এমন স্বচ্ছ জলেই শিক্ষানবিশদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিয়ম। নিজস্ব চিত্র
ঘোলা জল নয়, শিক্ষানবিশ সাঁতারুদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে স্বচ্ছ জলে। কলকাতা পুরসভার এমন নির্দেশে শিক্ষানবিশদের প্রশিক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল শহরে সাঁতার প্রশিক্ষণের প্রাচীন ক্লাবগুলোতে।
হেদুয়া, কলেজ স্কোয়ার, টালা পার্ক বা রবীন্দ্র সরোবর— সাঁতারের ক্লাব বা প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কোনওটি শতাব্দীপ্রাচীন, কোনওটি একশো বছরে পা দেবে। ওই সব ক্লাব থেকেই অতীতে বহু সাঁতারু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি পেয়েছেন। ওই সব ক্লাবে প্রতি মরসুমে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সাঁতার শেখে। তবে সেখানে জল স্বচ্ছ নয় বলেই অভিযোগ। মূল জলাশয়ের গভীর জল থেকে আলাদা করে একটি ঘেরা জায়গায় শিক্ষানবিশদের সাঁতার শেখানো হয়। যেখান থেকে গভীর জলে পড়ে সম্প্রতি কলেজ স্কোয়ার কিংবা কয়েক মাস আগে রবীন্দ্র সরোবরে মৃত্যু হয়েছে।
ক্লাবগুলির দাবি, পুরসভার নতুন নিয়ম মানতে হলে নতুন সাঁতারুদের প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হবে। কারণ জল স্বচ্ছ করতে হলে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসাতে হবে। নতুন করে পুল তৈরি করতে প্রচুর খরচ। সাঁতারের প্রশিক্ষকদের মতে, পুরসভার নির্দেশ মানার মতো পরিকাঠামো ওই সব প্রাচীন ক্লাবে নেই।
ওই সব প্রাচীন ক্লাবের কর্তারা জানান, বিগত কয়েক বছরে তাঁদের কাছে সাঁতার শিখতে আসা সদস্যের সংখ্যা কমেছে। হেদুয়ার দুই প্রাচীন প্রশিক্ষণকেন্দ্র ন্যাশনাল সুইমিং ক্লাব ও সেন্ট্রাল সুইমিং ক্লাবের দাবি, কয়েক বছরে তাদের সদস্য সংখ্যা দু’হাজার থেকে কমে অর্ধেকের কাছে নেমে এসেছে। ন্যাশনাল সুইমিং ক্লাবের কর্তা সনৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এখন অত্যাধুনিক আবাসন কিংবা পাড়ার ক্লাবের সুইমিং পুলেই অনেকে সাঁতার শেখেন। ফলে এত দূর কেউ সাঁতার শিখতে আসতে চান না।’’ তাই কর্মকর্তাদের আশঙ্কা পুরসভার নির্দেশ মেনে জল স্বচ্ছ না করলে শিক্ষানবিশদের প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দিতে হবে। তাতে সদস্য আরও কমে যাবে। শহরে সাঁতার শেখার প্রাচীন ক্লাবগুলি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে।’’
কলেজ স্কোয়ারের একটি ক্লাবের কর্তা গৌতম মল্লিকের দাবি, সদস্য সংখ্যা কমলেও এখনও তাঁদের পুলে দু’বেলা বহু খুদে সাঁতার শেখে। তিনি বলেন, ‘‘খুব কম টাকায় আমরা সাঁতার শেখাই। দক্ষ প্রশিক্ষক রয়েছেন। ভাল সাঁতার কাটলে বড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগও রয়েছে।’’
তবে ক্লাবগুলি মানছে যে স্বচ্ছ জলে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সদস্য সংখ্যা বাড়বে। এক ক্লাবকর্তার কথায়, ‘‘শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবগুলি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। স্বচ্ছ জলের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পুর প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এত কিছু সম্ভব নয়।’’
অবশ্য কলকাতা পুরসভার বক্তব্য, ক্লাবগুলি তাদের সমস্যার কথা জানালে তা নিয়ে আলোচনার জায়গা রয়েছে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ক্লাবগুলি আমাদের কাছে এলে কথা বলা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy