নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে, তাঁকে পরামর্শ দিতে রাজি জগদীশ ভগবতী। তবে সরকারের বাইরে থেকে। ৮০ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হওয়ার ইচ্ছে বা উদ্যম তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্থনীতিবিদ। বরং ওই পদে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালটিতে তাঁর সতীর্থ অরবিন্দ পানাগরিয়ার নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। সম্প্রতি যার সঙ্গে যৌথ ভাবে লেখা বইয়ে অর্থনীতির উন্নতির উদাহরণ হিসেবে গুজরাতকে তুলে ধরেছেন ভগবতী। আর তা নিয়ে যুক্তির লড়াইয়ে জড়িয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে। অবশ্য বিজেপি মুখপাত্রের দাবি, পরামর্শের জন্য ভগবতী বা পানাগরিয়াকে ডাকার কোনও পরিকল্পনার কথা তাঁর অন্তত জানা নেই।
অনেকে বলেন, বহু বার নাম ওঠা সত্ত্বেও এখনও নোবেল না-পাওয়া জীবিত অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভগবতীই সম্ভবত সব থেকে বিখ্যাত। শিক্ষক এবং গবেষক হিসেবে বরাবর মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। জোর দিয়েছেন বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার উপর। আর সম্প্রতি পানাগরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে লেখা বইয়ে ঝোড়ো গতির বৃদ্ধির জন্য তুলে এনেছেন গুজরাত-প্রসঙ্গ। যে ‘সাফল্য’কে পুঁজি করে এ বার ভোটে গুজরাত মডেলের প্রচার করছেন মোদী।
তাই মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে, এ হেন ভগবতী তাঁর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা হতে পারেন বলে জল্পনা চলছিল কিছু দিন ধরেই। কিন্তু ভগবতী বলেন, “বাইরে থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতে কমিটি তৈরি হলে, অবশ্যই তার নেতৃত্ব দিতে রাজি। হয়তো তারাও সে রকম ভাববে। তবে এই আশি বছরে মুখ্য উপদেষ্টা হওয়ার উদ্যম আর নেই। তার জন্য ষাট বছরের পানাগরিয়াই সঠিক ব্যক্তি।” মোদী ঘনিষ্ঠ কয়েক জন তাঁর কাছে পানাগরিয়া সম্পর্কে জানতেও চেয়েছেন বলে ভগবতীর দাবি।
মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে, অর্থনীতির হাল ফেরাতে প্রথম পরামর্শ কী হবে, তা অবশ্য জানিয়েছেন ভগবতী। বলেছেন, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক শক্তি হতে হবে ভারতকে। আরও অনেক বেশি করে খুলতে হবে বিদেশি লগ্নির দরজা। বিশেষত বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে। ধীরে হলেও মোদী তা করবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে, বহু ব্র্যান্ডের রিটেলে বিদেশি লগ্নি নিয়ে বিরোধিতা ইস্তেহারেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, সার্বিক উন্নয়নের সঠিক রাস্তা কোনটি, তা নিয়ে কিছু দিন আগে যুক্তির তীব্র লড়াই চলেছে অমর্ত্য সেন ও ভগবতীর মধ্যে। অমর্ত্য সেনের মতে, বৃদ্ধি উন্নয়নের মাধ্যম মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। তাই শুধু তার দিকে না-তাকিয়ে সরকারের উচিত সামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি লগ্নি করা। টাকা ঢালা স্বাস্থ্য-শিক্ষায়। তবেই গড়াবে উন্নয়নের চাকা। চড়বে বৃদ্ধির হারও। কেরল যে মডেলের অন্যতম উদাহরণ। উল্টো দিকে, ভগবতী মনে করেন, বৃদ্ধিই উন্নয়নের চাবিকাঠি। তার হার বাড়লে, তবেই সামাজিক খাতে ঢালার মতো টাকা আসবে সরকারের হাতে। তাই পাখির চোখ হওয়া উচিত বৃদ্ধিই। আর এরই উদাহরণ হিসেবে বার বার গুজরাতের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
এ দিন কলকাতায় অবশ্য মোদীর গুজরাতকে তুলোধোনা করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি। তা করতে গিয়ে টেনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। তাঁর মতে, “মোদী ও মমতার পার্থক্য নেই। দু’জনেই অসহিষ্ণু। ‘না’ শুনতে চান না। ধার করাতেও এগিয়ে গুজরাত ও পশ্চিমবঙ্গ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy