প্রতীকী ছবি
এ যেন দ্বিমুখী আক্রমণ। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যেই শরীরে বাসা বেঁধেছিল নোভেল করোনাভাইরাস। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন আপস করে চলেছে, তখন স্রেফ মনের জোরে করোনাকে হারিয়ে জীবনের জয়গানের মুখ হয়ে উঠলেন ৩৮ বছরের যুবক।
বছর ছয়েক আগের কথা। নদিয়ার বাসিন্দা ওই যুবকের কাঁধের বাঁ দিকে একটি টিউমার দেখা দিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে মাংসপিণ্ডটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, ওই যুবক অস্থি ক্যানসারে আক্রান্ত। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় এবং চিকিৎসক সোমনাথ সরকারের তত্ত্বাবধানে ওই যুবকের চিকিৎসা শুরু হয়। সোমনাথবাবু জানান, ক্যানসার চিকিৎসক এস এইচ আডবাণীর তৈরি করে দেওয়া প্রোটোকল মেনে যুবকের কেমোথেরাপি শুরু হয়েছিল। ওই যুবক জানান, এক বছর পরে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চার বছর পরে পিঠের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ক্যানসার অস্থিমজ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ফের কেমোথেরাপি শুরু হয় রোগীর।
ক্যানসারের দ্বিতীয় দফার আক্রমণ যখন সবে সামলে উঠেছেন, ফের শারীরিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন ওই যুবক। পঞ্চম পর্বের কেমোথেরাপির অষ্টম দিনে ঘটনাটি ঘটে। আগের মাসের মতো এ বারও কেমোথেরাপির আগে যুবকের করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগের রিপোর্টগুলি নেগেটিভ হলেও এ বার রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।
ওই যুবক জানান, মৃদু উপসর্গ ছাড়া তেমন কোনও শারীরিক অস্বস্তি ছিল না তাঁর। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে বয়স্ক শ্বাসকষ্টের রোগীদের মাঝে প্রথমে খানিক আতঙ্কিত বোধ করছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যানসার-যোদ্ধা দ্রুত নিজেকে সেই অবস্থা থেকে বার করে ভাইরাসের সঙ্গে স্নায়ুর লড়াইয়ে মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যান। মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তাঁর দুই চিকিৎসক খুবই সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছেন যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক এবং পরিজনেরা যে ভাবে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, তা কখনও ভুলব না। ক্যানসার রোগীদের বলব, এটাও আর পাঁচটা রোগের মতো। ভয় না-পেয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন।’’
চিকিৎসক সোমনাথবাবু জানান, ওই যুবকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে হেতু কম, তাই উদ্বেগের কারণ ছিল। সাত দিন পরে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে যুবককে জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কঠিন পরিস্থিতিতে মনের জোরে কতখানি কাজ হয়, এই ঘটনা তার প্রমাণ।’’ চিকিৎসক গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ওই যুবক এক বার ক্যানসারমুক্ত হওয়ার পরে ফের ক্যানসারের গ্রাসে চলে আসেন। এ ক্ষেত্রে এক জন রোগীর মানসিক অবস্থা কী হয়, তা আমরা জানি। করোনাও প্রবল মানসিক চাপ তৈরি করে। সে দিক থেকে ওই যুবকের লড়াকু মনোভাব সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
আরও পড়ুন: বন্দির করোনা, খাবার দেওয়ার বিধি বদল জেলে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy