অর্থনীতির হাল ফেরা নিয়ে আশা জাগিয়ে সদ্য শেষ হওয়া ২০১৪-র নভেম্বরে ঘুরে দাঁড়াল শিল্পোৎপাদন। গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে তা ছুঁল ৩.৮ শতাংশ। তবে কিছুটা হতাশ করেছে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। শাক-সব্জি, ফলের মতো খ্যদ্য সামগ্রীর চড়া দাম ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধিকে ঠেলে তুলেছে ৫ শতাংশে, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর পথে ফের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিল্পমহল। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতি ফিরে দেখবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
সোমবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে মূলত কল-কারখানা এবং খনন ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ার হাত ধরে নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন ৩.৮% বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে যন্ত্রপাতির মতো মূলধনী পণ্যের উৎপাদন, যা ভাল লক্ষণ বলেই মনে করছেন বিভিন্ন সরকারি কর্তা ও অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, এটা সামগ্রিক ভাবে চাহিদা বাড়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে শিল্পোৎপাদন আরও বাড়ার রসদ জোগাবে।
প্রসঙ্গত, অক্টোবরে শিল্প বৃদ্ধির হার সরাসরি কমেছিল ৪.২%। ২০১৩-র একই সময়ে তা কমেছিল ১.৩%। ২০১৪-র এপ্রিল থেকে নভেম্বর, এই আট মাসের হিসাব ধরলে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ২.২%।
নভেম্বরে কল-কারখানার উৎপাদন বেড়েছে ৩%। উল্লেখ্য, সার্বিক শিল্প বৃদ্ধির হিসাবে এর গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি, ৭৫%। ২২ ধরনের উৎপাদনের মধ্যে ১৬টি ক্ষেত্রই ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর এই সময়ে তা কমেছিল ২.৬%। খনন শিল্পে নভেম্বরে বৃদ্ধির হার ৩.৪%, আগের বছরের হার ১.৬%। তবে ভাল হারে বেড়েছে যন্ত্রপাতির মতো মূলধনী পণ্য, ৬.৫%। গত বছর একই মাসে তা বাড়ে মাত্র ০.১%। এপ্রিল থেকে নভেম্বরেও এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে ৪.৯%। নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ১০%, গত বছরের একই সময়ের হার ৬.৩%। সাধারণ ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন অবশ্য কমেছে ২.২%, যদিও এক বছর আগে তা কমেছিল ৮.৯% হারে। পাশাপাশি ফ্রিজ, টিভি ইত্যাদি বৈদ্যুতিন পণ্যের উৎপাদন কমেছে ১৪.৫%। গত বছরে অবশ্য তা কমার হার ছিল আরও বেশি, ২১.৭%।
অন্য দিকে, ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরের ৪.৩৮% থেকে বেড়ে ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৫%। ২০১৩-র ডিসেম্বরে তা ছিল ৯.৮৭%। এ দিনই প্রকাশিত এই হার অনুসারে খাদ্য সামগ্রীর দামই বেড়েছে ৪.৭৮%। যেমন, শাক-সব্জির দাম ডিসেম্বরে ০.৫৮% বেড়েছে, যদিও নভেম্বরে তা কমেছিল ১০.৯%। ফলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫%। তবে ডিম, মাছ, মাংসের দাম কমেছে ৫.২৪%। শস্য ও শস্যজাত পণ্যের দরও কমেছে প্রায় ৪%। তবে ডাল ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বেড়েছে ৭.২৪%।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও শিল্পমহল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবারও সুদ কমানোর দাবি জানিয়েছে। তাদের যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধি নামমাত্র বেড়েছে। বরং সুদ কমলে তা শিল্পে নতুন লগ্নিতে উৎসাহ দিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির গতি বাড়াতে সাহায্য করবে।
বণিকসভা সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যো -পাধ্যায় বলেন, “খুচরো মূল্যবৃদ্ধি সামান্য উপরে ওঠা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। সুদ কমানো সত্যিই জরুরি, কারণ নতুন লগ্নি এখনও থমকে। ফ্রিজ-টিভি-র মতো ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও তেমন বাড়েনি।”
ফিকি প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি আবার কিছুটা সতর্ক। তিনি বলেন, “নভেম্বরে কল-কারখানার উৎপাদন বাড়া নিশ্চয়ই আনন্দের। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগের বছরের কম হারের ভিত্তির উপর হিসাব করা হয়েছে বলেই এ বারের অঙ্ক বেশি। তবে গত কয়েক মাসে কেন্দ্র যে-সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে শিল্পমহলে উৎসাহ তৈরি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy