Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ শহরে বিকেলের অতিথি অচিন ফরাসি কবি

শনিবার বিকেলে বলছিলেন জয় গোস্বামী। ঠিক দু’দিন আগে ভরসন্ধ্যায় তাঁর বাড়ির দোরগোড়ায় এক ছিপছিপে ফরাসি তরুণ।

আলাপচারিতা: জয় গোস্বামীর সঙ্গে ইয়েকতা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

আলাপচারিতা: জয় গোস্বামীর সঙ্গে ইয়েকতা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

অন্য ভাষার কবিদের সঙ্গে আলাপ তো কম হয়নি তাঁর। তবু এমন ঘটনা তাঁকেও অবাক করেছে।

শনিবার বিকেলে বলছিলেন জয় গোস্বামী। ঠিক দু’দিন আগে ভরসন্ধ্যায় তাঁর বাড়ির দোরগোড়ায় এক ছিপছিপে ফরাসি তরুণ। প্যারিস থেকে দিল্লি হয়ে সদ্য প্রথমবার কলকাতায় নেমেছেন তিনি। ঈষৎ ক্ষয়াটে গালে, কোটরাগত দু’টি চোখ কিন্তু আশ্চর্য উজ্জ্বল। খানিক ক্ষণ বাদে ফরাসি ভাষায় অ-সামান্য গান ধরলেন সেই কবি।

সল্টলেকে জয়ের বাড়িতে হঠাৎ আসা এই আগন্তুক কবির নাম ইয়েকতা। দেশবিদেশের কবিদের নিয়ে শহরে এখন চলছে, একটি অভিনব কবিতা উৎসব, চেয়ার পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল। তাতেই শহরের কবির সঙ্গে ভিনদেশি কবির এমন মেলবন্ধন। ইয়েকতা বলছিলেন, ‘‘তখন সন্ধে হয়ে আসছে বলে আমার একটু লজ্জা করছিল! ক্নান্তও ছিলাম। কিন্তু নতুন শহরে এসে কি হোটেলে চুপচাপ বসে থাকব?’’ তাই অচিন শহরে অজানা ভাষার কবির বাড়িতে অভিযান। গত বছর মুম্বইবাসী এক লেখক শর্মিষ্ঠা মোহান্তির সঙ্গে ইয়েকতার পরিচয় স্লোভেনিয়ার এক সাহিত্য বাসরে। কলকাতার নেমন্তন্ন পেয়ে তাঁর কাছেই আবদার করেছিলেন, এই শহরের কোনও কবির সঙ্গে আলাপ করাতে। জয়ের কন্যা বুকুনের মাধ্যমে শর্মিষ্ঠাই এ যোগাযোগ করিয়ে দেন।

দেশ-বিদেশের কবির অভিজ্ঞতার শরিক হতে চান ইয়েকতা। এবং কবি-পরিচয়ে ফরাসি সমাজের ভেতরের দেওয়ালগুলোতেও ঘা দিতে চান। কী ভাবে? ইয়েকতা হাসলেন, ‘‘ফরাসি মা আমায় একলা বড় করেছেন। কিন্তু বাবা তুরস্কের। ইচ্ছে করে এই তুর্কি নামটা বয়ে বেড়াচ্ছি। ইয়েকতা মানে অনন্য।’’ তাঁর নামটাই যেন একটা অস্ত্র। এমনিতে পেশায় ফৌজদারি মামলার আইনজীবী। একটা ফরাসি নামও আছে খাতায়-কলমে। ‘‘ইয়েকতা নামটা আমার পেশাগত পরিচয় লুকিয়ে রাখে, আবার একটা বহিরাগত তকমাও দেয়! ফরাসিদের জাত্যাভিমানে ঘা দিতেও নামটা কাজে আসে বেশ।’’ কবিতা লেখার নাম থেকে শুরু করে কবিতা জুড়ে নাগরিক অনুষঙ্গে চলতি ব্যবস্থার সঙ্গে যেন সংঘাতে শামিল ইয়েকতা। ‘‘কিন্তু ওঁর মধ্যে একটা ভারী মিষ্টি নরম মানুষও আছে!’’— বলছিলেন, জয়ের কন্যা বুকুন। ‘‘আমার মায়ের রান্না লুচি-আলুর দম খেয়ে সবিনয় অনুমতি নিলেন, ওঁদের দেশীয় কেতায় মাকে একবারটি ‘হাগ’ করার জন্য!’’ জয় মৃদু আফশোসের সুরেই বললেন, ‘‘দেশবিদেশের এত কবির উৎসবে ওঁরা আমায় শুনতে আসার ডাকও তো দিতে পারতেন।’’ শঙ্খ ঘোষের হাতে উৎসবের উদ্বোধনের পরে কবিতা পড়েছেন সুবোধ সরকার, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। অন্যতম উদ্যোক্তা সনেট মণ্ডল বললেন, ‘‘সব কবিতা বাংলা-ইংরেজিতে অনুবাদ করা হচ্ছে।’’ স্লোভেনিয়ার বারবারা পগাচনিক, মেসিডোনিয়ায় মাদার টেরিজার শহর স্কোপিয়ার কবি ভ্লাদিমির মাতিনভস্কির মতো খুদে ভাষিক গোষ্ঠীর কবিরা বলে গেলেন, ‘‘অনুবাদের জয় হোক! মাতৃভাষায় কবিতা লেখাই আমাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chair Poetry Festival Joy Goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE