E-Paper

অপচয় ও চুরি ঠেকাতে পুরসভার জলের গাড়িতে বসবে জিপিএস

পুরসভার কমিশনার জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন। কলকাতা পুরসভার মোট ১৩৩টি পানীয় জলের গাড়ি রয়েছে। শহরের কোথাও জলের সমস্যা দেখা দিলে পুরসভা সেখানে নিখরচায় জল সরবরাহ করে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৫
কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভা। — ফাইল চিত্র।

পানীয় জলের অপচয় এবং চুরি রুখতে জলের গাড়িতে ‘জিপিএস’ (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) বসাবে কলকাতা পুরসভা। বিশেষ ধরনের ওই যন্ত্র বসানোর পরে পুরসভার সদর দফতর থেকে জলের গাড়িগুলির গতিবিধি খতিয়ে দেখা হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে পুর কোষাগারের অবস্থা শোচনীয়। কর্মীদের বেতন কোথা থেকে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে পুর কমিশনার সুমিত গুপ্ত সম্প্রতি অর্থ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, পুরসভার যে সমস্ত বিভাগ লোকসানে চলছে, তাদের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে চাইছেন নবনিযুক্ত কমিশনার। পুরসভার জলের গাড়ি তার মধ্যে অন্যতম।

পুরসভার কমিশনার জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন। কলকাতা পুরসভার মোট ১৩৩টি পানীয় জলের গাড়ি রয়েছে। শহরের কোথাও জলের সমস্যা দেখা দিলে পুরসভা সেখানে নিখরচায় জল সরবরাহ করে। এ ছাড়াও কোনও অনুষ্ঠান অথবা বিয়েবাড়িউপলক্ষে সাধারণ নাগরিকেরা পুরসভার থেকে টাকার বিনিময়ে জলের গাড়ি আনাতে পারেন। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিটি গাড়ি দিনে আট বার বিভিন্ন বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে গাড়িতে জল ভরে নানা জায়গায় সরবরাহ করে। একটি গাড়ির এক-একটি ট্রিপের জন্য পুরসভাকে খরচ করতে হয় ৩৯৫ টাকা। ওই জল বিক্রি করে যে টাকা পুরসভার আয় হয়, তার চেয়ে তাদের ব্যয়ের বহরই বেশি বলে খবর।

বছরভর প্রতিটি গাড়ি দিনে আটটি করে ট্রিপ করছে। এক-একটি গাড়িতে জল ধরে ৩৬০০ লিটার। সূত্রের খবর, বৈঠকে পুর কমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন,গ্রীষ্মকালে প্রতিটি গাড়ি দিনে আট বার করে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকেজল ভরে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। কিন্তু শীতে যখন জলের চাহিদা কমে যায়, তখনও দিনে আটটি করে ট্রিপ করতে হচ্ছে কেন? বছরের পর বছর পুরসভার জলের গাড়ির পরিষেবায় বিস্তর অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছেন পুর কমিশনার। অথচ, এই পরিষেবার জন্য পুরসভাকে বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, গাড়িতে করে জল সরবরাহের ক্ষেত্রে কোথাও বড়সড় দুর্নীতি চলছে। সেই কারণেই বর্তমান কমিশনার ১৩৩টি জলের গাড়িতেই জিপিএস যন্ত্র বসাতে চান। এ বিষয়ে পুরসভা তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে কথা বলবে। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর জলেরগাড়িতে জিপিএস যন্ত্র বসানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। পুরসভার সদর দফতরে জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকেরা জলের গাড়িগুলির গতিবিধির উপরে নজরদারিচালাবেন।

কলকাতা শহরে পরিস্রুত পানীয় জলের অপচয় বরাবরের বড় সমস্যা। জলের বেহিসেবি ব্যবহার, পুরনো পাইপলাইনের ফাটল থেকে জল পড়ে যাওয়া এবং রাস্তার কলের মুখ খোলা থাকা এর পিছনে বড় কারণ। পুরসভার হিসাব বলছে, এর ফলে প্রতিদিন মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ পানীয় জল নষ্ট হয়। এর উপরে পুরসভার জলের গাড়ি সেই অপচয় বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অতীতে জলের অপচয় ঠেকাতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) টাকায় কেইআইআইপি-র তরফে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় পুরসভার এক থেকে ছয় নম্বর ওয়ার্ডের ১৮৬৫৫টি বাড়িতে জলের মিটার বসানো হয়েছিল। বছর দুয়েক আগে এডিবি মেয়রের কাছে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল, এর ফলেজলের অপচয় প্রায় ৫২ শতাংশ কমেছে। একই ভাবে কেইআইআইপি বেহালা ও জোকার বেশ কিছু ওয়ার্ডেও জলের মিটার বসানোর কাজ শুরু করেছে।

রাস্তার ধারে পুরসভার খোলা জলের কল অপচয়ের আর একটিবড় কারণ। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা নতুন কল বসালেও অনেকে ভেঙে দেয় বা কলের মাথা চুরি হয়ে যায়। ফলে, জলের অপচয় থামানো যাচ্ছে না।’’ একই ভাবে পুরসভার জলের গাড়ি নিয়েও অপচয়ের গন্ধ পাচ্ছেন নয়া কমিশনার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KMC water supply

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy