প্রতীকী ছবি
করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হতে পারে মোবাইল ফোন। তাই করোনা হাসপাতালে কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। লিখিত ভাবে এমনই নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ভবনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কোভিড হাসপাতালের সুপারদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা পোস্ট করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতাল এম আর বাঙুরের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভিতরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্প্রতি এক যুবক ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের ভিডিয়ো ঘিরে কম বিতর্ক হয়নি। ঘটনাচক্রে, এর পরেই মঙ্গলবার রাতে ওই বার্তা স্বাস্থ্য ভবনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করা হয়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মোবাইল ফোন থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করে কোভিড হাসপাতালের ভিতরে মোবাইল ফোনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগী— সকলের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, হোয়াটসঅ্যাপ নির্দেশিকায় মোবাইল ফোন জমা রাখতেও বলা হয়েছে। হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওয়ার্ডে থাকা ইন্টারকম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। রোগীদের কাছে কন্ট্রোল রুম এবং প্রয়োজনে হাসপাতালের সুপারের নম্বর দিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এসটিডি-র সুবিধাযুক্ত ল্যান্ডলাইনের ব্যবহারে আপত্তি নেই স্বাস্থ্য ভবনের।
আরও পড়ুন: পাড়ায় পাড়ায় ও বস্তিতে সমীক্ষার নির্দেশ মেয়রের
স্বাস্থ্য ভবনের ওই নির্দেশিকার সঙ্গে রোগীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য মিলছে না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রোগীরা যাতে প্রয়োজনে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা হল, রোগী কেমন আছেন, তা অনেক ক্ষেত্রে জানতেই পারছেন না পরিজনেরা। এম আর বাঙুরে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিজনদেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে অভিযোগ। করোনা-আক্রান্ত এক রোগিণীর আত্মীয়ের অভিযোগ, ওই মহিলা কেমন আছেন, সে বিষয়ে চিকিৎসকেরা কিছুই জানাচ্ছেন না। রোগী সহায়তা কেন্দ্রের দু’টি নম্বর দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণ চেষ্টা করেও সেই ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর সংখ্যা যে হেতু প্রচুর, তাই দু’টি ফোন অনেক সময়েই ব্যস্ত থাকছে। রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকেরা যাতে দেখা করেন, সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এক আধিকারিক।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘সংক্রমণের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে জারি করা নির্দেশিকার বিরোধিতা করার কিছু নেই। কিন্তু বাঙুরের অব্যবস্থার ছবি বাইরে বেরোনোর পরে এই নির্দেশিকা কেন জারি হল, সেটাও ভাবতে হবে। তা ছাড়া, সাধারণত ওয়ার্ডে রোগীদের মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম নেই। কিন্তু করোনা-রোগী আইসোলেশনে থাকার সময়ে মোবাইলই ছিল বহির্জগতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যম। কথা বলার লোক না-থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি। নইলে রোগীর মনের উপরে প্রভাব পড়তে পারে।’’
এ বিষয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘সংক্রমণের সব চেয়ে বেশি আশঙ্কা মোবাইল ফোন থেকে। সর্বত্রই এই তত্ত্ব মেনে চলা হচ্ছে। মোবাইল ফোন যতটা সংক্রমিত, জুতোও ততটা নয়। সেই কারণেই ল্যান্ডলাইন ফোনের ব্যবস্থা করে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রোগী, চিকিৎসক, নার্স বা চিকিৎসাকর্মী— সকলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।’’
আরও পড়ুন: নিস্তব্ধ গয়নাপাড়া, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে কারিগরেরা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy