Advertisement
০১ মে ২০২৪
State news

কলকাতায় করোনা: দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ঘুরে বেড়ালেন দ্বিতীয় আক্রান্তও

শুক্রবার তাঁর শরীরেই মিলল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব। এই মুহূর্তে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি ২২ বছরের এই যুবক।

কলকাতার দ্বিতীয় আক্রান্তের অবহেলার জন্য আরও আতঙ্ক ছড়াল কলকাতা জুড়ে। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতার দ্বিতীয় আক্রান্তের অবহেলার জন্য আরও আতঙ্ক ছড়াল কলকাতা জুড়ে। ছবি: সংগৃহীত।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ১১:৫০
Share: Save:

বিমানবন্দরে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন বাড়িতে পর্যবেক্ষণে থাকেন। পরবর্তী ১৪ দিন বাড়ি থেকে না বেরতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অথচ নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই কলকাতায় আসা ইস্তক বেপরোয়া ভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন লেক রোডের ওই লন্ডন ফেরত তরুণ। তাঁর শরীরেই শুক্রবার মিলল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব। এই মুহূর্তে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি ২২ বছরের ওই তরুণ।

স্থানীয় সূত্রে জানা দিয়েছে, লেক রোডে শহরের অন্যতম অভিজাত একটি আবাসনের বাসিন্দা তিনি। তাঁর বাবার বাথরুম ফিটিংসের ব্যবসা। একাধিক দোকানের মধ্যে দু’টি রয়েছে কালীঘাট এলাকার এসপি মুখার্জি রোড এবং ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। যে আবাসনে তিনি থাকেন, সেই আবাসনেই ফ্ল্যাট রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার দাপুটে এক তৃণমূল নেতা তথা মেয়র পারিষদেরও।

কালীঘাট এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিনে ওই তরুণকে বেশ কয়েক বার দেখা গিয়েছে এসপি মুখার্জি রোডের ওই দোকানে। অন্য দিকে, আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আবাসনের সর্বত্রই তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাইরের শপিং মল, রেস্তরাঁতেও গিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ তারিখ ফেরার পর থেকে বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন এই তরুণ।

আরও পড়ুন: কলকাতায় দ্বিতীয় করোনা আক্রান্তের হদিশ, লন্ডনফেরত তরুণের শরীরে কোভিড-১৯

ওই মেয়র পারিষদ বলেন, “আমার এই আবাসনে বাসিন্দা রয়েছেন কম করে আড়াইশো জন। তা ছাড়াও গাড়িচালক, পরিচারক-পরিচারিকা মিলিয়ে সংখ্যাটা আরও বেশি। তাঁদের সবাইকেই আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ওই তরুণের বেপরোয়া আচরণ।”

কালীঘাট একালার এক বাসিন্দা বলেন, “কয়েক দিন আগেই দেখি, ওই তরুণ দোকানে বসে রয়েছেন। তার পর জানতে পারি, সম্প্রতি ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছেন তিনি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, কেন তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন? কিন্তু আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি তিনি বা তাঁর বাবা।”

আরও পড়ুন: করোনায় চতুর্থ মৃত্যু দেশে, প্রায় তালাবন্ধ পঞ্জাব

সূত্রের খবর, গত ২-৩ দিন ধরেই সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা দিয়েছিল ওই তরুণের শরীরে। কিন্তু তার পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাননি তিনি। গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা কালীঘাট থানার পুলিশের নজরে বিষয়টি আনলে, পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরকে। এর পর স্বাস্থ্য দফতর যোগাযোগ করে পরিবারের সঙ্গে। তার পরই উপসর্গ দেখে তাঁকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কালীঘাটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের ওই দুটো দোকানেই রয়েছেন ৫-৬ জন করে কর্মী। তা ছাড়াও তাঁর উপস্থিতিতেই বিভিন্ন ক্রেতারাও এসেছেন। অর্থাৎ এঁরা সবাই ওই তরুণের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন। ঠিক তেমনই তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন ওই আবাসনেরও বহু বাসিন্দা।

ওই মেয়র পারিষদের কথায়, “কয়েকশো মানুষের জীবন বিপন্ন করলেন ওই তরুণ। যদিও তার পরও কোনও হেলদোল নেই যুবকের বাবার।” তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “কে বলেছে আমার ছেলে বাইরে বেরিয়েছে? প্রমাণ দিতে পারবেন? আপনারাই বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।”

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওই যুবক কলকাতায় আসার আগে কোথায় কোথায় ঘুরেছেন এবং আসার পর কোথায় কোথায় গিয়েছেন, আমরা এখনও তার স্পষ্ট তথ্য পাইনি। এই ক’দিনে কার কার সংস্পর্শে তাঁরা এসেছেন, তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বয়সের কারণে তাঁর ঠাকুরদা এবং ঠাকুরমাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।” ওই মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, “পরিবারের বাকি সদস্যদেরও বাড়িতে রাখা ঠিক হয়নি. আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID 19 Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE