Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজরদারির উদ্যোগ ঘিরে বিতর্ক যাদবপুরে

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষই কি ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের ওপর নজরদারির নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছেন? এই প্রশ্নটাই এ বার সামনে চলে এল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষই কি ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের ওপর নজরদারির নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছেন? এই প্রশ্নটাই এ বার সামনে চলে এল।

সম্প্রতি আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো সংশোধিত খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের অনৈতিক (আনএথিকাল) এবং অশালীন (ইমমরাল) কাজকর্মের উপর নজরদারি চালাবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এই নজরদারির বিষয়টি ২০১৩ সালে প্রস্তাবিত বিধিতে জুড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। তার আগের বিধিতে এই বিষয়ের উল্লেখ ছিল না। সংযোজনের পরে প্রস্তাবিত খসড়া বিধির প্রতিলিপি পাঠানো হয় আচার্যের দফতরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি কমিটির অন্যতম সদস্য পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০১৩ সালে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে এই বিষয়টি বিধিতে যুক্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, এই সংযোজন নিয়ে মতামত চেয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়। সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষক সংগঠনের মতামত এই সংযোজনের পক্ষেই যাওয়ায় তা বিধিতে রাখা হয়।’’

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, যে সময়ে বিধিতে এই সংযোজন হয়, সেই সময় তিনি ছিলেন না, তাই মন্তব্য করতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপকুমার ঘোষকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘যাঁরা বিধি ঠিক করেছিলেন তাঁরাই জানবেন।’’ কিন্তু ওয়েবসাইটে যখন মতামত চাওয়া হয়, তখন সকলেই তো তা বিবেচনা করেই পক্ষে মত দিয়েছিলেন? ‘‘এ সব আইনি পরিভাষা। আইনজীবীরাই বলতে পারবেন’’, বলেন রেজিস্ট্রার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সভানেত্রী নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, ‘‘এথিকাল বা ইমমরাল— এই শব্দগুলোর নির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা হয় না। পড়ুয়াদের কোন কাজকে এই নজরদারিতে ফেলা হবে তা স্পষ্ট করে জানানো নেই ওই খসড়া বিধিতে। আমরা পরীক্ষায় টোকাটুকি, র‌্যাগিং, ড্রাগ নেওয়ার বিরোধী। কিন্তু নির্দিষ্ট করে তা বিধিতে উল্লেখ করতে হবে। জোর দিতে হবে কী করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্কর্ষ ব়ৃদ্ধি হবে তার উপরে।’’

তা হলে ২০১৩ সালেই তাঁরা আপত্তি জানাননি কেন? নীলাঞ্জনাদেবীর জবাব, ‘‘আমরা মতামত দিয়েছিলাম। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে রেজিস্ট্রারকে প্রশ্ন করেও
সদুত্তর পাইনি।’’

প্রস্তাবিত খসড়া বিধি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবকল্যাণ অধিকর্তা পড়ুয়া এবং গবেষকদের অনৈতিক এবং অশালীন কাজকর্মের উপর নজর রাখবেন। ওই অধিকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস-এর নেতৃত্বে এই কাজ করবেন। সংবাদমাধ্যমে সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও শাস্তির বিধান অবশ্য উল্লেখ করা হয়নি এই খসড়া বিধিতে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, অনৈতিকতা এবং অশালীনতার মাপকাঠি ঠিক করে দেবে কে? ঠিক কোন কোন কাজ বা আচরণকে অনৈতিক বা অশালীন বলা হবে? এ সব স্পষ্ট করে লেখা নেই খসড়া বিধিতে। বিধি কমিটির আইনজীবী সদস্য তথা শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘কোনটা আনএথিকাল, কোনটাই বা ইমমরাল, সেটা ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয়। সেটা জানানো বিধি কমিটির কাজ নয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শুভব্রত দত্ত প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেউ যদি ইমমরাল আচরণের দায়ে দোষী প্রমাণিতও হন, কেন শুধু যুব কল্যাণ অধিকর্তা সেই বিষয়টি বিবেচনা করবেন?’’

প্রস্তাবিত বিধির প্রতিবাদে ১৬ তারিখ যাদবপুরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষকদের একটি সংগঠন অ্যাবুটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘এটি চূড়ান্ত বিধি নয়। কর্মসমিতিতেই সমস্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’

শিক্ষা দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, চূড়ান্ত খসড়া হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না। এই বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, খসড়া বিধির প্রতিলিপি আসলে মতামত চাইতেই পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মী সংগঠনগুলির কাছে। তাঁদের মতামত পাওয়ার পরই কর্মসমিতি তা বিবেচনা করবে এবং ফের আচার্যের কাছে পাঠাবে।

তবে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার প্রশ্নে পার্থবাবু ও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এখন এক নৌকোয় রয়েছেন। এই দুই বিষয়ে তাঁরা কোনও রকম নরম মনোভাব নেওয়ার পক্ষে নন। শিক্ষামন্ত্রী বারবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের অন্যান্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন ঠিকমতো চললেও কেন বারেবারে প্রেসিডেন্সি এবং
যাদবপুরই আন্দোলনের মুখে, বিশৃঙ্খলার মুখে পড়ে?

বিধির এই বাঁধনে কি পরিস্থিতি বদলাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের? এ বিষয়েও পার্থবাবু সরাসরি মন্তব্য না করে বলেন, ‘‘আন্দোলন কেন হবে না? কিন্তু সেই আন্দোলন যেন সংস্কৃতি এবং রুচি বিরোধী না হয়। ক্লাস বন্ধ করে, প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করলে তা বড় ক্ষতির সামিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur university surveillance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE