Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

টালি নালার ধারে ‘অবৈধ’ ক্লাব, বিতর্ক

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসক দলের এক কাউন্সিলরের মদতেই সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে ক্লাবটি। আরও অভিযোগ, ক্লাবের বিদ্যুৎ সংযোগ টানা হয়েছে পুরসভার পানীয় জলের একটি পাম্পিং ইউনিট থেকে।

নজরে: টালি নালার ধারে এই ক্লাব ঘিরেই বিতর্ক। (পাশে) রেজিস্টারে ক্ষোভপ্রকাশ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

নজরে: টালি নালার ধারে এই ক্লাব ঘিরেই বিতর্ক। (পাশে) রেজিস্টারে ক্ষোভপ্রকাশ (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

আদিগঙ্গার সংস্কারের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা ছিল, ওই খালের যাত্রাপথে কোনও বাধা থাকবে না। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই টলিনালার (যা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আদিগঙ্গা) ধারে তৈরি করা হয়েছে একটি ক্লাব। নাম নাকতলা তরুণ সঙ্ঘ। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসক দলের এক কাউন্সিলরের মদতেই সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে ক্লাবটি। আরও অভিযোগ, ক্লাবের বিদ্যুৎ সংযোগ টানা হয়েছে পুরসভার পানীয় জলের একটি পাম্পিং ইউনিট থেকে।

পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ায় ওই ইউনিটে যে কোনও সময়ে‌ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এই কথা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে। তবু কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে ওই ইউনিটে থাকা পাম্প রেজিস্টারে ১৫ অক্টোবরে লেখা হয়েছে, ‘ফেজ-এ আগুন দেখা গিয়েছে। সিইএসসি-কে জানিয়ে ঠিক করতে হবে। না হলে বিপদ ঘটতে পারে। পাম্পের ফেজ থেকে ক্লাবের ফেজ নেওয়া ঠিক হয়নি’।

গোটা বিষয়টি জেনে হতবাক পুরকর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ উপেক্ষা এবং সরকারি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ চুরি করেও কী ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে ওই ক্লাব, তা ঘিরেই জল্পনা শুরু হয়েছে পুর মহলে। অভিযোগ, এই কাজে শাসক দলেরই এক কাউন্সিলরের মদত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। অভিযোগ, স্থানীয় ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতা দাম এবং তাঁর স্বামী ভাস্কর দামের মদত রয়েছে ওই ক্লাব গড়ার পিছনে। সুস্মিতাদেবীকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। মেলেনি মেসেজের উত্তরও। পরে তাঁর স্বামী জানান, কাউন্সিলর শহরের বাইরে রয়েছেন। তাঁর স্বামী ভাস্কর দাম জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘এই এলাকায় শ’দেড়েক ক্লাব রয়েছে। সেই হিসেবে একমাত্র শক্তি সঙ্ঘ ছাড়া সব ক’টিই বেআইনি।’’

খিদিরপুরে দইঘাট থেকে গড়িয়া ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার প্রসারিত টালি নালা কলকাতা পুর এলাকার অন্তর্গত। কলকাতা পুরসভার ২০টি এবং রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৩টি, মোট ২৩টি ওয়ার্ড দিয়ে যায় আদিগঙ্গা। এই পথের ধারেই কালীঘাট মন্দির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকেন আদিগঙ্গার ধারেই। রাজ্যের ক্ষমতায় এসেই তিনি আদিগঙ্গা সংস্কারের উপরে জোর দেন। মূলত তাঁরই নির্দেশে পুর প্রশাসন টালিনালা সংস্কারে উদ্যোগী হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, আদিগঙ্গার সংস্কারে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস মেলে। প্রকল্প বাস্তাবায়িত করার জন্য প্রায় ৪৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তাও আছে। টলিনালা প্রকল্প দেখার জন্য পুরসভাতেও একটি দফতর খোলা হয়েছে। ওই দফতর সূত্রের খবর, প্রকল্প রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। এর পরেই কাজ শুরু হবে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে টলিনালায় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নোংরা জল পড়ে। তাতে আদিগঙ্গা দূষিত হচ্ছে। কোন কোন জায়গা থেকে তা পড়ছে, তা চিহ্নিত করতে গিয়েই নজরে পড়ে টালি নালার গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা ক্লাবটি। ওই অফিসার জানান, টলিনালার পাড়ে ব্যক্তিগত জমিজমা ছেড়ে পাঁচিল তুলে দেওয়া আছে। কিন্তু ওই ক্লাব সরকারের দেওয়া পাঁচিল ছাড়িয়ে খালের গায়ে তৈরি হয়েছে। যে জায়গায় তা করা হয়েছে, সেটি পুরসভার পানীয় জল সরবরাহের একটি পাম্পিং ইউনিট। পুরসভার পাম্প যেখানে বসানো ছিল, সেখানে ক্লাবের বারান্দা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পাম্প এখন স্থান পেয়েছে ক্লাবের ভিতরে। যা একেবারেই বেআইনি বলে জানাচ্ছে পুর প্রশাসন। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরকর্তাদের কানে বিষয়টি আসতেই তা ভাঙার তোড়জোড় শুরু হয়। সেই কাজে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনও মেলে। কিন্তু পরে ‘প্রভাব’ খাটিয়ে তা রুখে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার সরকারি জমিতে ক্লাব গড়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মেয়র বলেন, ‘‘ভাঙতে বলা হয়েছিল। এখন কী অবস্থায় আছে, তার খোঁজ নেব।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে নাকতলায় একটি ব্যক্তিগত জমি দখল করে ক্লাব গড়াকে কেন্দ্র করেও ওই কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তখন মেয়র শোভনবাবু বলেছিলেন, ‘‘ভাস্কর দাম কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের স্বামী। তিনি ওই জায়গায় গড়ে ওঠা ক্লাবের কেউ হতে পারেন, কিন্তু পুরসভার কেউ নন। তিনি যা বলেছেন, সবটাই নিজের দায়িত্বে।’’ ভাস্করবাবু অবশ্য এ দিনও বলছেন, ‘‘নিজের জমিতে কেউ ক্লাব করে না। সরকারি জমিতেই করে। ক্লাব আছে বলে সমাজ সুস্থ আছে। না হলে অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tolly Nala Club Controversy Naktala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE