করতে চলেছেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। সেই সূত্রেও হাতে আসবে বিপুল অঙ্ক। ওই টাকাও পেনশন বাড়াতে ব্যবহার করা সম্ভব বলে তাঁদের দাবি।

সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এই সমস্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেনশন বাড়াতে এখনও উদ্যোগী হননি পিএফ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, আইনের সামান্য একটু পরিবর্তন করলেই পেনশন বাড়ানো সম্ভব। অথচ তা খতিয়ে দেখা হয়নি কখনও।

আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি এবং পিএফের অছি পরিষদের সদস্য রমেন পান্ডের অভিযোগ, “পিএফের পেনশনভোগীদের উপর অবিচার হচ্ছে। এসএসএআইয়ের সমীক্ষা খতিয়ে দেখেছি। ইডিএলআইয়ের তহবিল যোগ করে সহজেই পেনশন বাড়ানো সম্ভব। এ নিয়ে অছি পরিষদে আইন সংশোধনের দাবি জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pf provident fund pension pragyananda chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE